বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও আলবার্ট আইনস্টাইন, কেমন ছিল দুই বিজ্ঞানীর পত্রালাপ?

January 1, 2024 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সত্যেন বোস তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯২৪-এর জুন মাসের পাঁচ তারিখ সত্যেন্দ্রনাথ বসু আলবার্ট আইনস্টাইনকে এক চিঠিতে লেখেন, ‘আপনার কাছে সাহস করে সঙ্গের প্রবন্ধটি পাঠাচ্ছি আপনার বিবেচনার জন্য। আপনি প্রবন্ধ সম্বন্ধে কী মনে করেন তা জানতে আমি গভীর ভাবে উৎসুক।’

উত্তরে আইনস্টাইন তাঁর হাতে লেখা এক চিঠিতে জানান, ‘প্রিয় সহকর্মী, আমি আপনার প্রবন্ধটি ভাষান্তর করেছি এবং ‘ৎসাইটস্রিফট ফ্যুর ফিজিক’-এ প্রকাশের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি। আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং আমাকে তা অত্যন্ত খুশি করেছে।’
আইনস্টাইনের চিঠির তারিখ ছিল ২ জুলাই, ১৯২৪।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর উপাচার্য ফিলিপ সাহেব সত্যেন্দ্রনাথকে পদার্থ বিজ্ঞানের রিডার করে নিয়ে আসেন। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ডব্লুউ এ জেনকিনস। অধ্যাপক দেবেন্দ্রমোহন বসুর কাছ থেকে সত্যেন্দ্রনাথ বসু ম্যাক্স প্লাঙ্কের থার্মোডিনামিক্স অ্যান্ড ওয়ারমেস্ট্রবাহলা বইটির একটি কপি পেয়েছিলেন। প্লাঙ্কের মতবাদটি যেভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে তার সঙ্গে একমত হতে পারছিলেন না তিনি। ১৯২৪ সালে জার্মান পত্রিকা ৎসাইটস্রিফট ফ্যুর ফিজিক-এ তাঁর একটি প্রবন্ধ প্লাঙ্ক’স ল অ্যান্ড লাইট কোয়ান্টাম হাইপোথিসিস ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হলে তিনি রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।

অবশ্য তাঁর আগে প্রবন্ধের একটি কপি আইনস্টাইনের কাছেও পাঠানো হয়ে ছিল মতামতের জন্য। আইনস্টাইনকে লেখা তাঁর চিঠিটি ছিল-

‘আপনার মতামতের জন্য আমি সাহস করে এই প্রবন্ধটি পাঠালাম। আপনি এটা পড়ে কী মনে করেন তা জানতে আমি খুবই উৎসুক। আপনি দেখবেন এতে আমি সনাতনী তড়িৎ বলবিদ্যার সাহায্য ছাড়াই ধ্রুবকটিতে পৌঁছতে পেরেছি। অবশ্য এতে ধরে নেয়া হয়েছে যে প্রাথমিক দশাদেশ…উপাদানটি আছে। এই প্রবন্ধটি অনুবাদ করার মতো যথেষ্ট জার্মান আমি জানি না। আপনি যদি মনে করেন এটি ছাপার যোগ্য তাহলে ৎসাইটস্রিফট ফ্যুর ফিজিক পত্রিকায় এটি প্রকাশের ব্যবস্থা করলে কৃতজ্ঞ হবো। যদিও আপনি আমাকে চেনেন না তবু অসংকোচে আপনার কাছে এ অনুরোধ জানালাম কারণ লেখার মাধ্যমে আপনি আমাদের সকলের গুরুস্থানীয়। কলকাতা থেকে একজন আপনার আপেক্ষিকতাবাদে প্রবন্ধগুলো ইংরেজিতে অনুবাদের অনুমতি প্রার্থনা করে চিঠি দেয়। আপনার স্মরণ আছে কিনা জানি না। আপনি অনুমতি দিয়েছিলেন। আপনি আপনার সাধারণ আপেক্ষিকবাদ প্রবন্ধটি অনুবাদ করি।’

২.৭.১৯২৪ তারিখে সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে আইনস্টাইন চিঠিতে জানান –

‘প্রিয় সহকর্মী,

আমি আপনার প্রবন্ধটি ভাষান্তর করেছি এবং ৎসাইটস্রিফট ফ্যুর ফিজিকে প্রকাশের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি। আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং আমাকে তা অত্যন্ত খুশী করেছে। আমার কাজ সম্বন্ধে আপনার মন্তব্য আমি সঠিক বলে মনে করি না। কারণ ভীনের বিন্যাস সূত্র তরঙ্গ তত্ত্ব থেকে আসে না এবং বোরের পরিপূরণ নীতিও লঙ্ঘিত হয় না। তবে সেজন্য কিছু আসে যায় না। আপনিই প্রথম এই উৎপাদকটি কোয়ান্টাম তত্ত্ব থেকে নির্ধারণ করেছেন যদিও সমাবর্তন উৎপাদন ২ সম্বন্ধে যুক্তি ততোটা জোরালো নয়। এটি বাস্তবিকই অত্যন্ত সুন্দর একটি অবদান।’

তথ্যঋণ: ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ১৯৮৫ সালের বার্ষিক সংখ্যা। (অধ্যাপক এ এম হারুন অর রশিদের ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যেন্দ্রনাথ বসু’ শীর্ষক প্রবন্ধ)

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#scientists, #Satyendra Nath Bose, #Albert Einstein, #Correspondence

আরো দেখুন