এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শিবলিঙ্গ কোথায় জানেন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র শৈবক্ষেত্র। পূর্বভারতের অন্যতম বৃহত্তম শিবলিঙ্গ রয়েছে শিবনিবাসের রাজরাজেশ্বরী মন্দিরে। কষ্টি পাথরের তৈরি শিবলিঙ্গটির উচ্চতা নয় ফুট এবং ব্যাস প্রায় একুশ ফুট। ভক্ত ও মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি, এটিই এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শিবলিঙ্গ। ১৭৫৪ সালে কৃষ্ণনগরের মহারাজ রাজেন্দ্র কৃষ্ণচন্দ্র রায় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরের পাশেই রাজ্ঞীশ্বর মন্দির, সেখানে শিবলিঙ্গটি তুলনায় ছোট, উচ্চতায় সাত ফুট। রাজরাজেশ্বরী মন্দির তৈরির কিছুকাল পর ১৭৬২ সালে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে। রাজরাজেশ্বর শিব মন্দিরটি বয়সে পুরনো হওয়ার কারণে স্থানীয়রা একে বুড়োশিব নামে ডাকেন। শিবনিবাসে ভীম একাদশী থেকে শিবরাত্রি পর্যন্ত বড় করে মেলা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস বাবা তখন সবচেয়ে বেশি জাগ্রত থাকেন এবং সকল মনস্কামনা পূরণ করেন। এছাড়াও শিবনিবাসে গাজনের মেলা অনুষ্ঠিত হয়, দূর-দূরান্ত থেকে সন্ন্যাসীরা আসেন।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, শিবনিবাস অঞ্চলে নসরৎ খাঁ নামে এক ডাকাতের দাপট ছিল। তার আরাধ্য দেবতা ছিলেন স্বয়ং মহাদেব। নসরৎ খাঁর হাত থেকে প্রজাদের বাঁচাতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কৌশল অবলম্বন করেন। ডাকাতের আরাধ্য দেবতা শিবের উদ্দেশ্যে তিনি শিবনিবাস নির্মাণ করেন। একটি খালও খনন করেন তিনি। কথিত আছে, এই খালটিই নাকি পরবর্তীতে চূর্ণী নদী নামে পরিচিতি পায়। যদিও এটি জনশ্রুতি মাত্র, এই মত গ্রহণযোগ্য নয়। পদ্মা থেকে উৎপন্ন মাথাভাঙ্গার দুটি শাখার, একটি শাখা চূর্ণী নামে শিবনিবাসের কাছে প্রবাহিত। শিবনিবাস পৌঁছতে হলে এই নদীর ওপরের বাঁশের ছোটো সাঁকো পেরিয়ে আসতে হয়। শিবনাথ শাস্ত্রীর রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন-বঙ্গসমাজ বইয়ের তথ্য বলছে, ১৭৪০ সালে নবাব আলিবর্দ্দী খাঁর আমলে বাংলায় বর্গী আক্রমণের শুরু। নিরাপদ স্থানের উদ্দেশ্যে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কৃষ্ণনগর থেকে ছয় ক্রোশ দূরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন এবং পুত্র শিবচন্দ্রের নামানুসারে জায়গাটির নাম দেন শিবনিবাস। ওই স্থানেই তিনি রাজপ্রাসাদ, দেবালয় গড়েন। একটি সুরক্ষিত নগর গড়ে তোলেন।
অন্য একটি কিংবদন্তি মতে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কাশীর শিবের স্বপ্নাদেশ পান যে, মহাদেব কাশী ছেড়ে কৃষ্ণচন্দ্রের হাতে পুজো পেতে চান। সেই আদেশেই কৃষ্ণচন্দ্র একশো আটটি শিবমন্দির স্থাপন করেন। যার অধিকাংশই কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে। শ্রী শশিভূষণ বিদ্যালঙ্কার সঙ্কলিত জীবনীকোষের দ্বিতীয় খন্ডে অনুযায়ী, শিবনিবাস প্রতিষ্ঠার পর কাশী ও কাঞ্চী থেকে আগত ব্রাক্ষ্মণদের উপস্থিতিতে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র অগ্নিহোত্র বাজপেয় যজ্ঞ করেন এবং ব্রাক্ষ্মণরা মহারাজকে অগ্নিহোত্রী বাজপেয়ী উপাধিতে ভূষিত করেন। এই কারণে শিবনিবাস কাশীর সমতুল্য, তাই একে বাংলার কাশী বলা হয়। এখানেই রয়েছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও পূর্ব ভারতের বৃহত্তম শিব, এমনটাই দাবি করা হয়। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই সিকিমের মেলি ও জোরেথাঙের মাঝে ১০৮ ফুটের বিশালাকার এক শিব মূর্তি তৈরি করা হয়েছে।