সমরেশ বসুর অসম্পূর্ন শেষ আখ্যান, নার্সিংহোম হয়ে উঠল সাহিত্য সাধনার পীঠ
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সমরেশ বসু, আজ তাঁর মৃত্যু দিন। রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের উপন্যাসের বেতাজ বাদশা, লেখক জীবনের সায়াহ্নে বেছে নিয়েছিলেন এক মহিরূহের জীবনকে। সাল ১৯৮৭, রামকিঙ্কর বেজের জীবনভিত্তিক উপন্যাস ‘দেখি নাই ফিরে’ দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে শুরু হল। উপন্যাস বেশ এগিয়েও গেল মাস ছয়ের মধ্যে। অমৃতকুম্ভের সন্ধান চলছিল, তন্নতন্ন করে রামকিঙ্করের জীবন খুঁজে ফেলেছিলেন তিনি।
কিন্তু শরীর সঙ্গ দিচ্ছিল না। দু-বার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন আগেই। যাদবপুরে গেলেন ছেলের কাছে থাকতে। পুত্র ও পুত্রবধূ, দুজনেই চিকিৎসক। তাঁদের নাসিংহোমে বসেই ‘দেখি নাই ফিরে’-র শেষ কয়েকটি কিস্তি লিখেছিলেন কালকূট। খাম বন্দি করে সেই পাণ্ডুলিপি ‘দেশ’ পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক সাগরময় ঘোষের হাতে দিয়ে আসতেন সমরেশ পুত্র। আড্ডা, মদ্যপান সবই ছেড়ে দিয়েছিলেন এক এক করে। কমে আসছিল বাঁচার তাগিদ। কিন্তু নিবিড় অনুসন্ধান চলছিল। সত্যজিৎ পরামর্শ দিয়েছিলেন বিনোদবিহারীকে নিয়ে লেখার। সে পথে হাঁটেননি কালকূট, বেছেছিলেন রামকিঙ্করের জীবন।
রামকিঙ্কর প্রসঙ্গে ছেলেকে বলতেন, ‘রামকিঙ্কর যেন এক বিশাল ঠাকুরের মূর্তি আমার ঘাড়ে… বিসর্জন দিতে পারব, না কি দিতে গিয়ে আমিই তলিয়ে যাব…ভাবি মাঝে-মাঝে।’ না, শেষ হয়নি। তিনি তলিয়ে গিয়েছে রামকিঙ্করকে সঙ্গে নিয়ে। দেখি নাই ফিরে উপন্যাসের পাঁচটি পর্বের নামকরণ করেছিলেন কালকূট। নামগুলো ছিল, আরক্ত ভোর, সকালের ডাক— বিশ্বঅঙ্গনে, রৌদ্রদগ্ধ দীর্ঘ বেলা, ছায়া দীর্ঘতর এবং অন্ধকারের আলো। তৃতীয় পর্ব রৌদ্রদগ্ধ দীর্ঘ বেলা শুরু হতেই থাকল সমরেশের কলম। রামকিঙ্করের পূর্ণ যৌবন কালের কাহিনি থেকে গেল অজানা, বাংলা সাহিত্যের একটি কালজয়ী সৃষ্টি পড়ে রইল অসমাপ্ত অবস্থায়।
তথ্যঋণ: সমরেশ-পুত্র নবকুমার বসুর স্মৃতিচারণা।