ত্বক-চুলের যত্নে চা-পাতার ব্যবহার
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: এক কাপ গরম চা! শরীর তরতাজা করতে আর কী দরকার? কিন্তু জানেন কি, শরীর–মন তরতাজা করার পাশাপাশি ত্বক ও চুলকেও সুন্দর রাখে চা (Tea)। চা–পাতা (tea leaves) দিয়ে করা যায় সৌন্দর্যচর্চা। অবশ্য এতে চা–পাতার সঙ্গে অল্প কিছু বাড়তি উপকরণ মিশিয়ে নিয়ে তৈরি করতে হয় প্যাক।
ইতিহাস বলছে, বহু বছর আগে চীনে চায়ের প্রথম প্রচলন। তা বিভিন্ন রকমফেরে ভারতে আসে। ভারতীয়রা চা পছন্দ করেন। তবে বাঙালিদের চা-প্রিয়তা প্রশ্নাতীত। চা শরীর ভালো রাখতে কাজে লাগে। চায়ের অনেক গুণাগুণ। চায়ের মধ্যে পলিফেনল, ফ্ল্যাবানয়েডস, ট্যানিন-এর মতো উপকারী উপাদান রয়েছে। যে কোনও ধরনের চায়ের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ই। এই ভিটামিনগুলো দৈনন্দিন জীবনে আমাদের ত্বকের জন্য ভীষণ কার্যকরী। চায়ের অনেক ভাগ রয়েছে। হোয়াইট, গ্রিন, ব্ল্যাক, ওলঙ্গ টি বেশ জনপ্রিয়। সায়ন্তন জানালেন, কোন চা কতটা প্রসেস করা হচ্ছে, তার উপর এই ভাগগুলো নির্ভর করে। যেমন চা পাতা তোলার পর খুব কম প্রসেস যেটা করা হয় সেটা হোয়াইট টি। এটা অত্যন্ত দামি। এর মধ্যে সবথেকে বেশি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যা ওজন কমাতে, হার্টের অসুখে উপকারী। আবার মুখে ঘাম থেকে কোনও ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হলে সেটাতেও কাজ করবে। আমাদের কোষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি হয়ে যায়। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সেগুলো বন্ধ করতে সাহায্য করে। ফ্রি রেডিক্যাল যত কমবে তত ত্বক প্রাণবন্ত হবে, উজ্জ্বল হবে। ত্বকের বলিরেখা কমবে। তত ত্বকে বয়সের ছাপ কমবে।
ফুটন্ত গরম জলে গ্রিন টি ব্যাগ ভিজিয়ে রাখুন প্রথমে। তারপর ঠান্ডা হয়ে এলে লিকারে তুলোর বল ভিজিয়ে নিয়ে ত্বক আলতো করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মুছে নিতে হবে। অথবা পুরো জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এটি ত্বকে প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করবে।
চোখের চারপাশ কিংবা চোখের পাতা অনিয়মিত ঘুম, ক্লান্তিসহ বিভিন্ন কারণে ফুলে থাকে। এই ফোলা ভাব কমাতে পারে টি ব্যাগ। পূর্বে ব্যবহার করা হয়েছে এমন দুটি টি ব্যাগ বা নতুন একটি টি ব্যাগ নিয়ে সামান্য কুসুম গরম জলে ডুবিয়ে রাখতে হবে ১ থেকে ২ মিনিট। তারপর অতিরিক্ত জল চেপে ফেলে দিয়ে চোখের ওপর চাপা দিয়ে রাখতে হবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এতে চোখের চারপাশের ফোলা ভাব কমে যাবে অনেকটাই। এমনকি চায়ের পাতায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট চোখের আশপাশের বলিরেখাও কমাতে সাহায্য করবে।
চায়ে উপস্থিত ট্যানিক অ্যাসিড ত্বকের কালো ভাব দূর করতেও সাহায্য করে। এর জন্য একটি পাত্রে এক টেবিল চামচ চা-পাতা জলে ফোটাতে হবে। এরপর ঠান্ডা হলে এক টুকরো নরম সুতি কাপড় কিংবা তোয়ালে ত্বকের কালচে বা রোদে পুড়ে যাওয়া অংশে চেপে ধরে রাখতে হবে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট। এটি কালচে ভাব কমাতে সাহায্য করবে।
চায়ের লিকার ঠান্ডা করে এতে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিতে হবে। এবার মিশ্রণটি বোতলে সংরক্ষণ করা যাবে। এই মিশ্রণে প্রতিদিন তুলো ভিজিয়ে ব্রণের ওপর কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখতে হবে। এতে ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর হয়ে ব্রণ হওয়া থেকে ত্বক রক্ষা পাবে।
দুটি ব্যবহৃত গ্রিন টি-ব্যাগ থেকে চা-পাতা বের করে একটি পাত্রে রাখতে হবে। এবার দুই চা-চামচ মধু, আধা চা-চামচ টক দই ও লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে কিছুক্ষণ। ত্বক শুকিয়ে এলে কুসুম গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এই ফেসপ্যাক ত্বক দাগহীন রাখবে।
টি ব্যাগ ফেলে না দিয়ে সেগুলো স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ জন্য ব্যবহার করা টি ব্যাগ শুকিয়ে রেখে দিতে হবে। তারপর প্যাক খুলে পাতাগুলো বের করে আবার জল বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে আলতো হাতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলতে হবে। ভেজা মুখ মুছে নিয়ে লাগাতে হবে ময়েশ্চারাইজার। এটি ত্বকের ওপর জমে থাকা ময়লা, মৃত চামড়া, লোমকূপে জমা অতিরিক্ত তেল দূর করে ত্বক করবে সতেজ, উজ্জ্বল।
চায়ে ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’সহ রয়েছে নানা রকম উপকারী উপাদান। এসব উপাদান চুলের বৃদ্ধি ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। দুই কাপ জলে চা-পাতা ফুটিয়ে ঠান্ডা করার পর ছেঁকে নিতে হবে। এবার সেই জলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে। চুল শ্যাম্পু করার পরে এই জল দিয়ে পুরো চুল ধুয়ে নিন। এই উপকরণ চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।