রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

সকলের নজরে বিষ্ণুপুর কেন্দ্র, আকর্ষণের কেন্দ্রে ‘প্রাক্তনের’ মুখোমুখি লড়াই

March 29, 2024 | 2 min read

সকলের নজরে বিষ্ণুপুর কেন্দ্র

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: লোকসভা ভোটে এবার জমজমাট লড়াই বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে বিদায়ী সাংসদ তথা বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁর সঙ্গে ভোট যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল। আগামী ২৫ মে এই লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হবে। বিজেপি এবং তৃণমূল তো বটেই এই কেন্দ্রে বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিএম প্রার্থী হয়েছেন শীতল কৈবর্ত। বাম প্রার্থী এই ভোটযুদ্ধে থাকলেও প্রকৃত লড়াই সৌমিত্র বনাম সুজাতার মধ্যেই।

ওন্দা বাজারে গিরিশদার চায়ের দোকানে ভরদুপুরেও খদ্দেরের ভিড়। চা খেতে খেতে কয়েকজন গল্প করছেন। মেঝেতে বসে একমনে কয়লা ভাঙছিলেন এক মাঝবয়সি। নাম মনোরঞ্জন ঘোষ। পেশা, দুধ বিক্রি। দুধ দিতে এসে মাঝেমধ্যেই এভাবে দোকানদারকে সাহায্য করেন। ভোটের প্রসঙ্গ তোলায় সবাই মুখ চাওয়াচায়ি করেন। জবাব আসে মনোরঞ্জনবাবুর কাছ থেকে, ‘এদিকে বিজেপির হাওয়া।’ কারণ জানতে চাওয়ায় বলেন, ‘তৃণমূলকে কেন ভোট দেবে? চুরি করে, নিজেদের মধ্যে খেয়োখেয়ি করে। মানুষ বিরক্ত।’


মনোরঞ্জনবাবুর কথা শেষ হতে না হতেই এক যুবক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জানতে চান, ‘সাংবাদিক?’ সম্মতিসূচক উত্তর পেয়ে তিনি বলেন, ‘এভাবে মানুষের মন বুঝতে পারবেন না। যিনি যে দল করেন, তিনি সেই দিকে ঝোল টেনে কথা বলবেন। যেমন আমি বলব, এদিকে সিপিএম ভালো করবে।’

যুবকের নাম চন্দ্রশেখর রায়। ডিওয়াইএফ করেন। পরিচয় পেয়ে জানতে চাই, রামে যাওয়া ভোট কি বামে ফিরবে? চন্দ্রশেখর সামনে সাইকেলে বসা এক প্রৌঢ়কে দেখিয়ে বলেন, ‘উনি আমাদের নেতা। ওঁকে জিজ্ঞাসা করুন।’ প্রৌঢ়ের চেহারায় মাঠেঘাটে রাজনীতি করার ছাপ স্পষ্ট। বললেন, ‘ভোট এখন কর্পোরেট যুদ্ধ। তারা যেমন দেখাতে চাইছে, তেমনই দেখানো হচ্ছে। রাজনীতি হচ্ছে ধর্ম নিয়ে। খেটে খাওয়া মানুষের কথা বলছি একমাত্র আমরাই।’

দীর্ঘ আলোচনা শেষেও রামে যাওয়া ভোট বামে ফিরবে, এমন জোর শোনা গেল না কারও গলায়। আর এটাই বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা। বাম ভোটের জোরেই শুধু উনিশ নয়, একুশের ভোটে এই লোকসভার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিতেই জিতেছিল বিজেপি। শুধু জেতেনি, কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রে তারা ভোট বাড়িয়ে নিয়েছিল। তাতে তৃণমূল শিবির লোকসভার চেয়ে প্রায় ৭০ হাজার ভোট বেশি পেয়েও বিজেপির থেকে পিছিয়ে রয়েছে।

এটা অবশ্যই গেরুয়া শিবিরের প্লাস পয়েন্ট। আর মাইনাস পয়েন্ট হল বিজেপির দুই বিধায়কের তৃণমূলে যোগদান। বিষ্ণুপুরের তন্ময় ঘোষ এবং কোতুলপুরের হরকালী প্রতিহার এখন তৃণমূলে। তাতে কিছুটা হলেও অ্যাডভান্টেজে ঘাসফুল শিবির।

যদিও এই শিবির বদলকে পাত্তা দিতে নারাজ বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ। তাঁর দাবি, ‘ওঁরা তৃণমূলে গেলেও বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যেতে পারেননি। ফলে আমাদের কোনও ক্ষতি হবে না। বরং পঞ্চায়েত ভোটে পাত্রসায়র, জয়পুর, কোতুলপুর, ইন্দাসে
মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তার ক্ষোভের আঁচ লোকসভা ভোটে টের পাবে তৃণমূল।’

উল্লেখ্য আদালতের নির্দেশে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের ছ’টি বিধানসভা এলাকায় প্রচার করতে পারেননি সৌমিত্র। কেবলমাত্র বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ বিধানসভাতেই প্রচার করতে পেরেছিলেন তিনি। ফলস্বরূপ, বড়জোড়া, ওন্দা, বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর, ইন্দাস এবং সোনামুখী বিধানসভা এলাকায় সৌমিত্রের হয়ে জনতার কাছে ভোট চাইতে গিয়েছিলেন তাঁর তৎকালীন স্ত্রী সুজাতা। জয়ের পর সুজাতাকে দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনাও করেছিলেন সৌমিত্র। কিন্তু এ বারের ভোটে সেই সহযোদ্ধাই প্রতিপক্ষ।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Saumitra Khan, #Bishnupur, #sujata mondal, #Loksabha Election 2024, #Loksabha Elections

আরো দেখুন