বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

এলিজাবেথ নোবেল হয়ে উঠেছিলেন বিবেকানন্দের মানসকন্যা ‘নিবেদিতা’

March 25, 2024 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: ১৮৬৭ সালের ২৮ অক্টোবর আয়ারল্যান্ডে মার্গারেটের জন্ম। ১৮৯৮ সালের ২৫ মার্চ স্বামী বিবেকানন্দ তাঁকে নতুন জন্ম দিয়েছিলেন। ১৯০৪ সালে নিবেদিতা লিখেছেন, ‘‘ভিতরে আমার আগুন জ্বলতো, কিন্তু প্রকাশের ভাষা ছিল না। এমন কতদিন হয়েছে কলম হাতে নিয়ে বসেছি অন্তরের দাহকে রূপ দেব বলে— কিন্তু কথা জোটেনি। আর আজ আমার কথা বলে শেষ করতে পারি না। দুনিয়ায় আমি যেন আমার ঠিক জায়গাটি খুঁজে পেয়েছি।… এবার তীর এসে লেগেছে ধনুকের ছিলায়।’’ মশালে অগ্নিসংযোগের কাজটি করেছিলেন স্বামীজি।

মিস মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল আয়ারল্যান্ড থেকে ভারতে এসেছিলেন, নিজেকে এদেশে সেবায় নিয়োজিত করতে এসেছিলেন, লোকসেবায় নিবেদনের একটি এসেছিলেন, ভারতের হতে এসেছিলেন। ইতিহাসের সমাপতন দেখুন, মার্গারেট যখন মাতৃগর্ভে, তখনই তাঁর মা ইজাবেল প্রার্থনা করেছিলেন, তাঁর সন্তান নিরাপদে ভূমিষ্ঠ হলে ঈশ্বরের কাজেই তাকে উৎসর্গ করবেন। সেই মেয়েরই নাম হল নিবেদিতা।

১৮৯৫ সালের ১০ নভেম্বর, রবিবারের বিকেল। বেশ শীত। লেডি ইসাবেল মার্গেসনের বাড়িতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল। প্রধান বক্তা স্বামী বিবেকানন্দ, ততদিনে স্বামীজির বিশ্বজয় হয়ে গিয়েছে। মার্গেসনের বাড়ির ওই দিন উপস্থিত ছিলেন উইম্বলডনের বাসিন্দা, তরুণী মার্গারেট এলিজাবেথ নোবল। ইসাবেল মার্গেসনের সঙ্গে মার্গারেটের পরিচয় সিসেঁম ক্লাবে। সিসেঁম ক্লাব সেই সময়ের বিশিষ্ট ব্রিটিশদের মিলন স্থল। মার্গারেটের ঘনিষ্ট বন্ধু ছিল অ্যাভেনজার কুক। মার্গারেট রাসকিন স্কুল চালাচ্ছেন। ব্যক্তিগত জীবনে মর্মান্তিক আঘাত পেয়ে আশ্রয়স্থল খুঁজে বেড়াচ্ছেন মার্গারেট। বুদ্ধের জীবনীগ্রন্থ ‘লাইট অফ এশিয়া’ তাঁর হাতে আসে। কিন্তু আধ্যাত্মিকতা তাঁর কাছে অধরা থেকে যায়। কুকের মনে হয়েছিল মার্গারেট যে আশ্রয় খুঁজে বাড়াচ্ছেন তার সন্ধান হয়ত ভারতীয় সন্ন্যাসীই দিতে পারবেন।

মার্গারেট সেদিন একটু দেরিতে এসেছিলেন। একবারে সামনের খালি চেয়ারে বসলেন। বিবেকানন্দ এসে বসলেন একেবারে মার্গারেটের মুখোমুখি। শুরু করলেন বেদান্ত ব্যাখ্যা, মার্গারেট শুনলেন। এরপর ১৮৯৭-এর ২৯ জুলাই, লন্ডন থেকে দেশে ফিরে এলেন স্বামীজি। মার্গারেটও ভারতে আসার উদগ্রীব, স্বামীজির কাছে অনুমতি চান। ভারতের সেবা করতে চান তিনি। উত্তরে স্বামীজি জানালেন, ঝাঁপ দেওয়ার আগে ভাল করে ভেবে দেখ। যদি কাজে নামার পর ব্যর্থ হও, বা যদি বিরক্তি আসে, তবে আমার দিক থেকে অবশ্যই জেনো আমি আমরণ তোমার পাশে থাকব। তুমি ভারতবর্ষের জন্য কাজ করো বা নাই করো। মনস্থির করে ফেললেন মার্গারেট, তিনি ভারতে আসবেনই। কবে ডাকেন স্বামীজি, প্রতীক্ষা শুরু হল নিবেদিতার। স্বামীজির চিঠি এল। স্বামীজি মার্গারেটকে লিখছেন, ‘তোমাকে খোলাখুলি বলছি, এখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে যে, ভারতের কাজে তোমার এক বিরাট ভবিষ্যৎ রয়েছে। ভারতের জন্য, বিশেষতঃ ভারতের নারী সমাজের জন্য, পুরুষদের চেয়ে নারীর-একজন প্রকৃত সিংহীর প্রয়োজন। ভারতবর্ষ একনও মহিয়সী মহিলার জন্ম দান করতে পারছে না, তা অন্য জাতি থেকে তাকে ধার করতে হবে। তোমার শিক্ষা, ঐকান্তিকতা, পবিত্রতা, অসীম ভালবাসা, দৃঢ়তা-সর্বপোরি তোমার ধমনীতে প্রবাহিত কেলটিক রক্তের জন্য তুমি ঠিক সেইরূপ নারী যাকে আজ প্রয়োজন।’

১৮৯৮ সালের জানুয়ারি মাস মোম্বাসা জাহাজ ভিড়ল। ১৮৯৭ সালের জুলাই মাসে বিবেকানন্দ তাঁকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। ভারতবর্ষে মিস নোবলের মতো মহিয়সীর দরকার। জাহাজ জেটিতে আসল। মার্গারেট দেখতে পেলেন বিবেকানন্দকে। গৈরিক বস্ত্র, মাথায় পাগড়ি, পায়ে চটি। ভিড় ঠেলে খানিকটা এগিয়ে যাওয়ার পর বিবেকানন্দ জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমার লন্ডনের বন্ধুরা কেমন আছেন? তোমার মা কেমন আছেন মার্গারেট? কেমন চলছে তোমার স্কুল?’ মার্গারেট হাসলেন।

কলকাতায় আসার পর মার্গারেট পার্ক স্ট্রিট-চৌরঙ্গী অঞ্চলে ছিলেন। তারপর চলে আসেন উত্তর কলকাতায়। ১৮৯৮ সালের প্রথম কয়েকটা মাস তাঁর জীবন বড়ই আনন্দে কেটেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে রামকৃষ্ণদেবের জন্মোৎসব উপলক্ষ্যে দক্ষিণেশ্বরে এলেন মার্গারেট। তারপর বেলুড়ে পূর্ণচন্দ্র দাঁর বাড়িতে ঠাকুরের জন্মোৎসবে যোগ দিলেন। এই সময় বেলুড়ে মঠ নির্মাণের কাজও চলছে পুরোদমে। সারা বুল আর মিস ম্যাকলাউড বিবেকানন্দের দুই আমেরিকান শিষ্যা ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে এলেন। শিষ্যরা জানতে পারলেন আয়ার্ল্যান্ডের মার্গারেটও এসেছেন ভারতে। মার্চ মাসের গোড়ায় কলকাতার বিশিষ্ট জনেদের সঙ্গে মার্গারেটের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য স্টার থিয়েটারে সভা আয়োজন করা হয়েছিল। সেই স্বামীজি বললেন, ব্রিটেন আমাদের জন্য উপহার পাঠিয়েছে। এবার এল সেই দিন ১৮৯৮ সালের ২৫ মার্চ। দীক্ষা হল মার্গারেটের, স্বামীজি সেদিন মার্গারেটের নামকরণ করলেন নিবেদিতা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#diksha, #Sister Nivedita, #margaret nobel, #Swami Vivekananda

আরো দেখুন