বেলুড় মঠে যীশু পুজোর কাহিনি জানেন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ক্যারলের সুরে যীশুর জন্মদিন পালন করে বেলুড় মঠ। ২৪শে ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে যীশু বন্দনা ও বাইবেল পাঠের আয়োজন করা হয়৷ যীশু ও মেরির ছবির সামনে রাখা হয় কেক, ফল, কফি৷
সন্ধ্যা আরতির পর শুরু হয় যীশুর আরাধনা। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের মন্দিরে যীশুর ছবি বসানো হয়। মোমবাতি, ফুল দিয়ে ছবি সাজানো হয়। ছবির সামনে দেওয়া হয় কেক, লজেন্স, ফল, পেস্ট্রি ও মিষ্টি। ক্যারলের মাধ্যমে পুজোর সূচনা হয়। ইংরেজি ও বাংলায় বাইবেল পাঠ করা হয়। উপস্থিত থাকেন বেলুড় মঠের সন্ন্যাসীরা। পরে যীশুর জন্মকাহিনী পাঠ করা হয়।
রামকৃষ্ণ মিশনে যীশুর জন্মদিন পালন নিয়ে নানান গল্প কথিত রয়েছে৷ মঠ সূত্রে জানা গেছে, শ্রীরামকৃষ্ণ সব রকম সাধনাই করেছিলেন দক্ষিণেশ্বরে। হিন্দুদের শৈব সাধনা, শক্তি-সাধনা, বৈষ্ণব সাধনা, বেদান্ত সাধনার পর তাঁর ইচ্ছা হয়েছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ কেমন করে ভগবানকে ডাকে, তা জানার। পরবর্তীতে তিনি নামাজ পাঠও করেন।
এরপরই খ্রিস্টানরা কেমন করে সাধনা করেন তাও জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন ঠাকুর। এরপর এক ভক্তকে তিনি বলেন, খ্রিস্টান ধর্ম সম্পর্কে আমাকে কিছু পড়ে শোনাও। পরবর্তীতে সেই ভক্ত শ্রীরামকৃষ্ণ দেবকে বাইবেল বাংলায় পাঠ করে শোনান।
আরও জানা গেছে, দক্ষিণেশ্বরের যদু মল্লিকের বাগানবাড়িতে জমিদারদের বৈঠকখানায় ঠাকুরের যাতায়াত ছিল। সেখানে গিয়ে ঠাকুর একদিন দেওয়ালে মেরির কোলে ছোট্ট যীশুর ছবি টাঙানো অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তিনি ওই ছবির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন। ওই ছবি একসময় জ্যোতির্ময়, জীবন্ত হয়ে ওঠে। এরপর ঠাকুর ভাবস্থ হয়ে পড়েন। যা তিন দিন ছিল।
চতুর্থ দিনে তিনি দক্ষিণেশ্বরের একা হেঁটে যাওয়ার সময় এক ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেন। এরপর তাঁর সঙ্গে আলিঙ্গন করতেই, ওই ব্যক্তি বিলীন হয়ে যান। তখনই শ্রীরামকৃষ্ণদেব বোঝেন, ইনি যীশু, ইনি ভগবান। তারপর ঠাকুরের মনে যীশুর ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যায়।
মঠের মহারাজরা জানিয়েছেন, ঠাকুরের প্রয়াণের চারমাস পর হুগলির শ্রীরামপুরের এক গ্রামে স্বামিজি ও রামকৃষ্ণের অন্য শিষ্যরা সন্ন্যাস গ্রহণ করে গুরুকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছিলেন৷ পরে অন্তপুর গ্রামে একটি আশ্রম গড়ে তোলা হয়৷ তখন থেকেই মিশনে বড়দিন পালনের রেওয়াজ রয়েছে৷ বিশ্বের ২৭টি দেশের ২৩৭টি রামকৃষ্ণ মিশনে সন্ন্যাসী ও সাধুরা মিলে বড়দিন পালন করেন৷