পয়লা বৈশাখ: বইপাড়ার সেকাল-একাল
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: পয়লা বৈশাখ মানেই উৎসব, সেই উৎসবের ঢেউ পৌঁছত বইপাড়াতেও। আজও নববর্ষের আড্ডা জমে কলেজ পাড়ায়। সেকালের বইপাড়া আজকের মতো ছিল না। কলেজ স্ট্রিটে ট্রাম লাইনের রাস্তার দু-ধারে ছিল প্রকাশনাগুলোর দপ্তর এবং বিপণন কেন্দ্র। শ্যামাচরণ দে স্ট্রিট, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটে তখন বড় বইয়ের দোকান ছিল নামমাত্র। কলেজ স্কোয়ারের পূর্বদিকেও কিছু বইয়ের দোকান ছিল। কলেজ স্কোয়ারের চারধারে সে সময় স্টল ছিল না। পুরনো বইয়ের কিছু দোকান ছিল। প্রেসিডেন্সি কলেজের রেলিংয়ে রেখে এবং সামনে ফুটপাথে পুরনো বই বিক্রি হত। নববর্ষের দিন বইপাড়ার ছবিটা বদলে যেত। দোকান-ঘরগুলো পরিষ্কার করা হত। বইয়ের দোকানে দোকানে নতুন খাতার পত্তনসহ গণেশ পুজো করা হত। দোকানগুলোর দরজায় আমপাতা, সোলার কদমফুল দিয়ে সাজানো হত। নতুন খাতা নিয়ে বইয়ের দোকানের মালিকরা কালীঘাট, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি বা দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিতে যেতেন।
সন্ধেবেলা থেকে ক্রেতাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হত। মিষ্টি, নোনতা খাবারের ব্যবস্থা থাকত। পয়লা বৈশাখের বইপাড়ায় এম. সি. সরকার অ্যান্ড সন্স এবং মিত্র-ঘোষ পাবলিশার্সের আড্ডার খ্যাতি ছিল চরম। এম. সি. সরকারে কর্ণধার সুধীর সরকার হতেন মধ্যমণি, আশেপাশে থাকতেন প্রবীণ লেখকরা। এই আড্ডার নাম ছিল হাউস অব লর্ডস। অন্যদিকে, মিত্র-ঘোষের গজেন্দ্রকুমার মিত্র ও সুমথনাথ ঘোষের আড্ডায় নবীন সাহিত্যিকরা আসতেন। বইপাড়ার এই আড্ডার পোশাকি নাম হয়েগিয়েছিল হাউস অব কমনস্। নববর্ষের দিন অন্য চেহারা নিত গোটা বইপাড়া। নববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রচুর বই প্রকাশিত হত। চৈত্র মাসজুড়েই নতুন বইপ্রকাশের প্রস্তুতি চলত।
লীলা মজুমদার, তাঁর ‘খেরোর খাতা’-তে বইপাড়ার নববর্ষের বর্ণনা দিয়েছেন। ডাবের জল আর সুগার ফ্রি সন্দেশ সহযোগে লেখকদের আপ্যায়ণের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। ক্ষীরের সন্দেশ দেওয়া হত। ছাড় দিয়ে বই বিক্রির রেওয়াজ স্টল ছিল। প্রকাশনাগুলির তরফে নতুন বইয়ের ক্যাটালগ গোছের লিস্ট বিতরণ করা হত। শরবত পানীয়, সন্দেশ দেওয়া হত লেখকদের। পাঠকরাও আসতেন।
আজও নববর্ষে বিভিন্ন প্রকাশনী বৈশাখী আড্ডার আয়োজন করে। লেখক-পাঠকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। মিষ্টিমুখ চলে। বইয়ের উপর বিশেষ ছাড় দেওয়া হয় নানান প্রকাশনা তরফে। কয়েক বছর ধরে কলেজ স্কোয়ারে নববর্ষের বইমেলা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আজও ঐতিহ্য বেঁচে আছে কলেজ স্ট্রিটে।