বঙ্গে পূজিত হন সুভাষচন্দ্র, জানেন কোথায় রয়েছে নেতাজির মন্দির?
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: নেতাজিকে ঈশ্বর জ্ঞানে পুজো করে গোটা বাংলা। এই বাংলায় তাঁর মন্দিরও রয়েছে। আজ প্রায় ষাট বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্তরবঙ্গে পূজিত হচ্ছেন দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। জলপাইগুড়িতে রয়েছে সকলের প্রিয় নেতাজির মন্দির। সেখানে হনুমান মন্দিরে রাম-সীতা, হনুমান, কৃষ্ণ, হর-পার্বতীর সঙ্গে নেতাজিও পুজো পান। জলপাইগুড়ি জেলার মাশকলাইবাড়িতে হনুমান মন্দিরটি অবস্থিত। অন্যান্য দেবদেবীর সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুরও বছরভর পুজো হয়। ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। নেতাজি ভক্তেরা আসেন। ২৩ জানুয়ারি দিনটি ধুমধাম সহকারে পালিত হয়।
এই মন্দিরে নেতাজির পুজো প্রচলনের নেপথ্যে রয়েছে এক রহস্যময় কাহিনী। তখন সদ্য স্বাধীন হয়েছে দেশ। একটু একটু করে হাঁটতে শিখছে ভারত। কিন্তু দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান অনুপস্থিত। কী হল তাঁর সঙ্গে, অন্তর্ধান নিয়ে দেশজুড়ে জল্পনা আর চর্চার আসর বসছে। ঠিক সেইসময় জলপাইগুড়ির মাশকলাই বাড়ি এলাকায় রহস্যময় এক মানুষের উপস্থিতি গোটা জলপাইগুড়ি শহরকে চমকে দিয়েছিল। কোথা থেকে এসেছেন তিনি, তা কারও জানা নেই। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী জানা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে হৃষিকেশ থেকে এক সাধু উত্তরবঙ্গের মাশকলাইবাড়ি শ্মশান সংলগ্ন এলাকায় এসেছিলেন। গাছের তলায় বসে থাকতেন হনুমানের ভক্ত দীর্ঘ চেহারার এক মৌন মানুষ। পাশে নেতাজির ছবি। ইশারাতেই সবকিছু বোঝাতেন তিনি। তবে যা বোঝাতেন তাতে ফুটে উঠত তাঁর দেশপ্রেমের কথা। সেইসঙ্গে ছিল নেতাজির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। এলাকারবাসীর কাছে তিনি করপাত্রী মহারাজ বা বুড়া বাবা নামে পরিচিত ছিলেন। তিনিই একটি মন্দির নির্মাণ করেন। ঐ মন্দিরের পাশেই তিনি থাকতেন। দিনের বেশির ভাগ সময় এই মন্দিরে ধ্যান করতেন। পরবর্তীতে তাঁর নামেই এই মন্দির পরিচিতি লাভ করে। শোনা যায় করপত্রিজি মহারাজের হাত ধরে ১৯৫৩ সালে হনুমান মন্দির স্থাপিত হয় এবং তিনিই এই মন্দিরে অন্যান্য দেবদেবীর সঙ্গে নেতাজির মর্মর মূর্তি বসিয়ে পুজো শুরু করেন। অন্যান্য দেবদেবীর পাশে একই বেদীতে তিনি সিমেন্টের স্থায়ী নেতাজি মূর্তিটি স্থাপন করেছিলেন। সেই থেকে নেতাজি পুজোর শুরু যা আজও অক্ষত।
অন্য একটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, ১৯৬৬ সাল নাগাদ জলপাইগুড়ি মাশকলাইবাড়ি শ্মশান সংলগ্ন এলাকায় এক সাধুবাবা থাকতে এসেছিলেন। একটি মন্দির নির্মাণ করে, পাশেই ঘর করে তিনি নিজেও থাকতেন। তিনিই মন্দিরে অন্যান্য দেবদেবীর সঙ্গে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মর্মর মূর্তি বসিয়ে পুজোর প্রচলন করেন।
স্থানীয়দের একাংশের বিশ্বাস, এই করপত্রিজি ছিলেন নেতাজির সহযোদ্ধা। সুভাষ চন্দ্রর অন্তর্ধানের পর জলপাইগুড়িতে এসে আত্মগোপন করেছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালে দেহত্যাগ করেন মহারাজ। আবার কেউ কেউ মনে করেন তিনিই হয়ত স্বয়ং নেতাজি। এই মন্দির কেবল বিরল নয়, সেই সঙ্গে রহস্যের আকরও বটে। দেশনায়ক নেতাজির জীবন রহস্যময় আর তাঁর মন্দিরে রহস্য থাকবে না! তা আবার হয় নাকি। মহারাজের আসল পরিচয় জানার আর উপায় নেই। কিন্তু এক অনন্য নজির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মন্দির।