সত্যজিতের মাস্টারমশাই বিনোদবিহারী, যাঁর ছোঁয়ায় সাবলম্বী হয়েছিল দেশের চিত্রকলা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দশ ভাই-বোনের বিনোদ বিহারী শৈশবকালে জয় করেছিলেন মৃত্যুকে, আর পরবর্তী জীবনে জয় করেছিলেন অন্ধত্বকে। এ দেশের চিত্রকলাকে সাবলম্বী করে তুলেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের মাস্টারমশাই বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়।
ভারতীয় আধুনিক চিত্রকলার সূচনা হয়েছিল তাঁর হাতে। অন্তর্দৃষ্টিতেই শিল্পকে রূপ দিয়েছিলেন। তাঁর নিজের কথায়, ‘ব্লাইন্ডনেস ইজ আ নিউ ফিলিং, আ নিউ এক্সপিরিয়েন্স, আ নিউ স্টেট অফ বিয়িং।’ সত্যজিৎ রায় তাঁর দ্য ইনার আই তথ্যচিত্রে ফুটিয়ে তুলেছিলেন বিনোদবিহারীর শিল্পের অন্তর্জগতকে।
এক শতক আগের শান্তিনিকেতন ধরা আছে বিনোদবিহারীর ক্যানভাসে। শান্তিনিকেতন, আশ্রম, কলাভবন, খোয়াই; সবই ছিল তাঁর আঁকার উপজীব্য, এমনকি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথও। নির্জনতা, নিভৃত যাপন উঠে এসেছে তাঁর আঁকায়। বিনোদবিহারী নিজে লিখে গিয়েছেন, “এই নির্জনতাই বোধহয় আমার দৃশ্য-চিত্রের প্রধান বিষয়। তাই ভাবি আমি শিখলাম কার কাছ থেকে? নন্দলালের কাছ থেকে, না লাইব্রেরি থেকে, অথবা শান্তিনিকেতনের এই রুক্ষ প্রকৃতি থেকে? নন্দলাল না থাকলে আমার আঙ্গিকের শিক্ষা হতো না, লাইব্রেরি ছাড়া আমার জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব হতো না, আর প্রকৃতির রুক্ষ মূর্তি উপলব্ধি না করলে আমার ছবি আঁকা হতো না।”
যে সময় ল্যান্ডস্কেপের কোনও খ্যাতি বা পরিচিতি ছিল না বাংলার শিল্পমহলে, সে’সময় দৃশ্য চিত্র এঁকেছেন বিনোদবিহারী। বিনোদবিহারীর ছবি প্রাচ্যের চিত্রকলার গতানুগতিক ধারাকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। তাতে মানুষের কথা, প্রকৃতির কথা স্থান পেয়েছিল, দীর্ঘ ছয় দশকের শিল্পজীবনে সে’সবই বলে গিয়েছেন বিনোদবিহারী। অবনীন্দ্রনাথের হাত ধরে ভারতীয় চিত্রকলায় যে নতুন জোয়ার এসেছিলে, সার্থক রূপকার হিসেবে তা বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বিনোদবিহারী।