বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

বাংলায় কীভাবে প্রচলন হল দোল উৎসবের? জেনে নিন অজানা ইতিহাস

March 25, 2024 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বসন্তের শুরু ঘোষিত হয় বসন্তপঞ্চমীর শুভ দিনে, দেবী সরস্বতীর বন্দনার মধ্যে। আর রঙিন এই ঋতুর রঙের বাহার পূর্ণতা পায় দোলের মাধ্যমে। দোলপূর্ণিমার ইতিহাস বহুকালের, উৎসবের দুই অংশের একটি পালনকর্তা বিষ্ণুর আর অন্যটি মহাদেব শিবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। আর পরমেশ্বরের দুই রূপের দুই ঘটনার উৎসবও চলে দুইদিন ব্যাপি।

দোল বা হোলি একই রকম মনে হলেও দুটো মূলত আলাদা অনুষ্ঠান। কোনো বছরই কিন্তু দোল এবং হোলি একই দিনে পড়ে না। দোল সম্পূর্ণ ভাবে আমাদের বাঙালিদের। আর হোলি অবাঙালি দের। বাঙালী মতে বসন্তের আগমনী বার্তা বহনকারী দোলযাত্রা। দোলের দিনটিতে আমরা জাত-পাত,ধর্ম,বর্ণ সব কিছুর ভেদাভেদ ভুলে নিজেকে ও নিজের প্রিয় মানুষগুলোকে রঙে রাঙিয়ে দিই।

পুরাণমতে দু’হাজার বছর আগে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন গোকুলে হোলি খেলার প্রচলন করেন । এই ইন্দ্রদ্যুম্ন কে ছিলেন তাঁর সঠিক পরিচয় পাওয়া যায় না কারণ ইতিহাসে একাধিক ইন্দ্রদ্যুম্নের নাম পাওয়া যায়।

এছাড়াও রঙ ও গুলাল নিয়ে মহোৎসবের কথা আছে জৈমিনির ‘পূর্ব মীমাংসা সূত্রে’।ভবভূতির ‘মালতি মালব’ নাটকে বসন্ত উৎসবের কথা আছে। সপ্তম শতাব্দীতে সম্রাট হর্ষবর্ধনের লেখা রত্নাবলী নাটকে আমরা হোলিখেলার দৃশ্য দেখতে পাই। সঠিক হোলিখেলা না হলেও কালিদাসের ‘ঋতুসংহার ‘ কাব্যে বসন্ত বর্ণনায় দেখা যায় যুবতী রমণীরা কুসুম রস , কৃষ্ণ চন্দন এবং কুঙ্কুম মিশ্রিত রঙে নিজেদের রঞ্জিত করছে । আবার আলবেরুণীর লেখাতেও আমরা ভারতবর্ষের হোলি উৎসবের বর্ণনা পাই ।

পশ্চিমবঙ্গে দোল উৎসব পালিত হয় পূর্ণিমার পুণ্যতিথিতে। কথিত আছে, এই পূর্ণিমা লগ্নেই জন্ম হয় চৈতন্য মহাপ্রভুর। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে দোল পূর্ণিমার আয়োজন একটি অন্যতম কারণ। কিন্তু মহাপ্রভুর সঙ্গে দোল পূর্ণিমার সম্পর্ক আসলে কোথায়? আসলে নবদ্বীপের বৈষ্ণব ধর্মের এই প্রবক্তার রাধা কৃষ্ণের প্রতি প্রেম ধর্মীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছিল আত্মিক পর্যায়ে। শ্রী হরির প্রতি তাঁর প্রেম ছিল জগৎবিখ্যাত। আর এই শ্রী হরি ছিলেন কৃষ্ণের এক অবতার।

কৃষ্ণ ব্যতীত কিন্তু আবার হোলি অসম্পূর্ণ। দ্বারকা, শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম লীলাভূমিতে কিন্তু হোলি পালন করা হয় প্রায় ১৬ দিন ধরে। বঙ্গদেশে কিন্তু প্রথমদিন দোল পূর্ণিমা, আর তারপরের দিনেই অনুষ্ঠিত হয় হোলি। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, রং খেলার এই উৎসবের প্রচলন হয়েছিল স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের হাত ধরেই। শ্রীরাধা এবং তাঁর গোপিনীদের সঙ্গে রং খেলা শুরু করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ এই তিথিতেই, তাঁর ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবেই। ভক্তকূলেও তাই এই রং খেলার প্রচলন প্রচুর জনপ্রিয়তা পায় এবং হোলি হয়ে ওঠে শ্রীকৃষ্ণের আধারে রং ও আবির খেলার দিন। বাড়িতে বাড়িতে দোল পূর্ণিমায় সত্যনারায়ণ পূজার আয়োজন করা হয় পরিবারের সকলের মঙ্গল কামনায়।

নারায়ণ, শ্রীকৃষ্ণের আর এক অবতারের পূজাতে উৎসর্গ করা হয় আবির। বিগ্রহকে শ্রদ্ধাভরে রং মাখিয়ে তারপর দু’দিন ধরে চলে রংকেলির এই বসন্ত উৎসব।

দোল পূর্ণিমা বা দোল যাত্রার নামকরণ নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে। দোল মানে কিন্তু এখানে বলা হচ্ছে দোলনার কথা, যে দোলনায় বসা রাধা কৃষ্ণের ছবি দেখতে আমরা অভ্যস্ত। রাধা এবং কৃষ্ণের ছবি বা বিগ্রহ পালকিতে করে বা ছোট ছোট দোলনায় চড়িয়ে, ফুল মালা সাজিয়ে ভক্তরা ভক্তি ভরে সেই নিয়ে এই পূর্ণিমার লগ্নে রাস্তায় বেরিয়ে পরেন। রথ যাত্রার মতো, দোলনায় চেপে যাত্রা করেন রাধা ও কৃষ্ণ। ভক্তিগীতির সঙ্গে সঙ্গে ভক্তদের দোলনায় দুলিয়ে দুলিয়ে নিয়ে এগোন রাধা কৃষ্ণের জুড়িকে। নাচ গানের সঙ্গে সঙ্গে নানা রঙের আবিরে রেঙে ওঠে চারপাশ। পথচলতি সকল ভক্ত এবং দর্শক হয়ে ওঠেন দোলপূর্ণিমায় দোলযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কালক্রমে দোল পূর্ণিমা, হোলি, বসন্তউৎসব একসঙ্গে মিলে মিশে হয়ে উঠেছে বারো মাসের তেরো পার্বণের আর একটি পার্বণে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #basanta utsav, #Dol Utsav

আরো দেখুন