বইমেলায় প্রথম সপ্তাহে হাজির হয়েছিলেন ১০ লক্ষ পাঠক, কেবলই বইয়ের টানে?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ১৮ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত দিয়ে শুরু হয়েছিল ৪৭তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। গত সাতদিনে একটি শনি-রবি ও ২৩ জানুয়ারির ছুটি পেয়েছিল মানুষ। সবকটি ছুটির দিনেই জনস্রোত বয়ে গিয়েছিল মেলায়। গিল্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক সপ্তাহের মধ্যে প্রথম শনিবার প্রায় দু’লক্ষ পাঠক এসেছিলেন। রবিবার এসেছিলেন প্রায় তিন লক্ষ। ২৩ জানুয়ারিও ভিড় ছাড়িয়ে গিয়েছিল দু’লক্ষের গণ্ডি।
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের হিসেবে দেখা গিয়েছে, ১৮ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে ন’লক্ষেরও বেশি মানুষ এসেছেন। গতবারের ভিড়কে হারিয়ে রেকর্ড গড়বে ৪৭তম কলকাতা বইমেলা।’
এবার বইমেলার আগে ট্রাফিক ব্যবস্থাও ঢেলে সাজিয়েছিল পুলিস। বইমেলা চত্বর সহ আশপাশের সমস্ত মোড় ও রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং, রোড মার্কিং নতুন করে রং করা হয়েছে। প্রতিদিন মোতায়েন ১৩০০ পুলিসকর্মী। সঙ্গে ছ’জন ডিসি পদমর্যাদার আধিকারিক। ছুটির দিনে আটজন করে ডিসি উপস্থিত থাকছেন। ২০০ সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। রয়েছে বম্ব স্কোয়াড। বইমেলা প্রাঙ্গণের উল্টোদিকে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছুটির দিন বাড়তি ভিড় সামাল দিতে বিকাশ ভবন, জলসম্পদ ভবন, ময়ূখ ভবন, বিদ্যুৎ ভবন সহ সরকারি অফিসের নীচেও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা হয়েছে।
বইমেলার বাকি সাতদিনে একটি শনি, একটি রবি এবং আজ ২৬ জানুয়ারি পড়ছে। ফলে আরও তিনটি ছুটির দিন। পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে বলেন, ‘গতবার ২৬ লক্ষ বইপ্রেমী মানুষ এসেছিলেন। বই বিক্রি হয়েছিল ২৫ কোটি টাকার। আমরা নিশ্চিত এবার তার থেকেও বেশি ভিড় হবে।’
যত দিন এগোচ্ছে, বাড়ছে ভিড়। মেলা প্রাঙ্গণে মেলা মানুষ, স্টলের সামনে লম্বা লাইন, বিল কাটতে গিয়ে মুখ তোলার সময় পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। বিক্রিবাটাও মন্দ নয়। ওদিকে প্রায় লাইন পড়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিলের রোলিং সেলফি স্ট্যান্ড, টেলিফোন বুথ ইনস্টলেশন, থাইল্যান্ড স্টলের সেলফি জোন, টুকটুক অটো সেলফি জোনে — সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড হবে যে!
এমন ফেস্টিভ এরিনায় বৌদ্ধিক চর্চা তো নিখরচায়। অথচ বইমেলার সাজানো অডিটোরিয়ামে চলতে থাকা সেমিনারগুলো দাঁড়িয়ে শোনার লোক হাতেগোনা। এ দিকে সেই সব বুকস্টলের সামনে ভিড়, যেখানে ক্যুইজ খেলে আকর্ষণীয় পুরস্কার পাওয়া যাচ্ছে। গত রবিবার দুপুরে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ করুণাময়ীর মাঠে ভিড় জমালেন বটে। কিন্তু কেনাকাটির হিড়িকটা মূলত রয়ে গেল ফুড স্টল আর ফ্যাশন অ্যাক্সেসরিজ় ঘিরেই। গরম ফিশফ্রাই, মোমো হাতে পেতে কেউ কেউ দাঁড়ালেন ৪৫ মিনিট। পছন্দের বই কিনতে অত ক্ষণ অপেক্ষা দেখা গেল না! অথচ ছোট জুটব্যাগ, গলার হার, কানের দুলের দোকানে দেখার মতো ভিড়।