বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

কীভাবে শুরু হলো বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ায় শতাব্দী প্রাচীন মুড়ি মেলা?

January 20, 2024 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: বাঙালির সকাল-সন্ধ্যার নিত্যসঙ্গী মুড়ি। বাঙালির ঘরে আর যাই থাকুক না কেন মুড়ি কিন্তু থাকবেই। জানা যায়, বৈদিক যুগে দেবতাদের জন্য যজ্ঞের নৈবেদ্য হিসেবে রাখা হতো চালভাজা। এই চালভাজাই আসলে মুড়ি। আর এই মুড়িকে কেন্দ্র করে বাংলার এক প্রান্তে বসে বিরাট মেলা।

মাঘ মাসের ৪ তারিখে শীতের রোদে খোলা আকাশের নীচে দ্বারকেশ্বর নদীর চর হয়ে ওঠে ‘মুড়িময়’। প্রতি বছর বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়া গ্রামের এই চর সংলগ্ন এলাকা সেজে ওঠে মুড়ি মেলায়। এই মেলাটি সঞ্জীবনী ঘাটে হয় বলে স্থানীয়রা এই মেলাকে সঞ্জীবনী মেলাও বলে থাকেন।

এই মেলার পাশ্ববর্তী প্রায় ষাটটি গ্রামের ৪০-৫০ হাজার মানুষ এ দিন সমবেত হন কেঞ্জাকুড়ায়। নদের চরে পরিবার পরিজন নিয়ে জমে ওঠে মুড়ি খাওয়ার আসর। প্রত্যেকে বাড়ি থেকে বয়ে আনা মুড়ি। বালির চরে গামছা পেতে পঞ্চব্যঞ্জন সহযোগে মাখা হয় মুড়ি। মেনুতে থাকে আলুর চপ, বেগুনি, শিঙাড়া, চানাচুর, পেঁয়াজ, লঙ্কা, টমেটো এবং কড়াইশুঁটি। বাদ পড়ে না কিছুই । অনকের ঝুলিতে থাকে নারকেল নাড়ু, পিঠে। নদের বালি সরিয়ে বের করা হয় জল। সেই জলেই মুড়ি মেখে দিব্যি চলে পেটপুজো।

বাঁকুড়া-১ নম্বর ব্লকে কেঞ্জাকুড়া গ্রাম। শোনা যায়, এই কেঞ্জাকুড়া মুড়ি মেলা চলে আসছে প্রায় ২০০ বছর ধরে। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এলাকার ভান্ডারবেড় গ্রামের জমিদার পরিবারের সন্ন্যাসী রায়কিশোর চট্টোপাধায়। জমিদার পরিবারে জন্ম হলেও তিনি যুবক বয়সে সন্ন্যাস নিয়ে তীর্থক্ষেত্রে চলে যান। পরে জমিজমা নিয়ে অন্য ভাইদের মধ্যে বিরোধ শুরু হলে তাঁকে কয়েক দিনের জন্য ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। তিনি শর্ত দিয়েছিলেন, ফিরে আসবেন কিন্তু কারও বাড়িতে তিনি থাকবেন না। তাঁর জন্য দ্বারকেশ্বর নদের তীরে বাড়ি বানিয়ে দিতে হবে। সেই বাড়িই এখন সঞ্জীবনী মন্দির বা সঞ্জীবনী মাতার আশ্রম। প্রতি বছর মাঘ মাসের ১ তারিখ মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে শুরু হয় নাম সংকীর্তন ও উৎসব, আর তা চলে ৪ তারিখ পর্যন্ত। আর শেষের দিনে অর্থাৎ ৪ তারিখ হয় এই মুড়ি মেলা। স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ৩০ বছরে বেড়েছে এই প্রাচীন মেলার আড়ম্বর ।

আবার অনেকের মতে, সঞ্জীবনী মাতার আশ্রমের আশপাশের এলাকা এক সময় ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। বহু দূর থেকে আসা ভক্তরা হরিনাম সংকীর্তন শুনে সন্ধ্যার পরে আর বাড়ি ফিরতে পারতেন না। রাতের খাবের তাঁদের ভরসা সঙ্গে করে বেঁধে আনা মুড়ি বাতাসা। সেই রেওয়াজই ধীরে ধীরে মেলার চেহারা নিয়েছে।

প্রায় কয়েক হাজার মানুষের আবেগ আর উন্মাদনার স্থল হল বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ার মুড়ি মেলা। এই মেলা জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বহু দূর দূরান্তের মানুষেরা হাজির হন। তাই বর্তমানে এই মেলা মিলনমেলার রূপ নিয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Bankura Muri Mela, #Bankura, #Kenjakura, #Muri Mela

আরো দেখুন