পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

জয়দেব মেলা: অজয়ের পাড়ে মিলবে বাউল সঙ্গীত আর কীর্তনের সুর

January 15, 2024 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: অজয়ের চড়ে শুরু হয়েছে জয়দেব মেলা। মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নানের আগেই পুণ্যার্থীদের সুবিধার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে বীরভূমের জয়দেব মেলা। মেলা চলবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। অজয় নদের বুকে কীর্তনের আখড়াগুলিতে ভিড় জমতে শুরু করেছে।

পৌষ সংক্রান্তির পুণ্যস্নান উপলক্ষে কবি জয়দেবের তিরোধান দিবসকে সামনে রেখে এই মেলার সূচনা করেন নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের মহন্তরা। প্রায় ৯০০ বছর পূর্বের এক কবিকে নিয়ে ঐতিহ্যবাহী মেলা আজও সমান জনপ্রিয়। এই মেলা এখন ‘‌বাউল মেলা’‌ হিসেবে পরিচিত। এই মেলা বীরভূমের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন মেলা। বর্তমান জয়দেব মন্দিরটি কবির আবাসস্থলে বর্ধমানের মহারাজ কীর্তিচাঁদ বাহাদুর ১৮৬৩ সালে নির্মাণ করেন। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এখন তা সংরক্ষণ করছে। বৈষ্ণব কবি জয়দেবের তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে এই মিলন মেলার সূচনা।

ভোজদেব ও বামদেবীর পুত্র জয়দেব ছিলেন সংস্কৃত সাহিত্য এবং সঙ্গীত শাস্ত্রের পণ্ডিত। তিনি ছিলেন রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি। জয়দেব কাশীর এক সাধুর জনৈক দয়ানিধির থেকে দীক্ষা গ্রহণ করেন। তবে হ্যাঁ, সন্ন্যাসী হওয়া হয়নি তাঁর। পদ্মাবতীকে বিয়ে করে সংসারে বাঁধা পড়তে হয়।যদিও পদ্মাবতীকে সাধন-সঙ্গিনী হিসেবেই পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর সাধনার নাম ‘পরকীয়া সাধনা’। এ পথের অধিকার কেবল নিষ্কাম ভক্তের। জয়দেবের জীবনের মূলমন্ত্র ছিল কৃষ্ণপ্রেম। তাঁর ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্য তাঁকে অমর করে গিয়েছে।

‘গীতগোবিন্দ’ লেখা হয়েছিল দ্বাদশ শতাব্দীতে। এর রচনা বৃত্তান্ত নিয়ে রয়েছে কিংবদন্তি। লেখা প্রায় শেষের দিকে, মানভঞ্জন পালা লিখবেন কবি। কিন্তু বিপদে পড়লেন। রাধার মান কীভাবে ভাঙাবেন কৃষ্ণ? একদিন পুঁথি ছেড়ে স্নানে গিয়েছেন জয়দেব। কুটিরে তখন কেবল পদ্মাবতী। হঠাৎই দেখেন, কবি স্নান সেরে ফিরে এসেছেন। অন্যদিনের চেয়ে আগেই তাঁর স্নান সারা হয়ে গিয়েছে। মধ্যাহ্নভোজ সেরে আবার পুঁথি নিয়ে বসেন কবি। পদ্মাবতীও স্বামীর থালায় খেতে বসেছেন। এমন সময় পদ্মাবতী দেখেন, স্বামী ফের স্নান সেরে ফিরছেন। পদ্মাবতীকে আহার করতে দেখে জয়দেব অবাক। চমকে উঠেছেন পদ্মাবতীও। যাবতীয় ঘটনা কবিকে জানালেন পদ্মাবতী।

দু’জনেই ছুটলেন পুঁথির কাছে। যে পদ জয়দেব লিখতে পারছিলেন না, গিয়ে দেখলেন সে পদ লেখা হয়ে গিয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘স্মরগরলখণ্ডনং মম শিরসি মণ্ডনং দেহিপদপল্লবমুদারম’। মনে করা হয়, খোদ কৃষ্ণ এসে এ পদ লিখে গিয়েছিলেন।

সেই জয়দেবের মেলা আজও আয়োজিত হচ্ছে লালা মাটির দেশে। আজ থেকেই বাতাস বাউল সুরে মুখরিত। আখড়ায় আখড়ায় বাউল গীতি আর কীর্তন চলছে। মকরের উত্তুরে হিমেল বাতাসে মিশে যাচ্ছে সুর। দেহতত্ত্ব আর কৃষ্ণপ্রেমের মহামিলন হচ্ছে রবি ঠাকুরের দেশে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kendua, #Joydeb Kendua mela, #baul

আরো দেখুন