Chocolate Day: জানেন চকোলেটের উৎপত্তি কোথায় হয়?
আজ চকোলেট ডে। মিষ্টি মুখে হোক ভালোবাসার উদযাপন। কিন্তু এই যে আট থেকে আশি সকলের প্রিয় চকোলেট তার জন্ম হল কীভাবে?
মায়া ভাষার শব্দ শোকোলাতিল থেকে চকোলেটের জন্ম হয়েছে। শোকোলাতিল আদপে ছিল মায়ানদের জনপ্রিয় পানীয়। উত্তেজক পানীয় হিসেবে চকোলেট বেশ সুনাম করেছিল। সমাজের সব স্তরে পৌঁছেছিল সে, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব্বাই চকোলেটের ভক্ত। এমনকি সে সময়ের মন্দিরের দেওয়ালেও চকোলেট পানরত রাজাদের ছবি দেখা যেত। মায়ানদের বিনিময় মুদ্রা হিসেবেও কোকোবিন ব্যবহার হত।
এতো চকোলেটের কথা; কোকো এলো কোত্থেকে? আদপে কোকোবিন থেকেই তো চকোলেটের জন্ম হয়। কোকোর বয়স তিন হাজার বছরেরও বেশি। দক্ষিণ আমেরিকার ওলমেকারদের কাকাওয়া শব্দ থেকে কোকোর জন্ম। কোকো প্রথম কোথায় পাওয়া গিয়েছে তা জানা যায় না। কোকোর জন্ম বৃত্তান্ত বড় সহজ সরল, ঐতিহাসিকেরা বলেন ওলেকারাই প্রথম কোকোর চাষ করে। ল্যাটিন আমেরিকার উত্তরে থাকত মায়ানরা, তারাই প্রায় একই সময় কোকোর চাষ শুরু করে। মায়ানদের পরে অ্যাজটেকরা এসেই অমূল পরিবর্তন ঘটালো চকোলেটের।
তবে স্বাদের অমূল পরিবর্তন এসেছে স্পেনীয়দের হাত ধরে, ১৫০২ সালে ফার্ডিনান্দ ও তার বাবা কলম্বাস হঠাৎই কোকোর দেখা পান। প্রথমটায় নাক সিটকোলেও পরে কলম্বাস বোঝেন এ জিনিস অমূল্যরতন, চকোলেট নতুন রেসিপি পায়। সে রেসিপি লুকিয়ে রাখে স্পেনীয়রা। আসলে চকোলেটের যাত্রাপথ সুবিস্তৃত এবং সুপ্রাচীন। চিনি প্রচলনের আগে থেকে মানুষ কোকো খাওয়া ধরেছে। নানানভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মুখের স্বাদ অনুযায়ী খাওয়ার উপযোগী করার চেষ্টা করেছে। ১৫৭৯ সালে স্পেনের এক কোকোবিন ভর্তি জাহাজ আক্রমণ করেছিল ইংরেজ জলদস্যুরা।
কিন্তু কোকোবিনকে ছাগলের গু মনে করে গোটা জাহাজে জলদস্যুরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পরে ইউরোপে চকোলেটের অনুপ্রবেশ ঘটে, তবে ওষুধ হিসেবেই তার সুনাম হয়। কোকোবিনে জ্বর সারে, হজমে সাহায্য করে, শরীর ঠান্ডা করে। এই চকোলেটের জন্য খুনও হতে হয়েছে, ভিক্টিম নিতান্ত নিরীহ এক পাদ্রী। আসলে চার্চ বিধান দিয়েছিল উপোস করলে চকোলেট খেলে নাকি উপোস ভাঙবে না। এই বিধান দিয়েই প্রাণ হারান ঐ চার্চের পাদ্রী। ইউরোপ থেকে কোকো পাড়ি জমায় ফ্রান্সে, রাজা চতুর্দশ লুইয়ের বিয়ের ভোজসভায় এক সন্মানজনক আসন পায় কোকো চকোলেট।
১৬৫৯ সালে প্যারিসে প্রথম চকোলেটের দোকান খোলা হল। তবে এর আগে ১৬৫৭ সালে চকোলেটে হাউস খুলে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে চকোলেট প্রেমের চেয়ে জুয়াপ্রেমটাই ছিল বেশি। জুয়ারীরা আড্ডা মারাতেন, জুয়ার বোর্ড ঘুরাতেন আর মাঝে চকোলেটে চুমুক দিতেন। সপ্তদশ শতাব্দীতে এই চকোলেটে হাউস প্রশ্নাতীত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তবে চকোলেটকে প্রাক আধুনিক রূপ দিয়েছে শিল্প বিপ্লব। তরল থেকে জমানো আকার পেয়েছে চকোলেট, নানান উপাদানে সমৃদ্ধ হয়ে চকোলেট বেশ মিলিজুলি খাবারে পরিণত হয়েছে। এর নেপথ্যে সুইডিসদের অবদান অনস্বীকার্য।
১৮৪৭ সালে ইংল্যান্ডের ফ্রাই কোম্পানি প্রথম চকোলেট বার তৈরি করতে শুরু করে। ১৮৫৭, অর্থাৎ ভারতে তখন মহাবিদ্রোহ হচ্ছে, সেই বছর সুইজারল্যান্ডে নেসলের জামাই প্রথম মিল্কিবারের প্রচলন ঘটিয়েছিল। তারপর গত দেড়শো বছরে অনেক পথ পেরিয়ে আজ চকোলেট সমান বিক্রম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্যাডবেরী আমাদের মিষ্টি মুখ করার দায়িত্ব তুলে নিয়েছে বহুদিন। কেক থেকে আইসক্রীম, পান থেকে সন্দেশ আজ সবেকেই চকোলেট। আর বাঙালিরাই ক্যাডবেরী আর মিষ্টির বিয়েও দিয়ে ফেলেছে।
তাই চকোলেট দিয়েই আজ মিষ্টি মুখে করে সম্পর্কের উদযাপন হয়ে যাক… ক্যাডবেরীর মতো মিষ্টি হোক সব সম্পর্ক।