দিল্লির রামলীলা ময়দানে INDIA জোটের গণতন্ত্র বাঁচানোর আহ্বান
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনকে ‘স্বৈরতন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে লোকসভা ভোটে তাঁর বিচারধারাকে হারানোর হাঁক দিলেন ‘ইন্ডিয়া’ (INDIA) জোটের নেতারা। লোকসভা ভোট শুরুর ঠিক ১৯ দিন আগে রোববার রাজধানী নয়াদিল্লির রামলীলা ময়দানে আয়োজিত বিশাল জনসভায় তাঁরা বললেন, দেশ এক কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি। সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে হাতিয়ার করে দেশকে বিরোধী দলশূন্য করার খেলায় মেতেছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি (BJP)। একজোট হয়ে এর মোকাবিলা করাই এখন সময়ের দাবি। না হলে দেশ রসাতলে যাবে।
বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার অভিযোগ তুলে এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে (Arvind Kejriwal) গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদে রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে ‘লোকতন্ত্র বাঁচাও’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’।
সমাবেশে রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) দাবি করলেন, ‘ম্যাচ-ফিক্সিং’ ছাড়া ৪০০ পার সম্ভব নয়। কংগ্রেস নেতার ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য, চারশোর বেশি আসন পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজে ‘আম্পেয়ার’ পছন্দ করেছেন। ঘুরিয়ে নির্বাচন কমিশনের ‘পক্ষপাতিত্ব’ এবং বিরোধী দলগুলির উপর সিবিআই, ইডির মত কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে চাপ তৈরির প্রসঙ্গ টানেন রাহুল।
এদিন কেজরীওয়াল-পত্নী সুনীতা কেজরীওয়াল (Sunita Kejriwal) প্রশ্ন তোলেন, কেজরীওয়ালকে জেলে ভরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঠিক কাজ করেছেন কি না। কেজরীওয়াল এক জন প্রকৃত দেশপ্রেমিক এবং সৎ ব্যক্তি কি না, বিজেপির দাবি মোতাবেক তাঁর ইস্তফা দেওয়া উচিত কি না, সেই সব প্রশ্নও তোলেন সুনীতা। তার পরই কেজরীওয়াল সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, “কেজরীওয়াল এক জন সিংহ। ওরা ওঁকে বেশ দিন জেলে রাখতে পারবে না।”
তৃণমূলের দূত হিসাবে এই সভায় বক্তব্য রাখেন দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন (Derek O’Brien)। পুলওয়ামা হামলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ডেরেক। এর পাশাপাশি দাবি করেন যে, এটা বিজেপির সঙ্গে ভারতীয় গণতন্ত্রের লড়াই। পুলওয়ামা প্রসঙ্গে ডেরেক বলেন, “আমরা চাই সত্যিটা সামনে আসুক। আমরা এই নিয়ে শ্বেতপত্র চাই।” মঞ্চের দু’টি ফাঁকা চেয়ারের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “আমরা দুটো আসন ফাঁকা রেখেছি। মাননীয় কেজরীওয়াল এবং মাননীয় সোরেন আপনারা আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন।” বিজেপির উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, “কর্মসংস্থান, মুদ্রাস্ফীতি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি রক্ষা করার নিরিখে মোদীর গ্যারান্টি আসলে জ়িরো ওয়ারেন্টি।”
ভোটে কারচুপির সন্দেহ প্রকাশ অবশ্য আরজেডির নেতা তেজস্বী যাদবও (Tejashwi Yadav) করেছেন। তাঁর কথায়, যেভাবে ওরা ৪০০ পারের কথা বলতে শুরু করেছে, তাতে ইভিএমে কারচুপি করবে বলে সন্দেহ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের এমন একজনও নেই, যার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ওরা করেনি। আমরা কিন্তু ভয় পাই না।’
সবার ভাষণ শেষ হলে প্রিয়াঙ্কা (Priyanka Gandhi Vadra) সবাইকে মনে করিয়ে দেন, রাবণের কাছে সব ছিল। রাজত্ব, অর্থ, লোকবল, শক্তি—সব। রামচন্দ্রের কাছে ছিল শুধু সত্য, সাহস ও ধৈর্য। লড়াইয়ে রামচন্দ্রেরই জয় হয়েছিল। রাবণের মতো মোদীর অহংকারও চুরচুর হয়ে ভেঙে পড়বে। এটাই রামলীলা ময়দানের বার্তা।
কারাবন্দী হেমন্ত সোরেনের স্ত্রী কল্পনাও (Kalpana Soren) তাঁর স্বামীর হয়ে জানিয়ে দেন, ভগবান রামচন্দ্র চিরকাল নীতির কথা বলেছেন। ইন্ডিয়া জোট সেই নীতি প্রতিষ্ঠা করবে। ঝাড়খন্ড মাথা নোয়াবে না। ইন্ডিয়া মাথা ঝোঁকাবে না।
মেহবুবা মুফতি (Mehbooba Mufti) বলেন, স্বৈরতন্ত্রের স্বরূপ দেখতে হলে কাশ্মীরে আসতে হবে। আইন কী, কানুন কী, গণতন্ত্র কী—আমরা জানি না। জম্মু-কাশ্মীর বিজেপির স্বৈরাচার ও যথেচ্ছাচারের গবেষণাগার।
জম্মু-কাশ্মীর থেকে এসেছিলেন ফারুক আবদুল্লাহ, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী বলবন্ত সিং মান, এনসিপির শারদ পাওয়ার, শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে ও সঞ্জয় রাউত, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, সিপিআইয়ের ডি রাজা, সিপিআইএমএলের দীপংকর ভট্টাচার্য এবং দিল্লির আম আদমি পার্টির মন্ত্রীরা। মঞ্চে বিশাল ব্যানারে লেখা ছিল ‘স্বৈরতন্ত্র হটাও, গণতন্ত্র বাঁচাও’।