বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

সম্প্রীতির রঙে রঙিন বাংলার দোল উৎসব

March 25, 2024 | 2 min read

সৌভিক রাজ 

কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এর মধ্যে অন্যতম প্রিয় উৎসবের নাম হল দোল। একে সম্প্রীতির উৎসবও বলা চলে। কেবল হিন্দুরাই নয়; ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা দোল খেলে। উর্দু সাহিত্যে হোলি ‘হোরি’ নামে পরিচিতি পায়। ১৮ শতকে বুল্লেহ শাহের লিখেছিলেন নামাজের সময় কোনভাবে রং খেলা যাবে না। নামাজ বাদ দিয়ে, বাকি সময় রঙ খেলা যাবে –
“হোরি খেলুঙ্গি, কাহ বিসমিল্লাহ।
নাম নবি কি রতন চারি,
বুন্দ পড়হি আল্লাহ আল্লাহ”

প্রাচীন আমলের নানান ইসলাম সাহিত্যে, মোঘল আমলের বিভিন্ন ছবিতে ছড়িয়ে আছে দোল খেলার দৃশ্য। কৃষ্ণের আমল থেকে দোলের আনন্দে মজেছিল ভারত। তখন দোল কেবল হিন্দুদের উৎসবই ছিল এটি। এরপর এদেশে ইসলাম শাসকদের আগমন ঘটে। কালের নিয়ম সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ঘটে। এখানকার রীতিকে আপন করে নেয় ইসলামীরা। ধীরে ধীরে দোল লৌকিক উৎসবের আকার ধারণ করে। সেই থেকেই আস্তে আস্তে দোল হয়ে ওঠে সকলের উৎসব।


সুফি সাধকদের কাছেও অনন্য মাত্রা পায় রঙের উৎসব। সুফি সাধক নিজামুদ্দিন আউলিয়া থেকে হিন্দুস্থানের তোতাপাখি আমীর খসরু; সকলের লেখায় ও সুফি সাধনার অঙ্গ রূপে ধরা দেয় রঙের উৎসব। মোঘল আমলে আকবর, জাহাঙ্গির, শাহজাহান—তিন বাদশাহের সময়তেই অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিল হোলি। প্রকৃত অর্থেই রঙ খেলা হয়ে উঠেছিল সামাজিক মিলনক্ষেত্র।

প্রথমবার ভারতে এসে রঙের উৎসব দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল বাবর। এমন সুন্দর উৎসব আগে দেখেননি তিনি; ঐতিহাসিক জাকাউল্লাহের বইতে সেই সময়ের কথা উল্লেখ রয়েছে। আকবরের আমল থেকেই মোঘল রাজপরিবারও দোল খেলায় অংশ নিতে শুরু করল। ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে নয়, লৌকিক উৎসব হিসেবেই দোলকে দেখেছিল তারা। রাস্তায় রাস্তায় রাখা থাকত চৌবাচ্চা; তাতে গোলা থাকত রং, থাকত পিচকারি। সময়ের বিভিন্ন চিত্রশিল্পীর মিনিয়েচার ছবি দেখলেই তা বোঝা যায়। স্বয়ং আকবর রঙ খেলার জন্য প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে আসতেন। প্রজাদের মধ্যেই আবির হাতে মিশে যেতেন। বর্ণনা উঠে এসেছে ‘তুজুক-ই-জাহাঙ্গিরি’তেও! প্রাসাদের ভেতরেই রঙের উৎসবে মাততেন জাহাঙ্গির আর নূরজাহান। এমনকি, দোল উপলক্ষ্যে গান বাজনার আসরও বসত সেখানে।

সৌন্দর্যপ্রিয় মোঘল সম্রাট শাহজাহানও ছিলেন হোলির প্রেমিক। তাঁর সময়ই হোলির নাম হয়েছিল ‘ঈদ-ই-গুলাবি’ আর ‘জশন-ই-আব-পাশি’। কিন্তু সম্প্রীতির হোলিতেও ভাটা পড়ে ঔরঙ্গজেবের আমলে। তারপর ফের বাহাদুর শাহ জাফরের আমল থেকে লাল কেল্লায় হোলি উদযাপন শুরু হয়।

কেবল দিল্লিই নয়; বাংলা, অযোধ্যা, লক্ষ্ণৌ প্রতিটি নবাবিতেই নানান আঙ্গিকে হোলি ধরা দেয়। পঞ্চদশ শতকে চৈতন্যদেবের সময় থেকে দোল খেলছে বাংলা। সুবে বাংলার নবাব সুজাউদদৌলা রোশনীবাগে হোলি খেলতেন, আলিবর্দি খাঁ, সিরাজদ্দৌলাও তাদের বেগমদের সঙ্গে দোল খেলায় মেতে উঠতেন। এদেশে কৃষ্ণের হোলি খেলা নিয়ে গান লেখেন কাজী নজরুল ইসলাম আর সেই গান গান মহম্মদ রফি। সম্প্রীতির আবেশে এইভাবেই বৈচিত্রের ভারতকে জুড়ে রেখেছে রঙ খেলা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Communal Harmony, #holi, #hhindu muslim

আরো দেখুন