জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে একাকার হয়েছে খ্রিস্ট ও ব্রাহ্ম ধর্ম, কীভাবে?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও প্রভু যীশু মিলিত হয়েছে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। উনিশ শতকে মানুষকে ক্রমশ নিয়মের জালে বেঁধে ফেলেছিল হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামি। রক্ষণশীলদের ফাঁস ক্রমে চেপে বসছিল। তখন শিক্ষিত হিন্দু সমাজ দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। এক দল ব্রাহ্ম ধর্মের দিকে পা বাড়ায়, আরেক দল খ্রিস্ট ধর্মের দিকে আকৃষ্ট হতে আরম্ভ করে। খ্রিস্ট ও ব্রাহ্ম, দু’ধর্মই কোথাও একটা গিয়ে এক। ব্রাহ্মদের উপনিষদীয় অদ্বৈতবাদ খ্রিস্টধর্মের একেশ্বরবাদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বীদের ব্রহ্মসঙ্গীত ও অন্যান্য উপাসনা পদ্ধতিতেও খ্রিস্ট ধর্মের সরাসরি প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি সে’সময়ের কলকাতায় হয়ে উঠেছিল খ্রিস্ট ও ব্রাহ্ম ধর্মের মিলন ক্ষেত্র।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি ছিল সে সময়ের কলকাতায় ব্রাহ্ম। কবিগুরু রবি ঠাকুরের কাছে যীশু ছিলেন মানবপুত্র, কল্যাণের দূত। বড়দিন প্রবন্ধে কবি বলেছেন, ‘আজ (বড়দিন) পরিতাপ করার দিন, আনন্দ করবার নয়। বড়দিন নিজেকে পরীক্ষা করবার দিন, নিজেকে নম্র করবার দিন।’ কবির জীবনে খ্রিস্টান ধর্মযাজক অধ্যাপক ফাদার ডি পেনেরান্ডার প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে রবি ঠাকুর শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবের সঙ্গে যীশুর জন্মোৎসব পালনকে অঙ্গীভূত করেন। তিন দিনের পৌষ উৎসবের সমাপ্তি দিবস হয় খ্রিস্ট-উৎসব বড়দিনের মাধ্যমে। এই উপাসনায় মহামানব যীশুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকলেই সমবেত হতেন। মোমের আলোয় ক্রিসমাস ক্যারল গাওয়া হত। কবির লেখা একদিন যারা মেরেছিল তারে গিয়ে, রাজার দোহাই দিয়ে, উচ্চারিত হয় উপনিষদের মন্ত্র, কবির লেখা এবং বাইবেলের অংশবিশেষ থেকে পাঠ করা হত। আজও সে ধারা অক্ষত। একইভাবে চলে আসছে যীশু উপাসনা।