বলিউডে নায়িকাদের থেকে নায়কদের মূল্য বেশি! পারিশ্রমিকের তফাৎ অনেকটাই
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বলিউড পুরুষতান্ত্রিক। সেই ইন্ডাস্ট্রির সকলেই কমবেশি বলেন এ কথা বলেন। বলিউড বা মূলস্রোতের হিন্দি সিনেমার জগতে প্রধান চরিত্রে নারী অভিনেতা ও পুরুষ অভিনেতার পারিশ্রমিকের তফাৎ অনেকটাই। ছরের পর বছর ধরে এই বৈষম্য চলেই আসছে। অঙ্কের হিসেবে সিনেমায় টাকার বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়লেও ছবির নায়কের থেকে নায়িকার পারিশ্রমিক তুলনায় অত্যধিক কম রয়ে যাওয়ার বিষয়টি একই রয়ে গেছে।
সম্প্রতি শাহরুখ খান, বিজয় সেতুপতি, নয়নতারা, প্রিয়মনি সহ একাধিক তারকা সম্মিলিত ছবি ‘জওয়ান’ মুক্তি পেয়েছে। এই সিনেমায় অতিথি অভিনেত্রী হিসাবে আছেন দীপিকা পাড়ুকোন।সিনেমা মুক্তির পরপরই তা বক্স-অফিসে আয়ের দিক থেকে একাধিক রেকর্ডকে ভেঙে দেয়। কিন্তু এই সিনেমাটিও পূর্বের সমস্ত সিনেমার মতই নায়ক ও নায়িকার পারিশ্রমিকের বিষয়ে একই থেকেছে।
‘জওয়ান’-এ অভিনয়ের জন্য নয়নতারা ১০ কোটি টাকা এবং সামান্য কিছু সময় স্ক্রিন উপস্থিতির জন্য দীপিকা পাড়ুকোন পেয়েছেন ১৫-২০ কোটি টাকা। অপরদিকে শাহরুখ খান একাই নিয়েছেন ১০০ কোটি টাকা। যা প্রধান অভিনেত্রী নয়নতারার থেকে দশ গুণ বেশি।
প্রায় একই সময়ে মুক্তি পাওয়া আরেকটি হিন্দি সিনেমা ‘গদর ২’-এ সানি দেওল যেখানে নিয়েছেন ২০ কোটি টাকা, সেখানে সিনেমার প্রধান অভিনেত্রী আমিশা প্যাটেল পেয়েছেন মাত্র ৬০ লাখ টাকা (সূত্র- দৈনিক জাগরণ)।
এই বছরের শুরুতেই মুক্তি হওয়া ‘পাঠান’ সিনেমায় দীপিকা পাড়ুকোন প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে পেয়েছেন ১৫ কোটি টাকা, সেখানে শাহরুখ খান পারিশ্রমিক নিয়েছেন ১০০ কোটি টাকা (সূত্র- দৈনিক জাগরণ)।
অক্ষয় কুমার তার সব সিনেমাতেই এখন ১০০ কোটি টাকা পারিশ্রমিক নেন। সেই সিনেমা বক্স অফিসে হিট করছে কি না তার উপর পারিশ্রমিক নির্ভর করে না।
এই হিসেব একই রকম ছিল আগেও। ২০০৩ সালে বিখ্যাত হিন্দি সিনেমা ‘কাল হো না হো’-তে অভিনয়ের জন্য করিনা কাপুর খান বেশি পারিশ্রমিক দাবি করায় তাকে সিনেমা থেকেই বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন পরিচালক করণ জোহার। করণ নিজের আত্মজীবনী ‘An Unsuitable Boy’-তে নিজেই এ কথা লিখেছেন।
‘ফাইটার’ ছবির জন্য ৭৫ কোটি টাকা পারিশ্রমিক হেঁকে শিরোনামে এসেছেন হৃতিক রোশন। ইদানীং ছবিতে তেমন মুখ দেখা না গেলেও ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্ট দিয়ে তার ‘মূল্যমান’ নির্ধারিত হয় নিশ্চয়ই। তাতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু এই ছবিতে হৃতিকের নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোন কত পেলেন? শোনা যাচ্ছে, ২০ কোটি। তাঁর হাতে ছবির অভাব নেই। তবুও হৃতিকের ধারেকাছে নেই তাঁর পারিশ্রমিক। অন্যান্য পেশাতেও মহিলারা উচ্চপদে আসীন হওয়া সত্ত্বেও পুরুষদের তুলনায় কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হন। কেবল ভারত নয়, সারা দুনিয়ার বাস্তব এটা।
যে মহিলারা আপস করতে রাজি নন, তাঁদের ‘অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ তকমা দেওয়া হয়। নিপুণ দক্ষতায় এড়িয়ে যাওয়া হয় পুরুষদের বেতন কাঠামোর প্রসঙ্গটি। বলিউডও তার ব্যতিক্রম নয়। এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাতা তথা লেখক মেহুল কুমার বলেন, ‘আমি ৪৭ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত। বরাবরই নায়িকাদের তুলনায় নায়করা বেশি পারিশ্রমিক পান। আগে একজন শীর্ষ স্থানীয় নায়িকা ২০ লক্ষের বেশি পারিশ্রমিক পেতেন না। এখন একজন প্রথম সারির নায়িকার পারিশ্রমিক খুব বেশি হলে ১০ কোটি। সেখানে নায়কদের পারিশ্রমিক আকাশছোঁয়া। আমরা প্রযোজকরা কোনও ছবিতে বড় মাপের নায়ক নিলে, সেই ছবিতে মাঝারি মাপের নায়িকা নিই। ফলে ছবির বাজেট ঠিক থাকে।’
ইন্ডাস্ট্রির বাস্তব চেহারা তুলে ধরলেন পরিচালক কেসি বোকাডিয়া। তাঁর কথায়, ‘দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে চিরকালই পুরুষ আধিপত্য। নায়কের নামেই টিকিট বিক্রি হয়। সেজন্য নায়ক যদি একশ পান, সেখানে নায়িকাদের ঝুলিতে আসে মাত্র দশ। এই চিত্র বদলানো কখনও সম্ভব নয়।’
কেন এই বৈষম্য, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নায়িকারাও। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতির আশু বদলের কোনও লক্ষণ নজরে পড়ে না।