উৎসব মানেই খাওয়া-দাওয়া, বড়দিনের খানা-পিনার সন্ধানে দৃষ্টিভঙ্গি
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: উৎসব মানেই খাওয়া-দাওয়া, বড়দিনেও তার ব্যতিক্রম হয় না। শীতের খাওয়া-দাওয়ার বহর একটু বেশিই হয়। শীত সঙ্গে বড়দিন, খাওয়া-দাওয়ার জন্য একেবারে রাজযোটক সময়। বড়দিনের সঙ্গে ওতোপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে খাবার। বড়দিনের খাবার মানে কিন্তু কেবল কেক নয়।
বড়দিনের খানা-পিনার সুলুক সন্ধান করল দৃষ্টিভঙ্গি।
ভারতের গভর্নর জেনারেলদের মধ্যে লর্ড কর্নওয়ালিশের জীবনযাত্রা ছিল সবচেয়ে আড়ম্বরহীন। তাঁর সাদামাটা জীবনযাত্রার জন্য তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন, কিন্তু ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে তিনিও রাজসিক নৈশ ভোজের আয়োজন করতেন। ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লিড কিউরেটর মিস মার্গারেট ম্যাকেপিস-এর রিপোর্টে বর্ণনা পাওয়া গিয়েছে যে, ভদ্রলোকরা রেড ওয়াইন পান করে গড়াগড়ি যেতেন। সেই রিপোর্টে আরও অনেক এমন রাজকীয় ভোজসভার বিবরণ পাওয়া যায়। এছাড়াও আরও এক সেরা নৈশ ভোজের কথা জানা যায়, যা ইতিপূর্বের সব রকম নৈশভোজের আয়োজনকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। সেটি ছিল ১৯৩৮ সালের বাংলার গভর্নর লর্ড ব্রেবোর্ন আয়োজিত ক্রিসমাস ‘বল’ পার্টি। রাজা-মহারাজা ও ১৪০ জন মান্যগণ্য অতিথির নামে কার্ড পাঠানো হয়েছিল, রাতভর চলেছিল খানা-পিনা এবং তখনকার দিনে ৫,২৯৬ টাকা খরচ হয়েছিল! এলাহি আয়োজন যাকে বলে। তবে আজ আর এমন ভোজসভা হয়না।
বড়দিনের পানীয়:
বড়দিনের পানীয়ের কথা বলতে গেলে হোম মেড ওয়াইনের কথা বলতে হয়। যার আঁতুরঘর হল বো ব্যারাকস। জিঞ্জার ওয়াইন, এছাড়াও গ্রেপস ওয়াইন, রেসিন ওয়াইন, পটেটো ওয়াইন বিভিন্ন রকম বেরি থেকে তৈরি ওয়াইন। সারা বছর কেনা ওয়াইন পাওয়া গেলেও বাড়িতে বানানো ওয়াইনের জনপ্রিয়তা এই সময়ে কিন্তু গগনচূম্বী। এই পাড়ার বাসিন্দারাই এই মদ বাড়িতে তৈরি করেন এবং ক্রিসমাস ইভ ও তার কয়েকদিন আগে থেকেই পসরা সাজিয়ে বসে বিক্রি করতে শুরু করেন। সেই সঙ্গে কেক প্রেস্ট্রি তো আছেই, সেগুলিও হোম মেড। সারা শহর এবং রাজ্য থেকে মানুষ আসেন এই সব জিনিস কিনতে। রাস্তার দু-ধারে বাড়ির সামনে বা বারান্দায় টেবিল নিয়ে বসে চলে বিকিকিনির আসর। ককটেলের মধ্যে স্নোস্টর্ম মার্গারিটা, জ্যাক ফ্রস্ট, হলি জলি রয়েছে।
বড়দিনের খাবার:
বড়দিনের খাবারে জায়গা করে নেয় ডাক ভিন্দালু, পিজ পোলাও, ইয়েলো রাইস, কোপ্তা মালাইকারি, চিকেন বা টার্কি রোস্ট, সল্ট মিট, রোজ-কুকিজ ও কুলকুলসের মতো আরও নানা পছন্দের পদ। টার্কির মাংস হল অন্যতম সেরা খাবার। শীতের মরশুমে অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের টার্কির মাংস খাওয়ার রীতির চল। টার্কি, ডাক, পোর্ক, ফিস আর চিকেন রোস্ট চেখে দেখতে পারেন। আজ আমিষের মধ্যে খেতে পারেন চিকেন রাগাউট, হার্ব রোস্ট চিকেন, স্টাফড ফিলে অব বেকটি, গ্রিল্ড বেকটি ইন বাটার গার্লিক সস, স্টাফড আপেল পোর্ক, বার বি কিউ পোর্ক রিবস, রোস্ট টার্কি ইন রেড ওয়াইন সস, রোস্ট টার্কি ইন ক্র্যানবেরি সস, রোস্ট ডাক ইন অরেঞ্জ সস এবং রোস্ট পেকিং ডাক ইন হইসিন সস, ল্যাম্ব চপস, মাশরুম আস্পারাগাস রিসোট্টো, ব্রিটিশ রেলওয়ে চিকেন, প্রন নিউবার্গ, ল্যাম্ব ট্রটার্স সুপ, চিকেন মিনি ব্রেস্ট কাটলেট, চিকেন স্ট্রগানফ, সাওয়ার ক্রিম সস দিয়ে গ্রিল্ড প্রন।
নিরামিষে রয়েছে স্ম্যাশড পটাটো, বেকড ব্রি পনির, পনির ফন্ডু, কর্ন স্পিন্যাচকাসেরোল, ভুনা ভেজিটেবল লাসাগনা, ভেজিটেবল কার্পে আলা পোর্তুগিজ, অ্যাপল পাই এবং কটেজ চিজ পাই। ডেজার্টের মধ্যে ট্রাই করতে পারেন, প্লাম কেক, ক্যারামেল কাস্টার্ড এবং ব্রাউনি।
বড়দিনে কী কী ট্রাই করতে পারেন:
মাইনস্ট্রোন স্যুপ, চিকেন আ লা কিয়েভ, পোলো আলা পারমিগিয়ানা, মঙ্গোলিয় রাইস বা নুডলস, রোস্টড হাম বাও, ক্রিসপি সফট শেল ক্র্যাব, ক্রাম্ব ফ্রাইড স্টাফড চিকেন অ্যান্ড গোট পনির, হংকং স্টাইলের ক্লে পট রাইস, রয়্যাল চায়না ইমপেরিয়াল ভেজিটেরিয়ান হর্স সস, স্টেড ফ্রায়েড অ্যাস্পারাগাস অ্যান্ড গার্লিক সস, বেকড ফ্লাইমিং প্রন, সসেজ চিকেন, ক্লাসিক রোস্ট কুমড়ো স্যুপ, চিলি ওয়াটার চেস্টনাট, পেরি পেরি সুইট পটাটো ফ্রাই, অরেঞ্জ ভাইনাইগ্রেটে, বিটরুট অ্যান্ড গোট পনির আরাচিনি, ক্রিম চিজ অ্যান্ড অ্যাস্পারাগাস সুশী, বেকন হানি গ্লেজড চিংড়ি, গার্লিক চিকেন সুপ্রিম, চিকেন রোল্যাড, ক্লাসিক রোস্ট মুরগি।
বড়দিনের ফাইভ স্টার:
এনগা আতোইবা থংবা, মণিপুরে এর চল সর্বাধিক। মাছ, আলু এবং নাশপাতি সহযোগে রান্না করা হয়। গরম ভাতের সঙ্গে এটি খাওয়ার রেওয়াজ।
কিডিওস, পোকার মতো দেখতে খাবারটি ঐতিহ্যবাহী গোয়ানিজ ফুড। ডিপলি ফ্রাইড খাবারটি স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়া হয়।
ডাক মোইলি, খাবারটি হাঁসের মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়। রেসিপিটি ম্যাঙ্গালোরের, যা ভাত, রুটি সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
করিমিন মলি, কেরালার বিখ্যাত খাবার এটি। আদপে এটি এক ধরণের মাছের স্টু যা নারকেলের দুধ দিয়ে বানানো হয়।
রোজ কুকি, বাড়িতে বানানো বিস্কুট। কেরালা, গোয়া এবং তামিলনাড়ুর এটি খুব বিখ্যাত। এটি আচু মুরুক্কু নামেও পরিচিত। দেখতে অনেকটা ফুলের মতো বলেই নাম হয়েছে রোজ কুকি।