Child Obesity: ভারতে শিশু-তরুণদের মধ্যে ব্যাপক হারে বাড়ছে স্থূলতার সমস্যা, বলছে সমীক্ষা
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: স্থূলতার সমস্যা যে বাড়ছে, তা নিয়ে আলোচনা চলছেই বহু দিন ধরে। শিশুদের খাওয়াদাওয়া, খেলার অভ্যাসে বিশেষ নজর দেওয়ার কথাও উঠছিল। কারণ শৈশবেই এই সমস্যা শুরু হয়ে যাচ্ছে অনেকের ক্ষেত্রে।
ভারতের প্রায় ১.২৫ কোটি শিশু ও তরুণ স্থূলতা (ওবেসিটি)-র শিকার। ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। ওই শিশু ও তরুণদের বয়স পাঁচ থেকে উনিশ বছরের মধ্যে। তার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৭৩ লক্ষ ও মহিলাদের সংখ্যা ৫২ লক্ষ। সারা বিশ্বের নিরিখে এই সংখ্যাটা আরও ভয়াবহ। শিশু, কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্ক মিলিয়ে স্থূলতার শিকার মানুষের সংখ্যা সারা বিশ্বে ১০০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। গবেষকদের মতে, ১৯৯০ সালের থেকে সুষম খাদ্যের অভাবের ফলাফল হিসেবে অপুষ্টির শিকারের বদলে স্থুলতা ক্রমশ বাড়ছে।
বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের সম্মিলিত নেটওয়ার্ক এনসিডি রিস্ক ফ্যাক্টর কোলাবরেশন (এনসিডি-রিস্ক) ও বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা (হু)-এর যৌথ উদ্যোগে ১৯০টি দেশের ২২ কোটি শিশু, কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে গবেষণা চালানো হয়েছিল। ১৫০০ জন গবেষক এতে অংশ নেন। ১৯৯০ থেকে ২০২২ সালে মধ্যে স্থূলতা ও কম ওজনের হার কীভাবে বদলেছে, তা জানতে বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই)-এর সাহায্য নেন।
তাতে গত ৩৩ বছরে সুষম পুষ্টির অভাব মানব জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলেছে, তার একটি স্পষ্ট ছবি উঠে এসেছে। গবেষকদের হিসেবে, শিশু-কিশোরদের মধ্যে স্থূলতার হার ১৯৯০ সালে যা ছিল, ২০২২ সালে তা চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষকদের মধ্যে লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের অধ্যাপক মাজিদ ইজ্জাতি বলেন, ‘১৯৯০ সালে স্থূলতা মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও, এখন তা স্কুলপড়ুয়া শিশু-কিশোরদের মধ্যে মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক। ’ তবে এর উল্টো ছবিও রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইজ্জাতি। তিনি জানান, একই সময়. বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কোটি কোটি শিশু-কিশোর এমনও রয়েছে, যারা ঠিকমতো পুষ্টি পায় না। ‘গরিব’ দেশগুলিতে এই সংখ্যাটা সবচেয়ে বেশি। স্থূলতা ও অপুষ্টির শিকার-দুটি সমস্যা মেটাতে পুষ্টিকর খাবারের জোগান ও সেই খাবার কেনার জন্য ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে, সারা বিশ্বে স্থূলতার হার ২০২২ সালে মহিলাদের মধ্যে দ্বিগুণ ও পুরুষদের মধ্যে তিনগুণ বেড়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে, ১৯৯০ সালে মহিলাদের মধ্যে স্থূলতার হার ছিল ১.২ শতাংশ, ২০২২ সালে তা বেড়ে ৯.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে একই সময়ে এই হার ০.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫.৪ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। সংখ্যার হিসেবে, ২০২২ সালে স্থূলতার শিকার মহিলার সংখ্যা ৪.৪ কোটি ও পুরুষের সংখ্যা ২.৬ কোটি।
ওবেসিটি বা স্থূলতার সমস্যা আছে কি না, তা বোঝার এক মাত্র পদ্ধতি হল ‘বডি মাস ইনডেক্স’(বিএমআই)। কোনও শিশুর বিএমআই যদি ৩০-এর উপর থাকে, সেক্ষেত্রে ধরা যেতে পারে যে, সেই শিশু স্থূলতার সমস্যায় ভুগছে। ছোটবেলা থেকে ওবেসিটি গ্রাস করলে শরীরে বিপাক হার কমতে থাকে। ফলে ইনসুলিন সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। টাইপ টু ডায়াবিটিস, পিসিওডি(পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম), হরমোনের ভারসাম্যহীনতার মতো নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত স্থূলতা শিশুর শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যারও কারণ হয়ে ওঠে। শিশুর প্রতি বাবা-মায়েদের বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন। সুস্থ জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে শিশুর স্থূলতার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।