বাংলাকে কলুষিত করার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে দিল্লির BJP নেতাদের, ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন অভিষেক
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: তৃতীয় দফার ভোটের আগেই নয়া বাঁক নিল সন্দেশখালি কাণ্ড। ভাইরাল হওয়া ‘স্টিং’ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, খোদ বিজেপি নেতারা বলছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বাংলা ও তৃণমূল সরকারকে বদনাম করতেই সন্দেশখালি ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছেন। সেই ভিডিওকে হাতিয়ার করে সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তিনি সাফ বলেন, “সন্দেশখালি বিজেপির পরিকল্পিত চক্রান্ত। নির্লজ্জ চক্রান্ত। নির্লজ্জতার সব নজির ভেঙে দিয়েছে আজকের ফুটেজ। বাংলার মা-দিদি-বোনেদের সম্ভ্রম দিল্লির কাছে দু’হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে বঙ্গ বিজেপি।”
অভিষেক বলেন,” রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম দিন থেকে বলে আসছেন, সন্দেশখালিতে যা বলা হচ্ছে, তা হয়নি।” এরপরই বিজেপিকে বাংলা বিরোধী বলার কারণ ব্যাখ্যা করেন অভিষেক। বলেন, “এর আগে উনিশের লোকসভা নির্বাচনের সময় কলকাতার রাজপথে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। বাংলার মনীষীদের অপমান করেছে বিজেপি নেতারা। বিবেকানন্দকে অগ্র বামপন্থী প্রোডাক্ট বলা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান বদলে দিয়েছে। আমরা শুধু শুধু বিজেপিকে বাংলা বিরোধী বলি না।”
এরপরেই ভিডিও প্রসঙ্গে ফেরেন তৃণমূল নেতা, বলেন বিজেপির দুই মন্ডল সভাপতি শান্তনু দলুই এবং গঙ্গাধর কয়াল বলছেন সাজানো ঘটনা। যাঁকে নির্যাতিত বলে দেখানো হচ্ছে। তিনি বলছেন, তাঁর সঙ্গে কিছু হয়নি। তিনি না জেনেই সই করছেন। বলছেন, জানেনই না কীসে সই করেছেন। অভিষেক বলছে, ভিডিওতে বিজেপি সভাপতি বলেছেন, “তাবড় তাবড় মাল’কে গ্রেপ্তারর করানোর কথা। গঙ্গাধর বলেছেন, শুভেন্দু তাঁদের বলেছেন, তাবড় তাবড় মাল গ্রেপ্তার না করালে তোমাদের কিছু হবে না।” অভিষেকের অভিযোগ, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বাংলাকে কলুষিত করা হয়েছে। একশো চল্লিশ কোটি লোকের সামনে দশ কোটি লোককে ছোট দেখানো হয়েছে। একুশের জনাদেশ বিপক্ষে যেতেই এরা (বিজেপি) এমন করা শুরু করেছে।
অভিষেকের অভিযোগ বাংলার সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, “গতকালের তিনটি সভা থেকেও মোদী সন্দেশখালির কথা বলেছেন। দিল্লির নেতারা যদি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ক্ষমা না চান, তাহলে ধরে নেব এটা তাঁদের মদতে হয়েছে।” এ প্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও সরব হন অভিষেক, “খবর যাচাই না করেই বাংলার নামে খবর প্রকাশ করেছে জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলি। তাতে বাংলার সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। এঁদের প্রত্যেকের উচিত বাংলায় এসে ক্ষমা চেয়ে যাওয়া।” একের পর এক সন্দেশখালি নিয়ে জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের শিরোনাম পড়ছেন অভিষেক। তাঁর অনুরোধ, “যা ইচ্ছে খবর করুন। কিন্তু যাচাই করে করুন। বাংলাকে ছোট করবেন না। বাংলাকে কলুষিত করতে বিজেপি, এক শ্রেণীর সংবাদ মাধ্যম এবং বিচার ব্যবস্থার একাংশ সামিল হয়েছিলেন বলে অভিযোগ তাঁর।
অভিষেক বললেন, “পরিকল্পনা করে সন্দেশখালিতে রোবটও নামিয়ে দিল ওরা। যেন মনে হচ্ছিল চাঁদে চন্দ্রযানের প্রজ্ঞান নামছে। এই সব কিছুই দেখানোর জন্য। সব পরিকল্পিত। বিজেপির মন্ডল সভাপতি ভিডিওতে বলেছেন শুভেন্দু অস্ত্র রেখেছিল।” এরপরই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, “শুভেন্দু তো ভিডিওতে বলেছেন ৩৫৫ জারির পরিস্থিতি তৈরি হবে। প্রায়ই এই সব বলছেন। বলে থাকেন। এমনও বলেন ২০২৬ সালে ভোট হবে না বাংলায়। তার আগেই সরকার ভেঙে দেব।”
বিচার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, “বিচারপতিরা আজ কী বলবেন, কিছু না শুনেই সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার দিয়ে দিল। রাজ্য পুলিশকে কিছু করতেই দেওয়া হয়নি। বাংলাকে কলুষিত করার জন্য বিজেপির পাশাপাশি বিচারমাধ্যমের একাংশও দায়ী বলে মনে করি আমি। এ কথা বলার জন্য যদি আমি আদালত অবমাননার দায়ে পড়ি, তবে পড়ব, কিন্তু সত্যি কথা বলা থেকে আমাকে আটকানো যাবে না।”
আরও পড়ুন: সন্দেশখালিতে বন্দুক-অস্ত্র রেখেছিলেন শুভেন্দু! কী দাবি খোদ BJP-র মন্ডল সভাপতির? দেখুন ভিডিও
বসিরহাট কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রের নাম স্টিং ভিডিওতে একাধিকবার উঠে এসেছে। অভিষেক বলেন, “বিজেপি নেতা গঙ্গাধর ভিডিওতে বলেছে ২০০০টাকা দিয়ে অভিযোগ দায়ের করিয়েছে বাংলায়। রেখা পাত্র যিনি ওই এলাকার লোকসভা ভোটের প্রার্থী তিনিও ওই ২০০০ টাকার বিনিময়েই অভিযোগ করেছিলেন। পরে আরও কয়েকজন মহিলাকে দিয়ে অভিযোগ করিয়ে টাকা নেন বলে শোনা যাচ্ছে। আবার বিজেপি নেতাই বলছে ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছে। পিঠে পাটিসাপটা বানানো নিয়ে কত কথা বলেছিল সংবাদ মাধ্যম। কী ভাবে খবর প্রকাশ হয়েছিল! আর এখন এরা বলছে ধর্ষণই হয়নি। উল্টে ধর্ষণ নিয়ে যাতে কোনও মেডিক্যাল টেস্ট দিতে না হয়, সে জন্য ৭ মাস আগের অভিযোগ দায়ের করেছে। যারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে মহিলাদের সম্ভ্রম ২০০০ টাকায় বিক্রি করেন, সেই দলকে ভোট দেওয়ার আগে দশবার ভাববেন।”
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সন্দেশখালি প্রমাণ করে দিয়েছে বিজেপি দলটাই জালি। এরা যে এত নিচু তলার বেহায়া নির্লজ্জ হতে পারে আমার জন্য ছিল না।”
বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে এদিনও সরব হন অভিষেক। কয়লা চুরি থেকে গরু পাচার সব নিয়েই কেন্দ্র করে একহাত নেন। তাঁর সাফ প্রশ্ন, কোলিয়াড়ি রক্ষার দায়িত্ব কার? সিআইএসএফের। গরু পাচারে দায়ী অমিত শাহ। তাঁর অধীনস্থ সীমান্তরক্ষী বাহিনী গরু পাচার করার জন্য দায়ী। অনুব্রত মণ্ডল জেলে। তারপরও উত্তরপ্রদেশ থেক গরু ঢুকছে, ধরা পড়ছে। আর দোষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যের? বিজেপির আওতাধীন এলাকার পরিমাপ বদলে দেওয়া, পনেরো থেকে বাড়িয়ে পঞ্চাশ কিলোমিটার করা হয়েছে। তারপরেও এতো কান্ড হচ্ছে।