বিনোদন বিভাগে ফিরে যান

বীর বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের জীবনী ফুটে ওঠে যে যে সিনেমায় 

January 12, 2024 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: মাস্টারদা আসলে সূর্য সেন, বিপ্লবী, যুগান্তর দলের চট্টগ্রাম শাখার প্রধান এবং ১৯৩০ সালের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের প্রধান সংগঠক। তাঁর পুরো নাম সূর্যকুমার সেন। ডাকনাম কালু। তিনি ১৮৯৪ সালের আজকের দিনে, অর্থাৎ ২২ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় বৈদ্যব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম রাজমণি সেন এবং মায়ের নাম শশী বালা সেন।

ক্ষীণকায় মানুষ, কিন্তু হৃদয়ে সিংহ সমতুল্য! তিনি সূর্য সেন বলেই, ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সহযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে লিখে যেতে পারেন, ‘আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম মাত্র একটি জিনিস, তা হল আমার একটি সোনালি স্বপ্ন। স্বাধীনতার স্বপ্ন। তোমরা এগিয়ে চল। সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত। যদি লক্ষ্যে পৌঁছাবার আগে মৃত্যুর শীতল হাতে তোমাকেও স্পর্শ করে তবে আরোধ্য কাজের দায়িত্ব তোমার উত্তরসূরীদের হাতে অর্পণ কর।’

পরাধীনতার যুদ্ধে, পরাধীন স্বদেশ ভূমিতে স্বাধীন স্বদেশের স্বপ্ন দেখা মানুষটির নাম সূর্য সেন। বহরমপুর কলেজের অধ্যাপক সতীশ চন্দ্র চক্রবর্তীর মাধ্যমে বিপ্লববাদের সঙ্গে পরিচিত হন সূর্য সেন। নেতৃত্বের গুণেই তিনি হয়ে ওঠেন সকলের মাস্টার দা। ১৯১৯ সালের পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটায় ব্রিটিশেরা। প্রতিবাদে চট্টগ্রামে আয়োজিত সভায় বক্তৃতায় ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তৃতা করেন মাস্টার দা।  

সশস্ত্র সংগ্রামকেই নিজের একমাত্র রাজনৈতিক পথ হিসেবে নির্বাচন করেন মাস্টার দা। ১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল। সূর্যসেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা যোগ দেন সশস্ত্র বিদ্রোহে। তাঁর নেতৃত্বেই পুলিশের অস্ত্রাগার দখল হয়। তারপর অস্ত্রগুলিও সংগৃহ করা হয়। ১৯৩০ সালের ২২শে এপ্রিলে জালালাবাদ পাহাড়ে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ১৪ জন বিপ্লবী শহীদ হন। ওই বছর ২৪শে জুলাই ব্রিটিশ চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলা শুরু করে।

সূর্য সেন লড়াই থামাননি। ১৯৩২ সালের জুন মাসে মাস্টার দা, প্রীতিলতা ও কল্পনা দত্তকে ডিনামাইট দিয়ে চট্টগ্রাম কারাগার উড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ইংরেজের হাতে ১১ জন বিপ্লবী ধরা পড়েন। ২৪ই সেপ্টেম্বর তারিখে মাস্টার দা সূর্য সেনের অনুসারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে সফল আক্রমণ চালান। তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ধরা পড়ার আগেই পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ভারতবর্ষের প্রথম নারী শহীদ তিনি। মাস্টার’দা পটিয়ার কাছে গৈরালা গ্রামে আত্মগোপন করেন। ১৯৩৩ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি গোর্খা সৈন্যরা স্থানটি ঘিরে ফেলে। সূর্যসেন ধরা পড়েন। ১৯৩৩ সালে সূর্যসেন, তারকেশ্বর দস্তিদার এবং কল্পনা দত্তের বিচার শুরু হয়। ১৪ আগস্ট সূর্যসেনের ফাঁসি হয়। এরপর ১৯৩৪ সালের চট্টগ্রাম কারাগারে তাঁর ফাঁসি হয়।

সূর্য সেনকে ফাঁসি কাষ্টে ঝোলানোর আগে অমানবিক প্রহার করা হয়। তার সব দাঁত সেদিন উপড়ে নেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁর অচৈতন্য দেহকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

তার মরদেহ নিয়ে পর্যন্ত আতঙ্কে ছিল ব্রিটিশ রাজ। ১৫ মন পাথর বেঁধে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া হয় তার নিথর দেহ।
কিন্তু মাস্টার’দার পার্থিব শরীর শেষ হলেও, তাঁর চিন্তা অবিনশ্বর। শাসকের বিরুদ্ধে তাঁর অদম্য লড়াই আজও প্রাণীত করে সকলকে।

টলিউড মাস্টারদার এই লড়াইকে স্মরণ করে। ১৯৮০ সালে মাস্টারদা ও তাঁর সহযোদ্ধাদের আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে, “চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন” নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়৷ চলচ্চিত্রটির পরিচালক ছিলেন নির্মল চৌধুরী৷

বলিউডও বাংলার এই বীর সন্তানকে বেছে নিয়েছেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন নিয়ে “খেলে হাম জি জান সে” নামে একটি ছবি তৈরি হয়েছে, যার মুখ্য চরিত্রে মাস্টার দা সূর্য সেন অভিনয় করেছেন। ২০১০ সালের ৩ই ডিসেম্বর ছবিটি রুপোলি পর্দায় আসে। আশুতোষ গোয়ারিকর পরিচালিত এই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিষেক বচ্চন। কল্পনা দত্তের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন।

সূর্য সেনের জীবন ও সংগ্রামকে উপজীব্য করেই, “চিটাগং” নামে অপর একটি হিন্দি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সেই ছবিতে সূর্যসেনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মনোজ বাজপেয়ী। ছবির পরিচালক হলেন বেদব্রত পাইন।

https://www.youtube.com/watch?v=nLH8D-nGoLk

সূর্য সেনের মতো মানুষদের মৃত্যু হয় না, হয়ত পার্থিব শরীর হারিয়ে যায়! কিন্তু অক্ষত থেকে যায় অপরাজেয় সত্ত্বা। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এ প্রজন্মের মানুষদের মনে বারবার ঘুরে ফিরে আসে সূর্য সেনের কাহিনী। শাশ্বত থেকে যায় অদম্য লড়াইয়ের বীরগাঁথা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Movies, #Surya Sen

আরো দেখুন