হচ্ছে টা কী? বিভাগে ফিরে যান

পাগল থেকে অসুর, প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রীর ঝাঁঝালো বাকযুদ্ধে সরগরম বিষ্ণুপুরের লড়াই

May 2, 2024 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সাংসারিক লড়াই, কোর্ট রুমে সওয়াল-জবাবের পর এবার বঙ্গে ভোটের লড়াইতে মুখোমুখি প্রাক্তন দম্পতি সুজাতা ও সৌমিত্র। বিষ্ণুপুর লোকসভা আসনে সুজাতাকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল, ওই আসনে বিদায়ী সাংসদকে ফের টিকিট দিয়েছে বিজেপি।

প্রার্থী না হয়েও ২০১৯-শের লোকসভা ভোটে বিষ্ণুপুরে বিজেপির মুখ ছিলেন সুজাতা। প্রাক্তন স্বামী বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্রকে জিতিয়েও এনেছিলেন। এবার প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১১ সালে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে প্রথম বিধানসভায় পা রাখেন সৌমিত্র খাঁ। তৃণমূলে যোগ দিয়ে ২০১৪ সালে সাংসদ হন। তৃণমূল ছেড়ে সৌমিত্র বিজেপিতে যোগ দেন। সাংসদ নির্বাচিত হন। উনিশের নির্বাচনের সময় বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন থানায় মামলা থাকার কারণে, সৌমিত্রর জেলায় ঢোকার ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা ছিল। তখন তাঁর হয়ে প্রচার করেন স্ত্রী সুজাতা। কার্যত স্বামীর জয় ছিনিয়ে আনেন তিনিই। অনেকেই মনে করেন বিষ্ণুপুর আসনে বিজেপি বা সৌমিত্রর জয় হয়নি, জয় হয়েছিল সুজাতার। কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁদের দাম্পত্য জীবনে ইতি পড়ে। ২০২৩-এ বাঁকুড়া আদালতে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তার আগেই সুজাতা তৃণমূলে যোগ দিয়ে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে আরামবাগ থেকে প্রার্থী হন। পরাজিত হন কিন্তু দলের হয়ে কাজ করছিলেন। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়পুর থেকে জেলা পরিষদের আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। এখন তিনি বাঁকুড়া জেলা পরিষদের প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ।

প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রী এর আগে বারবার বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন, সন্মুখ সমরে নামার পর দু’তরফেই ঝাঁঝ যেন বেড়ে গিয়েছে। টিকিট পেয়ে সুজাতা বলেন, “আমি প্রতি মুহূর্তে লড়াই করি। তাই আলাদা করে কিছু বলার নেই। আমার প্রতিপক্ষ কোনও কাজ করেনি। গত ১০ বছরে কোনও কাজ করেননি। করলে একটা কাজ প্রমাণ-সহ দেখান। মানুষ তাঁকে কতদিন পাশে পেয়েছেন? উনি ফোন ধরেন না। কাকে প্রতিপক্ষ ভাবব যে কাজ করেননি?”

সৌমিত্রর পাল্টা দাবি ছিল, “রাজনৈতিক মহলের কেউ ভোটে দাঁড়ালে ভালো লড়াই হত।”

ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের লড়াই। এক্তেশ্বর শিব মন্দিরে পুজো দিয়ে ত্রিশূল হাতে বিষ্ণুপুরের ‘অসুর’ বধের কথা বলেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা। সুজাতা মণ্ডল বলেছিলেন, “আমরা ঢাক বাজাতে বাজাতে পুজো দিতে ঢুকেছিলাম। ঢাক সহকারে বেরিয়ে এলাম। যখন সমাজে বারবার অসুররা মাথা চাড়া দিয়েছে নারীরা মা দুর্গার রূপ ধরেছে। আমি সাধারণ নারী। কিন্তু সাধারণ নারীর মধ্যে মা দুর্গা লুকিয়ে থাকে। আমি বিষ্ণুপুর লোকসভায় বিজেপি নামক, বিরোধী নামক অসুর বধ করে এই বিষ্ণুপুরকে বাঁচাতে।”

বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁয়ের পাল্টা খোঁচা, “আমাকে আগেই বধ করে দিয়েছেন, দয়া করে আর বিষ্ণুপুরের মানুষকে বধ করবেন না।”

এর আগে ষাঁড়েশ্বর বাবার কাছে প্রার্থনা করে সুজাতা বলেছিলেন, “বিষ্ণুপুর লোকসভার যিনি বিজেপি প্রার্থী, সেই অসুরের হাত থেকে সেই রাক্ষসের হাত থেকে বিষ্ণুপুর লোকসভাকে মুক্তি দিক। বিষ্ণুপুর লোকসভাকে একজন অপদার্থ জনপ্রতিনিধি হাত থেকে মুক্তি দিক এবং বিষ্ণুপুর লোকসভার মানুষের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকে এবং তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে সুজাতা মণ্ডলকে জিতিয়ে মানুষের সেবাদাসী হিসেবে কাজ করার সুযোগ দিন।”

প্রাক্তন স্ত্রী, তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা সম্পর্কে সে সময় সৌমিত্র দাবি করেছিলেন, “ওঁর মাথার ঠিক নেই, পাগলকে নিয়ে বেশি কিছু বলছি না।”

সৌমিত্রকে সরকারি চ্যালেঞ্জও ছুড়ে ছিলেন সুজাতা, “বিষ্ণুপুর লোকসভার যিনি বিজেপি প্রার্থী ও বিদায়ী সাংসদ তিনি এই লোকসভার জন্য কোনও উন্নয়ন করেননি। … চ্যালেঞ্জ হয়ে যাক, উনি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এই লোকসভা কেন্দ্রে কী কাজ করেছেন, আর আমাদের জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতির প্রতিনিধিরা কী কাজ করেছেন।
যদি প্রমাণ হয়, উনি এমপি তহবিলের টাকা বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের জন্য খরচ করেছেন, কথা দিচ্ছি আমি নমিনেশন প্রত্যাহার করে নেব।”

বাকযুদ্ধে কেউই কম যান না! এবার দেখা যাক দুই প্রাক্তনের মধ্যে ভোটবাক্স খোলা পর কে জয়ী হয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #politics, #Saumitra Khan, #Bishnupur, #sujata mondal, #HTK, #Hochche Ta Ki, #loksabha elections 2024

আরো দেখুন