মাথার পাশে ফোন রেখে ঘুমান, জানেন কোন কোন বিপদ ডেকে আনছেন?
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল ফোন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মোবাইল ছাড়া যেন একমুহূর্তে চলা দায়। পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে অফিস,বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবার সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা বলতে মোবাইল ফোনের জুড়ি নেই। মোবাইল এমনই একটি জিনিস যার মাধ্যমে মুহূর্তে আপনি জানতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ অনেক খবর। মোবাইল ফোনের যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমনি এর অপকারিতাও রয়েছে। অনেকেই ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোন বন্ধ করেন না। অ্যালার্ম দিয়ে ফোনকে বালিশের নিচে বা পাশে রাখার অভ্যাস রয়েছে অনেকের। অনেকেই আবার ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোনটি সঙ্গী করে ঘুমান।
একাধিক রিসার্চ রিপোর্ট অনুসারে মোবাইলের প্রতি এই অ্যাডিকশন ধীরে ধীরে আমাদের শেষ কর দিচ্ছে। এমনকী বাড়ছে ক্যান্সারের মতো রোগের প্রকোপও। বিশেষত যারা মাথার কাছে ফোন রেখে ঘুমতে যান, তাদের আয়ু তো চোখে পরার মতে কমছে। এর পিছনে মূল কারণ হল রেডিয়েশন। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইল ফোনের শরীর থেকে উৎপন্ন রেডিয়েশের কারণে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে।
নীল আলোর বিপদ
মোবাইল যতই কাজে আসুক, ঘুমের আগে মোবাইল থেকে নিঃসৃত নীলচে আলো মোটেই কাজের বস্তু নয়। আমাদের ভালো ঘুমের জন্য প্রয়োজন মেলাটোনিন। মোবাইল ফোনের বিকিরণ ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের সাথে যুক্ত। এতে এই হরমোন কম উৎপন্ন হয়। ফলে ঘুমের সার্কাডিয়ান ছন্দ নষ্ট হয়। ব্যাঘাত ঘটে। ঘুমের সঙ্গে নানা শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপেরও যোগ রয়েছে। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে সারাদিনের কাজ, শরীরে সঞ্চিত শক্তির ক্ষয় কোনওটাই নিয়ম মেনে হয় না। ধারাবাহিক অনিদ্রা বা ক্রনিক ইনসমনিয়া যেমন তাড়া করে, তেমনই পেশিতে টান, পেশিতে ব্যথা, মাথা ধরা সহ নানা সমস্যা হানা দেয়।
ক্যান্সারের কারণ?
তবে মোবাইলের রশ্মি থেকে ক্যান্সার হয় বলে একসময় প্রচার চললেও তা নিয়ে প্রামাণ্য কোনও তথ্য এখনও আমাদের হাতে নেই। তাহলে কি ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য নেই বলে মাথার কাছে মোবাইল রাখা ‘নিরাপদ নিরীহ’ হয়ে উঠল? একেবারেই কিন্তু তা নয়। রাত যত গভীর হতে থাকে, ততই ফোনের ব্যবহার আমাদের স্ট্রেস হরমোনকে বাড়ায়। ফলে মনে চাপ পড়ে। পরের দিনের কাজে মনোনিবেশ করা যায় না। শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাতেও সমস্যা তৈরি করে মাথার কাছের মোবাইল। পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পাওয়ার জন্য শরীরের অন্যান্য কাজগুলিতে বাধা আসে। এতে স্ট্রেসঘটিত অসুখ যেমন হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদি ত্বরান্বিত হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, মোবাইল বা ট্যাবের ব্যাটারি যদি উন্নতমানের না হয়, তাহলে তার রশ্মি থেকে শারীরিক ক্ষতির শঙ্কাও বাড়ে।
ঘুমানোর সময় কীভাবে রাখবেন মোবাইল-
মাথার পাশে মোবাইল রেখে ঘুমাবেন না। কমপক্ষে কয়েক ফুট দূরে রাখুন। যদি ফোনে এলার্ম সেট করতে চান এয়ারপ্লেন মুডে রাখুন। কারণ, এর রেডিয়েশন সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে আপনার শরীরে। মোবাইলে চার্জ দিলেও খাটে রেখে দেবেন না। শরীরের থেকে দূরে রাখুন ফোন। তাতে ঘুম ভালো হবে।
ফোনের অত্যাধিক ব্যবহার আপনার নেশা ধরিয়ে দিতে পারে। যে কারণে ঘুমনোর সময় অনেকটা কমে যায় আপনার। এছাড়া, ঘর অন্ধকার করে শুয়ে পড়ার পর যদি ক্রমাগত ফোনের লাইট চোখে পড়তে থাকে, তাহলেও চোখের চরম ক্ষতি হয়। সেই কারণে শুয়ে পড়ার পর ফোন ব্যবহার না করাই ভাল।
অনেকেই মোবাইল ফোনে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েন, যা মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আবার দেখা যায়, মোবাইল ফোনের সঙ্গে হেডফোন লাগিয়ে তা কানে দিয়ে ঘুমানোর আগে গান চালান অনেকেই। এটি আরও মারাত্মক ক্ষতিকর।
শোওয়ার সময় ই-বুক নয়। ই-বুক পড়তে চাইলে তার জন্য বরাদ্দ রাখুন অন্য কোনও সময়। ঘুমানোর সময় বরং হাতে থাক বই বা ম্যাগাজিন। ফোনের অত্যাধিক ব্যবহারে মাথাতেও প্রভাব পড়ে। দেখবেন, অন্ধকারে দীর্ঘক্ষণ ফোন ব্যবহার করলে অনেকের চোখ জ্বালা করে, কেউ চোখ বুজে থাকতে পারেন না। এমন সব সমস্যাও আপনার হতেই পারে। ফলে এখনই সাবধান হয়ে যান, সতর্ক থাকুন।