দিল্লিতে বদলের ডাক দিয়ে মালদহের দুই আসনে জোড়াফুলের জয় চাইছেন মমতা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মঙ্গলবার ভোট প্রচারে মালদহে জোড়া কর্মসূচি ছিল তৃণমূল সুপ্রিমোর। মালদহ উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে তিনি প্রচার করেন। মালদহ (Malda) দক্ষিণ কেন্দ্রে রোড-শো করেম তৃণমূল প্রার্থী শাহনওয়াজ আলি রাইহানের সমর্থনে। মালদহ উত্তর এবং দক্ষিণ আসনে জয় আজও অধরা তৃণমূলের। এবারের নির্বাচনে এই দুই আসনেই জয় চাইছেন মমতা।
এদিন এনআরসি, সিএএ-র বিরুদ্ধে সরব হন মমতা। বলেন, “কেউ মাকে মা বলে, কেউ আম্মা, কেউ মাদার। আদতে মা একই থাকে। তা-হলে কেন দাঙ্গা নিয়ে সুড়সুড়ি দেওয়া হবে। কেন এনআরসি, সিএএ হবে? ইতিহাস কেন ভুলিয়ে দেওয়া হবে? কেন নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজিকে ভুলিয়ে দেওয়া হবে? যদি এনআরসি, সিএএ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আটকাতে চান, বিজেপিকে আটকাতে হবে। নাগরিক অধিকার চাইলে ওদের হারাতে হবে। তফশিলী, জনজাতি, হিন্দু, মুসলমান— কারও কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। সকলতে ঘাড় ধরে বার করে দেবে।” দূরদর্শনকেও গেরুয়া করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা।
এরপরই বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়ে মমতা (Mamata Banerjee) বলেন, “একটা হিন্দু ধর্মের আমদানি করেছে। ওরাই নাকি সব। যখন স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছিল, ওরা জন্মায়নি। আমরা যেন হিন্দু নই। এই তো দুর্গাপুজো আসছে। ঈদ চলে গেল। আমরা করি না? দুর্গা, শিব, সরস্বতী, রক্ষাকালী, শীতলার পুজো করি না? আমাদের হিন্দুধর্ম শেখাচ্ছেন? ইতিহাসের ছাত্র-ছাত্রীরা জানেন, তপোবন থেকে হিন্দু ধর্মের উদ্বোধন হয়েছিল। চার বেদ। যে কথা রামকৃষ্ণ বলেছেন, সে কথা নেতাজি বলেছেন। কথা হয়ত একটু অন্য ভাবে হতে পারে। কিন্তু আদতে এক।”
মোদী আমলে এজেন্সি রাজ ও বিরোধীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ নিয়েও বিজেপিকে নিশানা করে বলেন বলেন, “বিরোধীদের কণ্ঠরুদ্ধ করতে চায়। সব এজেন্সি কিনে নিয়েছে। বিচারের শেষ জায়গাও কিনতে চাইছে। এই অবস্থায় যদি বিজেপিকে না পাল্টান, সংখ্যালঘু ভাই-বোনেরা নিজেদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি করে কিছু তৃণমূল এবং কিছু কংগ্রেসকে দেওয়ার চেষ্টা করেন, ভারতবর্ষ বাঁচবে না।”
দিল্লিতে বদলের ডাক দিচ্ছেন তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো। তিনি বলেন, “দিল্লিতে পরিবর্তন দরকার। সেখানে হাজার টাকার গ্যাস। ঘরে ঘরে গ্যাস, কিন্তু তার এত দাম যে মানুষ ছুঁতে পারে না। সব ওষুধের দাম বেড়েছে। খোঁজ রাখেন? ডায়বেটিস, হার্ট, অ্যান্টিবায়োটিক, সব ওষুধের দাম বেড়েছে। রমজানে আমরা সুফল দিয়ে কম দামে ফল বিক্রি করি। মা ক্যান্টিনে ৫ টাকায় ডাল, ভাত, তরকারি, ডিম দিই।”
বাংলার প্রতি মোদী সরকারের (Modi Govt) বঞ্চনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দিল্লির সরকার ১০ বছর ধরে বাংলাকে অবহেলা, বঞ্চনা করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আজ আপনাদের মতামত জানানোর দিন। মতামতা দান খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। ওদের লজ্জা নেই, ঘৃণা নেই। অমিতবাবু মহাশয় মেমারিতে এসে বলে গেলেন, রাজ্য ২ লক্ষ ৩২ হাজার টাকার হিসাব দেয়নি। আগের সভায় চাঁচলে বলে এলাম, কোনও ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দেওয়া বাকি নেই। ক্ষমা চাইতে হবে, নয়ত জনগণের সামনে নাকে খত দিতে হবে। সিএজি রিপোর্টে বলা রয়েছে, ৪.১ ধারায়, ৩২টি দফতর ৫২ হাজার কোটি টাকা ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দিতে পারেনি।”
বিজেপিকে নিশানা করে তিনি বলেন, “সাধুরা গেরুয়া পরে। আজ গেরুয়া পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে চোর, ডাকাত, মাফিয়া। এদের মনুষ্যত্বের দাম নেই। ওরা একটাই কথা জানে, যত পারো, মিথ্যে বলে যাও। ভাবে এ ভাবেই মিথ্যে এক দিন সত্যি হবে। মনে রাখবেন তাই, আপনার এক ভোটের মূল্য অনেক বেশি। কোটিপতির যা ভোটের দাম, সাধারণ মানুষেরও তা-ই ভোটের দাম।গুজরাতে দাঙ্গায় হাতে রক্ত মেখেছে। হাথরস, গুজরাতের নির্যাতিতা বিচার পায়নি। কুস্তিগীর সাক্ষীর উপর অত্যাচার করা হয়েছে। যে অত্যাচার করলেন, তাঁকে নেতা বানিয়ে দিল। বিজেপিকে হরিয়ানায় ঢুকতে দিচ্ছে না।”
চাকরি বাতিল নিয়েও বিজেপিকে একহাত নেন মমতা। শুভেন্দুর নাম উল্লেখ না করে বলেন, “আমরা যাঁদের চাকরি দিচ্ছি, তাঁদের চাকরি খেয়ে নিচ্ছে। খেয়ে উল্লাসিত হয়ে বলছে, বোমা ফাটাব। ঘুঁটে পরে গোবর হাসে। আমরা বলি মেঘ দেখে করিসনে ভয়। আড়ালে সূর্য হাসে। আজ যাঁরা অন্যে চাকরি গেলে খুশি হন, তাঁরা কি ভাবেন, তাঁদের বাড়ির লোকের চাকরি গেলে কী হত? কোটি কোটি টাকা করে বিজেপিতে গিয়েছে। কালো টাকা সাদা করছে। জিনিসের দাম বাড়ছে, বিজেপি হাসছে। চাকরি যাচ্ছে, বোমা ফাটাচ্ছে। বিজেপি কাঁদবে।”
মোদীকে এদিনও খোঁচা দিতে ছাড়েননি বাংলার দিদি, তিনি বলেন, “অটলবিহারীজি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন স্লোগান উঠেছিল, ইন্ডিয়া ইস সাইনিং। ভারত উজ্জ্বল হচ্ছে। এই ভওটে বিজেপির, মোদীবাবুর স্লোগান হল, মোদীবাবুর গ্যারান্টি। গ্যারান্টি কী? দেশ বিক্রি করেছে।” মূল্য বৃদ্ধি নিয়েও আক্রমণ করেন, “জিনিসের দাম এত বেড়েছে। সেই নিয়ে কি মোদীবাবু মাথা ঘামাচ্ছেন? দিল্লিকে জিজ্ঞেস করুন।”
মোদী আমলে সংবিধানকে টুকরো টুকরো করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, “গান্ধীজিকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুভাষচন্দ্র বোসের জন্মদিনে আজও জাতীয় দিবস ঘোষণা করেনি। বিদ্যাসাগর, বিরসা মুণ্ডা, বঙ্কিমচন্দ্র, রামমোহন রায়, যত নাম নেবেন, তাঁরা দেশের নবজাগরণ এনেছেন। বাংলা থেকে শুরু হয়েছে। বাংলা এক সময় অবিভক্ত ভারতের রাজধানী ছিল। এখান থেকে গান্ধীজি, নেতাজি, মাতঙ্গিনী আন্দোলোন শুরু করেছেন। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত, জনগণমন অধিনায়ক। কার লেখা? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। নেতাজি স্লোগান তুলেছিলেন জয় হিন্দ। আজ সারা পৃথিবী বলে। বন্দে মাতরম কার লেখা? বঙ্কিমচন্দ্রের। বাংলার সঙ্গে বিজেপির মেলে না। এখানে প্রত্যেক জায়গার আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। মালদহে আম, বর্ধমানে মিহিদানা, সীতাভোগ, বীরভূমে তারাপীঠ। সবটাই বাংলা। আজ পৃথিবীতে যান, সকলে বলছেন, ভারতে কী চলছে। আমার লজ্জা করে। আমি দেশভক্ত। ভারতীয় হিসাবে গর্বিত আমি।”