‘অমর একুশে ফেব্রুয়ারি’, কী হয়েছিল সেদিন?
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2024/02/21-February-1024x576.jpg)
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ভাষা আন্দোলন মানে নিজের ভাষায় কথা বলার, লিখতে পারার, গান গাইতে পারার স্বাধীনতার লড়াই। তাই বলা হয়, একুশ মানে আত্মত্যাগ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত না করা। একুশ মানে বিজয়ের লক্ষ্যে আত্মত্যাগ। একুশ মানে অপ্রতিরোধ্য সংগ্রাম, শক্তি, সাহস।
বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একুশকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেক গল্প-কবিতা-উপন্যাস। আসুন জেনে নিই ইতিহাসের গৌরবময় এই আন্দোলনে যা কিছু ছিল প্রথম।
একুশের প্রথম কবিতা
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2022/02/IMG-20220221-WA0140.jpg)
একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে প্রথম রচিত কবিতা ‘কাঁদতে আসি নি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’। রচয়িতা মাহবুবুল আলম চৌধুরী। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭ টায় কবিতাটি রচিত হয়। কবিতাটি চট্টগ্রামের লাল দিঘি ময়দানে ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে পাঠ করেন চৌধুরী হারুনুর রশিদ।
শহীদ মিনার ধ্বংসের প্রতিবাদে প্রথম কবিতা
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2022/02/IMG-20220221-WA0138.jpg)
১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশের হাতে প্রথম শহীদ মিনার ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ রচনা করেন ‘স্মৃতিস্তম্ভ’। শহীদ মিনার ভাঙার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন এই আলাউদ্দিন আল আজাদ।
একুশের প্রথম গান
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2022/02/Picsart_22-02-21_15-37-32-182-1024x786.jpg)
ভাষা আন্দোলনভিত্তিক প্রথম গানের রচয়িতা ভাষা সৈনিক আ ন ম গাজিউল হক। ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আর্মানিটোলা ময়দানের জনসভায় গানটি গাওয়া হয়। গানটির প্রথম চরণ হল, ‘ভুলব না, ভুলব না, একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলব না’।
প্রভাত ফেরিতে প্রথম গান
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2022/02/Picsart_22-02-21_15-34-05-465-1024x574.jpg)
১৯৫৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রকৌশলী মোশাররফ উদ্দীন আহমদ প্রথম প্রভাত ফেরিতে গানটি রচনা করেন। গানটির লাইন ছিল ‘মৃত্যুকে যারা তুচ্ছ করিল ভাষা বাঁচাবার তরে, আজকে স্মরিও তারে…’ ’৫৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে লেখা হয়েছিল এ গান।
একুশের প্রথম সংকলন
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2022/02/IMG-20220221-WA0135.jpg)
একুশের প্রথম সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ -সম্পাদক হাসান হাফিজুর রহমান। ’৫৩ সালে পুথিপত্র থেকে এটি প্রকাশ করেন বিশিষ্ট রাজনৈতিককর্মী মোহাম্মদ সুলতান। আলী আশরাফ, শামসুর রাহমান, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আবদুল গণি হাজারী, ফজলে লোহানী, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আনিস চৌধুরী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, জামালউদ্দিন, আতাউর রহমান, সৈয়দ শামসুল হক, হাসান হাফিজুর রহমান, শওকত হোসেন, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, আনিসুজ্জামান, সিরাজুল ইসলাম, আতোয়ার রহমান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, তোফাজ্জল হোসেন, কবির উদ্দিন আহমদের লেখায় সমৃদ্ধ এই সংকলনের অসাধারণ স্কেচগুলো করেন মুর্তজা বশীর।
প্রথম নাটক
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2022/02/IMG-20220221-WA0136.jpg)
একুশের প্রথম নাটক মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’। ভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার ‘অপরাধে’ ’৫২ সালে জেলে আটক ছিলেন রণেশ দাশগুপ্ত ও মুনীর চৌধুরীসহ অনেক লেখক- সাংবাদিক। রণেশ দাশগুপ্ত অন্য সেলে আটক মুনীর চৌধুরীকে ভাষা আন্দোলনের ওপর একটি নাটক লিখে দেওয়ার অনুরোধ করে একটি চিরকুট পাঠান। শহীদ দিবসে রাজবন্দীরাই নাটকটি মঞ্চস্থ করবে, জেলে মঞ্চসজ্জা ও আলোর ব্যবস্থা করা যাবে না। তাই মুনীর চৌধুরীকে বলা হয়, নাটকটি এমনভাবে লিখতে হবে, যাতে খুব সহজে জেলেই এটি অভিনয় করা যায়। মুনীর চৌধুরী ’৫৩ সালের ১৭ জানুয়ারি নাটকটি লিখে শেষ করেন। ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি, রাত ১০টায় জেলকক্ষগুলোর বাতি নিভিয়ে দেওয়ার পর হ্যারিকেনের আলো- আঁধারিতে মঞ্চস্থ হয় কবর। অভিনয়ে অংশ নেন বন্দী নলিনী দাস, অজয় রায় প্রমুখ।
প্রথম ভাষা শহীদ
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2022/02/IMG-20220221-WA0139.jpg)
একুশের প্রথম শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ। তিনি ছিলেন মানিকগঞ্জের আবদুল লতিফের বড় ছেলে। তাঁর মায়ের নাম রাফিজা খাতুন। সিংগাইর উপজেলার পারিল গ্রামে ছিল তাঁদের বাড়ি। ঘটনার সময় শহীদ রফিকের বয়স হয়েছিল ২৬ বছর। পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের কারণে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ব্যারাকে আশ্রয় নেওয়ার সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন রফিক। গুলিতে তাঁর মাথার খুলি উড়ে যায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তখনই মারা যান তিনি।
প্রথম শহীদ মিনার
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2022/02/IMG-20220221-WA0137.jpg)
ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের যে চেহারা আজ দেখা যায়, আগে তা কিন্তু মোটেও এমন ছিল না। তখন এটি ছিল ১১ ফুট লম্বা ত্রিস্তরবিশিষ্ট একটি স্তম্ভ। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রনেতা গোলাম মওলা ও তাঁর সহযোগীদের উদ্যোগে স্তম্ভটি গড়ে তোলে প্রায় ৩০০ মানুষ। এদের বেশির ভাগই ছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। ২৩ ফেব্রিয়ারি নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এই স্তম্ভের মূল নকশা করেছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বদরুল আলম। মিলিটারি কারফিউ আর হাড় হিম করা শীত উপেক্ষা করে তৈরি করা এই শহীদ মিনার দেখতে পরদিন ভিড় জমায় শত শত মানুষ। তৈরির তিন দিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি মিনারটি শুধু ধ্বংসই করেনি পুলিশ, পাশাপাশি ধ্বংসাবশেষও নিয়ে যায় তারা।
প্রথম উপন্যাস
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2022/02/IMG-20220221-WA0189.jpg)
একুশের প্রথম উপন্যাস জহির রায়হান রচিত ‘আরেক ফাল্গুন’। শহীদ দিবস পালন, শহীদ মিনার নির্মাণ, আন্দোলন সবকিছুর এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটানো হয় এই উপন্যাসে। উপন্যাসটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় পাঁচ এর দশকে এবং বই হিসেবে প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে।
প্রথম সিনেমা
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2022/02/Picsart_22-02-21_15-22-46-348-1024x574.jpg)
একুশের চেতনা নিয়ে প্রথম নির্মিত সিনেমা ‘জীবন থেকে নেয়া’। ১৯৭০ সালে জহির রায়হান সিনেমাটি পরিচালনা করেন। সিনেমাটি সে সময় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। পরবর্তিতে স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখে সিনেমাটি।