স্বাস্থ্য বিভাগে ফিরে যান

সাইনাসের সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় কি?

February 23, 2024 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মানুষের নাকের আশপাশের হাঁড়গুলোর ভেতরে কিছু গহ্বর/কুঠুরি রয়েছে, যা বাতাসে পূর্ণ থাকে। এই গহ্বরগুলোই সাইনাস। মূলত শরীরে বাতাস চলাচলে সাহায্য করে থাকে এই অঙ্গটি। একজন মানুষের নাকের আশপাশে সব মিলিয়ে প্রায় আটটি সাইনাস থাকে। ম্যাক্সিলারি সাইনাস, স্পেনয়েড সাইনাস, ইথময়েড সাইনাস, ফ্রন্টাল সাইনাস নামে নাকের দুই পাশে দুটি করে সাইনাস থাকতে পারে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে ম্যাক্সিলারি সাইনাস। দু’জন মানুষের সাইনাসের আকার-আয়তন কখনই একরকম হয় না।

সাইনাসগুলোর কাজ কী কী—

সাইনাস শ্বাসপথের রোগ জীবাণুকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। এর ভেতরের নরম আবরণ মিউকাস মেমব্রেনে যেমন অসংখ্য গ্ল্যান্ড আছে, তেমনি আছে অসংখ্য সিলিয়া বা শুঙ্গ। এই শুঙ্গগুলোর জন্য সাইনাসের সমস্ত তরল পদার্থ নাক থেকে বেরিয়ে যায়। করোটিকে হালকা রাখে, যাতে দেহ সহজেই মাথাকে বইতে পারে। কণ্ঠস্বরে রেজোন্যান্স বা অনুরণন যুক্ত করে স্বরকে মিষ্টি করে। বাইরের ছোটখাটো আঘাত থেকে মস্তিষ্ককে রক্ষা করে। শ্বাসপথের বায়ুকে উষ্ণ এবং আর্দ্র রাখে অর্থাৎ এয়ারকন্ডিশনিং চেম্বার হিসেবে কাজ করে।

কারণ নানা রকম
সাইনোসাইটিস বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর একটি অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। সাধারণত নাকের মিউকাস মেমব্রেনের প্রদাহ ও ফুলে যাওয়াকেই রাইনাইটিস বলা হয়। এতে নাক ভারী হয়ে যায়, নাকের ভেতরের শিরা (ভেইন), মিউকাস মেমব্রেন ফুলে গিয়ে নাকের ভেতরে ব্লক তৈরি করে। আরও কিছু কারণ—
ঠান্ডাজনিত সাইনোসাইটিস হতে পারে।
কারও নাকে যদি মাংস বেড়ে যায়, পলিপ থাকে কিংবা নাকের হাড় বাঁকা থাকে, তাদের সাইনাসের সমস্যা হতে পারে।
ডিএনএস বা ডিভিয়েটেড ন্যাসাল সেপটামের কারণেও সাইনোসাইটিস হতে পারে।
টনসিলাইটিস ও এডিনয়েডে সংক্রমণও একটি কারণ।

কাদের হয়
সাইনোসাইটিস কাদের হয়, সেটি নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। যেকোনো বয়সের মানুষেরই সাইনাসের সমস্যা হতে পারে। তবে যাঁদের সাধারণ ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে বা সাইনাসে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাঁদের ঝুঁকি বেশি থাকে।

শীতে সমস্যা বাড়ে কেন
প্রথমত হয় ঠান্ডা লেগে অর্থাৎ হঠাৎ করে তাপমাত্রার পরিবর্তনে। শীতে সাইনাসের সমস্যা বাড়ে। আমাদের নাক এয়ারকন্ডিশনিং চেম্বার হিসেবে কাজ করে। বাইরের ঠান্ডা বাতাসকে গরম করে শ্বাসপথের ভিতরে পাঠাতে নাকের বিভিন্ন রক্তনালীতে ধেয়ে আসে উষ্ণ রক্ত। ফুলে যায় নাকের মিউকাস মেমব্রেন। সাইনাসগুলোর সঙ্গে নাকের সংযোগনালীগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সাইনাসে রোগ-জীবাণু আটকে পড়ে দাপাদাপি শুরু করে।

এমনটা ঘটতে পারে অ্যালার্জি, নাকের পার্টিশনের হাড় বাঁকা থাকলে, এমনকী হঠাৎ নাক ঝাড়লেও। সব সাইনাসগুলো যখন একসঙ্গে সংক্রামিত হয়, তখন তাকে বলে প্যানসাইনাসাইটিস।

সাইনাসের জন্যই মাথাব্যথা বুঝবেন কীভাবে

সাইনাসের মাথা ব্যথার অ্যাকিউট বা তীব্র স্টেজে সকালবেলা সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা শুরু হয়। বেলা বাড়ে, মাথার টনটনানিও বাড়ে। কিন্তু সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যথা হঠাৎ করে কমে যায়। আবার ক্রনিক স্টেজে রোগী বিছানা ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ব্যথা শুরু হয়, বেলা একটু বাড়লেই ধীরে ধীরে কমে আসে।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম—কথাটি সাইনোসাইটিসের ক্ষেত্রে অনেকটাই প্রযোজ্য। প্রতিরোধের জন্য যা করতে হবে—
ধুলো–বালি থেকে দূরে থাকুন। ঘন ঘন যেন ঠান্ডা না লেগে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন এবং প্রচুর ভিটামিনযুক্ত খাবার খান। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান।
সরাসরি ফ্যানের নিচে বা এসি বরাবর থাকবেন না। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় সতর্ক থাকুন।
গরম ভাপ বা মেন্থলের ভাপ নিতে পারেন। এর মাধ্যমে দ্রুত শ্লেষ্মা বের হয়ে সাইনাসের সমস্যায় দ্রুত উপশম দেয়।
ধূমপান থেকে দূরে থাকুন।
ঠান্ডা খাওয়া যাবে না।
অ্যারোসোল, মশার কয়েলের ধোঁয়া, এয়ারফ্রেশনারসহ যেকোনো ধরনের ধোঁয়া ও স্প্রে থেকে দূরে থাকুন।
যাঁদের সাইনাসের সমস্যা আছে, তাঁরা বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।
সাইনাসের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেয়ে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Health, #Sinus, #Health hazards

আরো দেখুন