BJP এবার পগার পার হবে, মালদহের জোড়া সভা থেকে প্রসূন, শাহনওয়াজদের জেতানোর আর্জি মমতার
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে শনিবার মালদহে জোড়া সভা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মালদহ উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Prasun Banerjee) সমর্থনে গাজোলের মহাবিদ্যালয়ের মাঠে জনসভা করেন তিনি। পাশাপাশি মানিকচকে মালদহ দক্ষিণের (Malda South) প্রার্থী শাহনওয়াজ আলি রেহাইনের (Shahnawaz Ali Raihan) সমর্থনে দিনের দ্বিতীয় সভাটি করেন মমতা। উল্লেখ্য, এই দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে তৃতীয় দফায়, আগামী ৭।
মালদহবাসীর কাছে মমতার আর্জি, ‘‘প্রসূনকে ভোটটা দিয়ে দেখুন। ও এখানে আপনাদের জন্য পড়ে থাকবে। আপনাদের কথা বলবে। ওকে ভোট দিয়ে দেখুন। আমার আর এক প্রার্থী আছেন শাহনওয়াজ ভাই। ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নামী ছাত্র। সব ছেড়ে এখানে এসেছেন মালদহের মানুষকে ভালবেসে।’’
সাত দফা ভোট নিয়ে এদিনও এক হাত নেন মমতা, নির্বাচন কমিশন ও বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ করে মমতা বললেন, ‘‘কাঠফাটা রোদ। প্রতি বার এই সময়ে ভোট ফেলা হয়। অন্যান্য বার মে মাসের মধ্যে ভোট শেষ হয়ে যায়। এ বার জুন অবধি চলবে। কাকে সুবিধা করিয়ে দেওয়ার জন্য? বিজেপি আসলে মানুষের কষ্ট বোঝে না। ওরা সারা দেশে ঘুরে বেড়াবে, পার্টির হয়ে প্রচার করবে। আমাদের হোটেল ভাড়া করে থাকতে হয়। মোদী প্লেন ব্যবহার করেন। সব সুবিধা নেন।’’
এরপরই বিজেপির (BJP) বিরুদ্ধে ঝাঁঝ বাড়িয়ে আক্রমণ শুরু করেন তৃণমূল নেত্রী। গাজোলের সভা থেকে মালদহের বিজেপি প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ খগেন মুর্মুকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘খগেনবাবু, আপনাকে ভোট দিতাম যদি আপনি বাংলার হয়ে আওয়াজ তুলতেন। কেন ১০০ দিনের কাজ বন্ধ? কেন সংসদে প্রশ্ন তোলেননি? আপনি কোথায় ছিলেন? কংগ্রেস কোথায় ছিল?’’
বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ওদের বড় সাহস! বলছে লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে দেবে। মনে রাখবেন, সাহস ভাল, কিন্তু দুঃসাহস ভাল নয়। ১০০ দিনের কাজের টাকা ওরা দেয়নি। আটকে রেখেছে। কিন্তু বাংলা ভিক্ষা চাইবে না। যত বেশি সাংসদ তৃণমূল পানে, তত বেশি দিল্লি থেকে কাজ করতে পারব। বাংলার প্রাপ্য আদায় করবে। প্রকল্প চালু হয়েছে— কর্মশ্রী। এর মাধ্যমে জব কার্ড হোল্ডারদের ৫০ দিনের কাজের গ্যারান্টি দেওয়া হচ্ছে। কেউ চাইলে ৬০ দিনও করতে পারেন।
মানিকচকে এদিন তৃণমূল নেত্রী বলেন, একটাই নেতা থাকবে দেশে। বাকি দেশটাকে জেলখানায় পরিণত করবেন তিনি, আপনারা কি তাই চান? তা হলে দেশটাকে বাঁচান। আরও বলেন, ‘‘বিজেপিকে ভোট দিলে জানবেন, ওরা আর নির্বাচনই হতে দেবে না। তাই ওদের ভোট দেবেন না। বিজেপির মুখের ভাষা জঘন্য আর সিপিএম তো নগণ্য। আর বাম-কংগ্রেস নিজেরা নিজেদের কাছেই বরেণ্য। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।’’
জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সিআরপিএফ নিয়ে এসে যদি ওরা বলে, তবে কি ভোট দিতে যাবেন না? ভোট অবশ্যই দেবেন। মা-বোনেরা দরকার হলে রান্না পরে করবেন। সকাল সকাল ভোট দিয়ে আসবেন। কারণ ভোটদান পবিত্র কর্তব্য।
আপনারা ভয় পাবেন না, ইডি-সিবিআইকে নিয়ে ভয় পাবেন না। বিজেপি ভারতের ক্ষমতায় আসছে না। পরিযায়ী শ্রমিকেরাও ভোট দিয়ে যাবেন। যাতে আপনাদের নাম বাদ দিতে না পারে। আশ্বাস দেন, “আমি কথা দিচ্ছি, সিএএ, এনআরসি এখানে করতে দেব না। এটা হলে সকলে পরিচয়, নাগরিকত্ব হারাবেন। মাছ, মাংস, ডিম খেতে বারণ করছে ওরা। কে কী খাবে নিজের ব্যাপার। কেন ধমকাবেন আপনারা?’’
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষাকে ‘ভুয়ো’ বললেন মমতা (Mamata Banerjee)। তিনি বললেন, ‘‘কোনও সমীক্ষা বিশ্বাস করবেন না। সব বিজেপি টাকা দিয়ে করিয়েছে। বিধানসভায় ২০০টি ভোট পাবে বলেছিল। পায়নি। এ বারও পাবে না।” মোদী-শাহের চারশো পারকে কটাক্ষ করে বলেন, “বিজেপি বলছে ৪০০ পার করবে! কোথায় পাবে এত ভোট? বিজেপি কেরালায় ভোট পাবে না। বিজেপি তামিলনাড়ুতে ভোট পাবে না। গত বার সব ভোট পেয়ে ৩০৩ হয়েছিল। ৪০০ কী করে হবে। ও রকম ওরা বলে। ২০২১ সালে বলেছিল বাংলায় ২০০ পার করবে। ১০০ পার করতে পেরেছিল? ৮০ পার করতে পেরেছিল? যে ৭৭টা পেয়েছিল, তার মধ্যে ১০ জন আমাদের সঙ্গে চলে এসেছিল। এ বারও একই অবস্থা হবে। ৪০০ পার নয়, ওরা পগার পার হবে।’’
‘ইন্ডিয়া’ নিয়ে মমতার বক্তব্য, ‘‘বাংলায় ‘ইন্ডিয়া’ নেই। আমি ওই জোট তৈরি করেছিলাম। কিন্তু এখানে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস ভাই ভাই। এখানে ওদের কাউকে ভোট দেবেন না।’’ মমতা বললেন, ‘‘কংগ্রেস যেখানে যেখানে লড়াই করছে ভাল করে লড়াই করুক, পুরো মদত দেব। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কাটতে আসবে না। বিজেপির বিরুদ্ধে যদি কোনও দল কাজ করে, তবে সেটা কংগ্রস বা সিপিএম নয়। সেটা তৃণমূল।”