কর বাবদ রাজ্যের ভাগ কমাতে চেয়েছিলেন মোদী! চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন নীতি আয়োগের প্রাক্তন সিইও
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: কেন্দ্রীয় কর বাবদ হকের প্রাপ্য কমিয়ে রাজ্যকে বাড়তি ঋণের পথে ঠেলে দিচ্ছে মোদী সরকার। বিধানসভায় এমন দাবি করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। আর তাই রাজ্যের ‘আর্থিক দুর্গতি’ সামাল দিতে ‘অতিরিক্ত ঋণ’ নিতে হচ্ছে। এরকম অভিযোগ শুধু বাংলার নয়, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যগুলির প্রাপ্য ছাঁটাইয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
রাজ্যগুলিকে দুর্বল করার অভিযোগ বিরোধীদের দীর্ঘদিনের। অবিজেপি দলশাসিত রাজ্যগুলি জোট বেঁধে একাধিকবার স্বর চড়িয়েছে মোদী সরকারের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বিরোধী মনোভাব ও আচরণের বিরুদ্ধে। রাজ্যগুলিকে আর্থিকভাবে দুর্বল করে কেন্দ্রকেই দেশীয় প্রশাসনের পরোক্ষ ভরকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে এম কে স্ট্যালিন—দফায় দফায় নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ দিয়ে এই অভিযোগ তুলে তোপ দেগেছেন।
নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় ইনিংসের শেষে এমনই এক অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। কারণ, এটা কোনও রাজনৈতিক দলের নালিশ নয়, সরকারের অন্দরের এক প্রাক্তন কর্তাই এই তথ্য ফাঁস করেছেন।
রাজ্যগুলি যাতে নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেই ভাবনাকেই তালাবন্দি করে ফেলতে চেয়েছিলেন ‘আচ্ছে দিনে’র প্রণয়নকারী রাষ্ট্রনেতা। করের ক্ষেত্রে রাজ্যের ভাগ কমাও, এটাই কি ছিল তাঁর পরোক্ষ ‘নির্দেশ’? আসলে স্ট্র্যাটেজি স্পষ্ট। রাজ্য সরকার আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়া মানেই আরও বেশি কেন্দ্র-নির্ভরতা বাড়বে। এবং অর্থাভাবে রাজ্যগুলি নিজেদের মতো করে বেশি উন্নয়ন প্রকল্প কার্যকর করতে পারবে না। তার পরিণতি? টাকার আশায় তাকিয়ে থাকতে হবে নয়াদিল্লির দিকে। অর্থাৎ কেন্দ্রই হয়ে উঠবে নিয়ন্ত্রক, চালিকাশক্তি।
এবার নীতি আয়োগের প্রাক্তন এক কর্তার সাক্ষাৎকার এই অভিযোগের পক্ষেই সিলমোহর দিল। কারণ, একটি আলোচনাসভায় তিনি কিছুদিন আগে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে। নীতি আয়োগের প্রাক্তন সিইও বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম বলেছেন, ‘পঞ্চদশ অর্থ কমিশন রাজ্যগুলির করবাবদ প্রাপ্য অর্থ ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪২ শতাংশ করার সুপারিশ করেছিল। তখনই পিছনের দরজা দিয়ে প্রাণপণে এই যুক্তরাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল মোদী সরকার। তাদের প্রস্তাব ছিল, ৪২ শতাংশ নয়, নতুন অর্থ কমিশন রাজ্যকে ৩৩ শতাংশ কর ফিরিয়ে দিক।’
দেশ থেকে যে রাজস্ব ও ট্যাক্স আদায় করা হয়, তার নির্দিষ্ট অংশ রাজ্যকে ফিরিয়ে দেওয়াই নিয়ম। এই অর্থ এক ধাক্কায় ৪২ শতাংশ? মানতে চাননি মোদী। আর তারপর জোরদার টানাপোড়েন চলে সরকার, অর্থ কমিশন এবং নীতি আয়োগের মধ্যে। কিন্তু মোদী সরকারের চাপে পিছু হটেননি কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান ওয়াই ভি রেড্ডি। অনড় অবস্থান বজায় রেখেই তিনি বলেছিলেন, ‘রাজ্যগুলিকে ৪২ শতাংশই দেওয়া উচিত।’ এরপর আর অগ্রসর হয়নি মোদী সরকার।