Buddha Purnima 2024: আদিবাসী সমাজের সেঁদরা পরব
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলার আদিবাসী সমাজে পালিত হয় শিকার উৎসব। বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন এই উৎসব পালনের রেওয়াজ রয়েছে। সাঁওতালি সমাজে এই পার্বণকে বলা হয় সেঁদরা। প্রতিবছর সংবাদমাধ্যমে তা নিয়ে খবরও হয়। যা পড়ে তথাকথিত শিক্ষিত, পরিবেশ ও পশু প্রেমি বুদ্ধিজীবী মানুষজন বিস্মিত হয়ে পড়েন। যে আদিবাসী সমাজকে তারা এতদিন বন্য পশু ও পরিবেশের রক্ষক বলে জেনে এসেছেন তারাই এখন ভক্ষকে পরিণত হয়েছে!
কিন্তু বাস্তবটা কি?
হেমন্তকালে চাষের সময়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে এক সময় একটি বিশেষ রীতির প্রচলন ছিল। যার পোশাকি নাম গূড়ু সেঁদরা। এখানে গূড়ু শব্দের অর্থ ইঁদুর। অর্থাৎ, ইঁদুর শিকার। বর্তমানে অবশ্য এই রীতি লুপ্ত হওয়ার পথে। আমন ধানকাটার আগে জমিতে মেঠো ইঁদুরের উপদ্রব একসময় ছিল চেনা দৃশ্য। খড় সমেত ধান কেটে মেঠো ইঁদুর তাদের গর্তে জমিয়ে রাখত। তাদের বাসা বানানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় সেই খড়। আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছেলের সেই সব গর্ত খুঁজে বের করে তার থেকে ধান উদ্ধার করত। ইঁদুর শিকার করা হতো। তারপর সংগৃহিত ধান থেকে চাল বের করে ভাত রান্নার পর ইঁদুরের মাংস সহযোগে খাওয়া হত। এর মধ্যে থাকত একটা উৎসবের মেজাজ, আনন্দের পরিবেশ।
এই বিশেষ রীতির ফলে চাষিরাও দারুণ উপকৃত হতেন। কারণ, এতে মেঠো ইঁদুরের নষ্ট করা ফসলের একটা অংশ যেমন উদ্ধার হত, তেমনই ফসলের শত্রু ইঁদুরের হাত থেকেও রেহাই মিলত। পাশাপাশি, ইঁদুরের বংশবিস্তার রোধ করাও সম্ভব হত। তাই, কৃষকরা আদিবাসী যুবকদের এই রীতির জন্য মুখিয়ে থাকতেন। এই গূড়ু সেঁদরা ছিল আমন ধান সুরক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী প্রক্রিয়া। কিন্তু, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। বদল হয়েছে দৃষ্টিভঙ্গির। পাশাপাশি, উদ্ভাবন হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির। ফসল বাঁচাতে বেড়েছে উন্নতমানের কীটনাশকের ব্যবহার। আজকের গতিময়তার যুগে নানা কাজে ব্যস্ততার কারণে এই প্রাচীন এখন লুপ্তপ্রায়। পারিবারিক পরম্পরা মেনে নিছক আনন্দ উপভোগের জন্য এই রীতি গ্রাম বাংলায় এখনও চালু থাকলেও কার্যত তা হারিয়ে যেতেই বসেছে।