কী ঘটেছিল মরিচঝাঁপিতে? জেনে নিন হত্যাকান্ডের রক্তাক্ত অন্যতম
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: আজ ৩১ জানুয়ারি। আজকের দিনেই ঘটে গিয়েছিল মরিচঝাঁপি হত্যাকান্ড। সময়টা ছিল ১৯৭৯ সাল, কংগ্রেসকে হঠিয়ে তখন সদ্য বাংলার মসনদে বসেছে বামফ্রন্ট। বাঙালি শরণার্থীদের বিতাড়িত করতে বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশ মরিচঝাঁপিতে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল সেদিন। পুলিশের গুলিতে মোট কতজনের মৃত্যু হয়েছিল, সে সংখ্যা আজও অজানা। মরিচঝাঁপির রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি। কত মানুষের মৃতদেহ সেদিন নদীতে ভেসেছিল, তার কোনও ইয়ত্তা নেই। এই নরকীয় হত্যাকান্ড বাম জমানার কলঙ্কজনক অধ্যায়ের অন্যতম এক দলিল।
রাজ্যে সিপিআইএমের শাসন, শক্ত ঘাঁটি গোটা বাংলাজুড়েই। কিন্তু সুন্দরবনের বিস্তৃত এলাকায় ছিল আরএসপির দাপট। সিপিআইএমের অভিযোগ ছিল, মরিচঝাঁপিতে শরণার্থীদের খেপিয়ে তুলেছিল আরএসপি। রাজ্যের প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রয়াত আরএসপি নেতা অশোক চৌধুরী এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, ১৯৭৯ সালের ৩১ জানুয়ারি পুলিশই অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। মরিচঝাঁপিতে লোকজন, জিনিসপত্রের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি ঢুকতে, ওষুধপত্র, পানীয় জলও আটকে দেওয়া হয়। সে সময় মরিচঝাঁপি দ্বীপে খেতে না পেয়ে বহু শিশুর মৃত্যু হয়। আর কোনওদিন মৃতদের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে না। ৩১ জানুয়ারি সেখানকার মানুষজন মরিয়া হয়ে খাবার ও জল জোগাড়ে বেরিয়ে পড়েন। পুলিশ তাদের নৌকা ভেঙে দেয়। যুদ্ধের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বহু শরণার্থী নিহত হন। পুলিশ কত রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল, সে হিসেব পাওয়া যায় না।
কুমিরমারির আদিবাসী মেনি মুণ্ডাকে রান্নাঘরে ঢুকে কার নির্দেশে, কেন গুলি করা হল আজও তার জবাব মেলেনি। ক্ষুধায় তৃষ্ণায় কাতর শরণার্থীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। ওই বছর ১৪ থেকে ১৬ মে চূড়ান্ত অপারেশনে কত জনকে হত্যা করা হয়েছিল, তার হিসেবও আর পাওয়া যাবে না। অনেকেই বলেন, গণহত্যাকে আড়াল করতে পেরেছিল বামফ্রন্ট।
দীর্ঘদিন ধরেই দণ্ডকারণ্য থেকে বাঙালি শরণার্থীরা চলে আসছিল। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যে ওই শরণার্থী পরিবারের এক তৃতীয়াংশ বাংলায় পালিয়ে আসে। বামফ্রন্ট সরকার নৃশংসভাবে মরিচঝাঁপি থেকে সেই শরণার্থীদের তাড়িয়েছিল। মরিচঝাঁপিতে ঠিক কী ঘটেছিল, কত জন মারা গিয়েছিল, তা নিয়ে আজও বহু বিতর্ক রয়ে গিয়েছে। নানান সংস্থা, মানবাধিকার সংগঠন, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীরা ১৯৭৯ সালের আগে ও পরে বারবার মরিচঝাঁপি গিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত করেছেন, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু রহস্য আজও রহস্যই থেকে গিয়েছে। সিপিআইএম এখনও দাবি করে, ওই সময় মরিচঝাঁপিতে পুলিশের গুলিতে নাকি মাত্র দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তদানিন্তন অবিভক্ত ২৪ পরগনা জেলার পুলিশ সুপার অমিয় সামন্তের দাবি, শরণার্থীদের উপর কোনও বলপ্রয়োগ করাই হয়নি। তিনিও বলেন পুলিশের গুলিতে দু-জনের মৃত্যু হয়েছিল। সে সময় বামফ্রন্ট সরকার দাবি করেছিল, ফ্রন্ট সরকার ফেলার চক্রান্তে এমনটা করা হয়েছিল। সিপিআইএম, বামফ্রন্ট শরিক আরএসপিকেও কিছুটা দায়ী করেছিল সে সময়।
তারপর আজ ৪৪ বছর কেটে গিয়েছে। এখনও মরিচঝাঁপির অভিশপ্ত দিনের স্মৃতি অনেকের মনে তাজা। বছর ঘুরে প্রতি বছর ৩১ জানুয়ারি আসে, মরিচঝাঁপি নিয়ে আলোচনা, সভা হয়। লেখালেখি হয়। কিন্তু তাতেই ক্ষান্ত! আজও অধরা সেদিনের রক্তাক্ত ইতিহাসের পূর্ণাঙ্গ চিত্র।