কেবল বেশি বয়সেই নয়, তিরিশ-চল্লিশেও পড়তে পারে ছানি, কোন সময়ে করাবেন অপারেশন
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বয়স বাড়লে যেমন চুলে পাকে, ত্বকে বলিরেখা ফুটে ওঠে, তেমনই ঝাপসা হয়ে আসতে পারে চোখের দৃষ্টি। চোখের ছানি বা চোখের লেন্সের ঝাপসা হয়ে আসা চোখের প্রধান সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম। অবহেলা করলে ফল হতে পারে মারাত্মক। এমনকি, দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়ারও ঝুঁকি থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে শুধু ছানির কারণে প্রতি বছর ৩৮ লক্ষ মানুষ দৃষ্টি হারান। অনেকেই ভাবেন, বয়স ৬০ পেরোলে তবেই এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসকেরা কিন্তু বলছেন, এখন ৩৫ – ৪০ বছর বয়সি ব্যক্তিদের চোখও ছানিতে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।
‘ছানি’ শব্দটির সাথে আমাদের সকলেরই অল্পবিস্তর পরিচয় আছে। আমাদের দেশের ‘প্রিভেন্টেবেল ব্লাইন্ডনেস’-এর কারণগুলির মধ্যে ছানি অন্যতম। চোখের ক্রিস্টালাইন লেন্সের যেকোনো রকমের অস্বচ্ছতাকে সাধারণ ভাষায় ছানি বলা হয়ে থাকে।
অল্প বয়সেও দেখা দিতে পারে ছানির সমস্যা
- ডায়াবিটিস বা মধুমেহ থাকলে কম বয়সে ছানি পড়ার ঝুঁকি বাড়ে।
- সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে অনেক সময় চোখের লেন্স ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।
- কারও যদি বংশে এই সমস্যা থাকে, তবে অনেক সময় অল্প বয়সে ছানি পড়ার আশঙ্কা থাকে।
- অল্প বয়সে ছানি পড়ার আর একটা বড় কারণ ‘অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস’। এটি এক ধরনের অ্যালার্জি। চোখের পেশির কার্যক্ষমতা কমে গেলেও দেখা দিতে পারে ছানির অসুখ।
- যাঁদের চোখে খুব বেশি ‘মাইনাস পাওয়ার’ থাকে অর্থাৎ মায়োপিয়া থাকে তাঁদেরও চোখে ছানি পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। রাতকানা রোগ থাকলেও কম বয়সে ছানি পড়ার ঝুঁকি বেশি।
কী করবেন?
জেনে রাখা ভালো যে এই রোগের কোনো ওষুধের মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব নয়। এর একমাত্র চিকিৎসা অস্ত্রোপচার। ছানি ধরা পড়লে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই চোখে ক্যাটারাক্ট সার্জারি (cataract surgery) করিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে আগের মতো দৃষ্টির স্বচ্ছতা ফিরে আসতে পারে। বিশেষ করে পেডিয়েট্রিক ক্যাটারাক্ট বা শিশুদের মধ্যে ক্যাটারাক্ট-এর ক্ষেত্রে অকারণ দেরী আক্রান্ত চোখটিতে ‘অ্যাম্বলায়োপিয়া’ বা ‘লেজি আই’-এর জন্ম দিয়ে শিশুটির নজরের পাকাপাকিভাবে ক্ষতি করতে পারে। আধুনিক ফেকোএমালসিফিকেশন পদ্ধতিতে নামমাত্র কাটাছেঁড়া ও বিনা সেলাইতে খুব সহজেই অস্ত্রোপচার সম্ভব। ছানি পড়া লেন্সটির এমালসিফিকেশনের পরে চোখের ভিতরে বসানো হয় উন্নত মানের ইন্ট্রাঅকুলার লেন্স রোগীর দৃষ্টির স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার জন্য। এই ধরনের আধুনিক অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে রোগী পরের দিন থেকেই নিজের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরতে পারেন। বারণ বা নিষেধাজ্ঞার সংখ্যাও প্রায় না থাকার মতোই। সার্জারি বছরের যে কোন সময়েই করা চলতে পারে। এ ক্ষেত্রে বছরের বিশেষ কোনও মাসের কোনো আলাদা গুরুত্ব নেই।