আবহাওয়া মনোরম! নিজ নিজ কেন্দ্রে প্রচারে ঝড় তুলছেন প্রার্থীরা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ সকলে জেনে গেছে। বুধবার জারি হয়ে গেছে প্রথম দফার ভোটের বিজ্ঞপ্তি। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া বাংলার জন্য সম্পূর্ণ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি কোনও দলই। তাতে অবশ্য প্রচারে কোনও বাধা নেই।
না ঠান্ডা, না গরম। আকাশে হাল্কা মেঘ থাকলেও বৃষ্টি হয়নি। এই সুযোগে হাওড়া ও হুগলি জেলায় দাপিয়ে ভোটের প্রচার সারলেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। মন্দিরে পুজো দেওয়া থেকে পথসভা, বর্ণময় মিছিল থেকে দলীয় কর্মীদের নিয়ে সভা, নানা আঙ্গিকেই দেখা গিয়েছে প্রার্থীদের। মূলত সকাল ও সন্ধ্যার দিকে দলীয় কর্মীদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচারে যান প্রার্থীরা। এদিকে, হুগলি ও শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় এদিন চষে বেরিয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নজরদারি দল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হচ্ছে কি না, সেদিকে নজর রাখতেই পথে নেমেছিল এই বিশেষ দল।
হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রে এদিন বাম, বিজেপি এবং তৃণমূল— তিনদলের প্রার্থীরাই প্রচারে নেমেছিলেন। সকাল সকাল রামমন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করেন বিজেপির রথীন চক্রবর্তী। দক্ষিণ হাওড়ার হাঁসখালি পোল এলাকায় জনসংযোগ সারেন তিনি। তারপর ব্যস্ত হয়ে পড়েন দলীয় বৈঠকে। তবে বিজেপি কর্মীরা এদিন দিনভর বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচার করেছেন। তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ তথা এবারের প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় সারাদিন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে প্রচার করেছেন। এদিন তিনি বালিখালের হনুমান মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করেন। সন্ধ্যায় ইফতারের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে জনসংযোগ সারেন। তার আগে বেলুড় বাজারে পথসভা করেন। চায়ের দোকানে বসেও তাঁকে জনসংযোগ করতে দেখা গিয়েছে। হাওড়ার সিপিএম প্রার্থী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় এদিন লিলুয়া ও ভোটবাগানে প্রচার করেন। ভোটবাগানের শ্রমিক মহল্লায় তাঁর প্রচার ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গিয়েছে।
হুগলির শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধরকেও এদিন শ্রমিক মহল্লায় প্রচারে দেখা গিয়েছে। তিনি চাঁপদানি, বৈদ্যবাটি পুরসভার একাধিক এলাকা ও রিষড়ায় প্রচার করেন। সকাল সকাল অ্যাঙ্গাস জুটমিল এলাকা থেকে নেত্রীর প্রচার শুরু হয়। শ্রীরামপুর কেন্দ্রে বিজেপি এখনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। তবে দলের ভোটমুখী সাংগঠনিক কর্মসূচি এদিন চোখে পড়েছে। শ্রীরামপুর জুড়ে প্রতিদিনই তৃণমূল কিছু না কিছু কর্মসূচি পালন করছে। এদিনও স্থানীয় স্তরে কর্মীদের প্রচারে দেখা গিয়েছে। তবে দলের বিদায়ী সাংসদ তথা এবারের প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এদিন রাস্তায় প্রচারে দেখা যায়নি। তবে তিনি বেশ কিছু ঘরোয়া সাংগঠনিক বৈঠকে অংশ নেন।
হুগলি লোকসভা আসনে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন সপ্তগ্রাম বিধানসভার বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করেন। সকালে সেনেটের বিশালাক্ষ্মী মন্দিরে পুজো দিয়ে রচনাদেবীর সফর শুরু হয়। তারপর দিনভর তিনি কখনও রোড শো, কখনও কর্মিসভা করেছেন। বলাগড়ে এদিন জনসভা করেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে, বলাগড়ের জিরাটে প্রচার সেরেছেন সিপিএমের প্রার্থী মনোদীপ ঘোষ।
দল তাঁকে সেন্সর করেছে। অর্থাৎ দলের গাইডলাইনের বাইরে গিয়ে কোনও মন্তব্য করা যাবে না। কাউকে ব্যক্তি আক্রমণ করা যাবে না। কিন্তু দলের গাইডলাইনে তো রয়েছে মানুষের পাশে থেকে সেবা করা যাবে। এবার সেই গাইডলাইন মেনে সকলকে চমকে দিলেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল। এই লোকসভা কেন্দ্রে এবার প্রাক্তন স্বামী–স্ত্রীর লড়াই হচ্ছে। বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন বিদায়ী সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। পথেঘাটে জোরদার ভোটের প্রচার চলছে। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছেড়ে দিতে নারাজ। আর সেখানেই দেখা গেল চমকে দেওয়ার মতো প্রচার। শুক্রবার কোতুলপুরে হঠাৎ করে এক সেলুনে ঢুকে পড়লেন সুজাতা মণ্ডল। তখন সেখানে চুল কাটতে এসেছেন এলাকার এক যুবক। প্রার্থী সুজাতাকে দেখে তিনি চমকে যান। তবে হেসে কথা বলেন। কারণ এভাবে দেখা হবে ভাবেননি। কিন্ত চমকের তখনও বাকি ছিল। এরপরই কাঁচি ও চিরুনি হাতে তুলে নেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। আর চুল কেটে দিলেন ওই যুবকের। যা দেখলেন সকলে।
দেড় দশক ধরে লোকসভা ভোটে তিনি ছিলেন প্রার্থী। কখনও কংগ্রেসের, কখনও ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। প্রতীক বদলালেও বদলায়নি কেন্দ্র। তবে এ বার ছবিটা ভিন্ন। তাঁকে প্রার্থী করেনি তৃণমূল। শুক্রবার উত্তরের চেনা মাটির বদলে দেড় দশক পরে, দক্ষিণ মালদহ থেকে লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করলেন রাজ্যসভার সাংসদ মৌসম নুর। দুপুরে ইংরেজবাজারের অমৃতিতে দলীয় প্রার্থী শাহনওয়াজ আলি রায়হানকে সঙ্গে নিয়ে পায়ে হেঁটে ভোট প্রচার করেন তিনি।
ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে ঝোড়ো প্রচারে দেব। শুক্রবার কেশপুরে ছিল তাঁর প্রচার। সেখানে রোডশো-র মাঝে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া নিয়েও মুখ খোলেন দেব। শুক্রবার বিকেলে কেশপুর কলেজ থেকে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত রোড শো করেন অভিনেতা সাংসদ দেব। এদিনের র্যালি থেকে দেব জানান, ৫ বছর, ১০ বছর পর জনপ্রতিনিধিদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা কমে যায়! আজ কেশপুরে আপনারা যেভাবে আশীর্বাদ করতে হাজির হয়েছেন আমি বুঝে গেলাম আগামী আরও ৫ বছর আমি থাকছি। যদি মনে করেন, ঘরের ছেলেকে ভোট দেওয়া যাবে, তাহলে দেবেন। ভোট গণতান্ত্রিক আধিকার। ভোট দিন না দিন, আশীর্বাদ করুন।