বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

বাংলায় সন্তানের মঙ্গল কামনায় পালিত এক উৎসব – নীল পুজো

April 12, 2024 | 2 min read

নীল পুজো, ছবি সৌজন্যে- এই সময়

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বন, ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র ব্রত। তার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি ব্রত হল নীল ষষ্ঠী। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন সন্তানবতি জননী নির্জলা উপবাসের এই ব্রত পালন করেন। সন্ধ্যা বেলায় শিবের মাথায় জল এবং নীলের ঘরে বাতি দিয়ে উপবাস ভঙ্গ করেন। নীলকণ্ঠ অর্থাৎ নীল এবং নীলচন্ডিকা অর্থাৎ শিব-দুর্গার বিয়ের দিনকে মাথায় রেখে এই ব্রত উদযাপন করা হয়।

‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’, সন্তানের মঙ্গলকামনা করার উৎসবই নীল ষষ্ঠী। অনেকে একে নীল পুজোও বলে থাকেন। গ্রাম বাংলায় এখনও শিব-দুর্গা সেজে নীলের গান গেয়ে (অষ্টক গান) বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করতে দেখা যায় নীলসন্ন্যাসীদের। অনেকে নিম বা বেল কাঠ দিয়ে তৈরি করেন নীলের মূর্তি। সেই মূর্তি সাজিয়ে শুরু হয় উৎসব। পরনে লাল কাপড়, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, হাতে ত্রিশূল নিয়ে নীলসন্ন্যাসীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান। তাদের সঙ্গে যোগ দেন শিব-দুর্গা বেশের সঙরা। গৃহস্থ মহিলারা, গর্ভবতী সন্তানসম্ভবা নারীরা নীলের মিছিল দেখলেই তাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে আনেন। নীলের মাথায় তেল-সিঁদুর লেপে শুরু হয় পুজো। তারপরই নীলের গানে মেতে ওঠেন নীলসন্ন্যাসীরা।

‘শুন সবে মন দিয়ে হইবে শিবের বিয়ে
কৈলাসেতে হবে অধিবাস।
(ও) তাতে নারদ করে আনাগোনা কৈলাসে বিয়ার ঘটনা
বাজে কাঁসী বাঁশী, মোহন বাঁশরী।

(ও) নারদ চললো গিরি রাজের গৃহেতে।।
আর ওই শিব কয় কৈলাসে যেয়ে, দেখে এসেছি মেয়ে
শীঘ্র করো বিয়ের আয়োজন।’

এই রকম নানান গান এখনও নীল-ষষ্ঠীর দিন শোনা যায় গ্রাম বাংলায়।

নীল-ষষ্ঠী নিয়ে এক কিংবদন্তির প্রচলন রয়েছে, বহু কাল আগের এক উপাখ্যান। কোনও এক গ্রামে বাস করত এক ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী। তাঁদের সন্তান ভাগ্য অত্যন্ত খারাপ। ছেলেমেয়ে জন্মালেই অল্প কিছু দিনের মধ্যেই মারা যেত। অনেক বার-ব্রত করেও কোনও ফল না হওয়ায় তারা সব ছেড়ে কাশী চলে যাবেন বলে মনস্থির করলেন।

একদিন নানান তীর্থ ঘুরতে ঘুরতে কাশীর গঙ্গা ঘাটে বসে তাঁরা দু’জনে যখন দুঃখ করছেন, তখন মা ষষ্ঠী বৃদ্ধার বেশে এসে তাঁদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘হ্যাঁ গা, তোরা কাঁদছিস কেন?’ মনের দুঃখে ব্রাহ্মণী জানায়, ‘আমাদের সব সন্তান মারা গেছে। কেউ বেঁচে নেই। অনেক পুজো করেও ফল মেলেনি। তুমি বলো এখন কী করি?’ সব শুনে বৃদ্ধা বলেন, ‘এ সব হয়েছে তোমাদের অহঙ্কারের জন্য। শুধু বার-ব্রত করলেই হয় না। ভগবানে বিশ্বাস থাকা চাই। মন দিয়ে তাঁকে ডাকতে হবে।’

ব্রাহ্মণী তখন তাঁর পা ধরে বললেন, “কে তুমি, বল মা।” বৃদ্ধা বললেন, “আমিই মা ষষ্ঠী। শোন, এই চৈত্র মাসে সন্ন্যাস নিবি এবং সেই সঙ্গে শিব পুজো করবি। সংক্রান্তির আগের দিন উপবাস করে নীলাবতীর পুজো করে নীলকন্ঠ শিবের ঘরে বাতি জ্বেলে দিবি। আর তারপর আমাকে প্রণাম করে জল খাবি। একে বলে নীল ষষ্ঠী।” মা ষষ্ঠী এই কথা বলেই অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

এরপর দেশে ফিরে ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী নীলের দিন খুব ভক্তি-নিষ্ঠার সঙ্গে নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করেন। তার কিছু দিন পরেই তাঁদের ছেলে জন্মায়, সে দীর্ঘায়ু হয়। নীল ষষ্ঠী ব্রতের এই মাহাত্ম্য দেখে দেশে সবাই এই ব্রত পালন করতে আরম্ভ করে। আজও তা চলে আসছে। এই ব্রত পালন করে মায়েরা মনে করেন, তাদের সন্তান নীরোগ এবং দীর্ঘজীবী হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Nil Sasthi

আরো দেখুন