রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

মোদীর পুতুল চান, না-কি নিজের প্রাণ বিপন্ন করে লড়াই করা মহুয়া মৈত্রকে নির্বাচিত করতে চান? কালীগঞ্জে প্রশ্ন অভিষেকের

May 5, 2024 | 3 min read

কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থীকে মোদীর পুতুল বলে কটাক্ষ করেন অভিষেক।

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: রবিবারে কৃষ্ণনগরের কালীগঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের হয়ে প্রচারে করেন অভিষেক। গরম উপেক্ষা করে আসা জনতার উদ্দেশ্যে অভিষেক প্রশ্ন করেন, “আমাদের সৈনিকেরা প্রশ্ন তুলেছেন বলে সাংসদ পদ খারিজ করতে হবে। কৃষ্ণনগরের মায়েদের অনুরোধ করব, ১৩ তারিখ আপনি মোদীর পুতুলকে নির্বাচিত করতে চান, নাকি নিজের প্রাণ বিপন্ন করে লড়াই করা মহুয়া মৈত্রকে নির্বাচিত করতে চান?” কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থীকে মোদীর পুতুল বলে কটাক্ষ করেন অভিষেক।

অভিষেক বলেন, “বাংলা-বিরোধী সরকারকে জবাব দিন। যখন ভোটবাক্স খুলবে, সর্ষেফুল দেখবেন বিজেপির নেতারা। এত দিন ধরে ভোট করাচ্ছে। মানুষের কষ্ট বোঝেন না। এই গরমে কষ্ট দিচ্ছে। এদের জবাব দেব, কথা দিয়ে গেলাম। সর্বধর্ম সমন্বয়ের প্রার্থী মহুয়া মৈত্রকে বিপুল ভোটে জয়ী করার দায়িত্ব আপনাদের কাঁধে তুলে দিয়ে গেলাম। গত বছরের থেকে দ্বিগুণ ভোটে জয়ী করুন মহুয়াকে। এই ঋণ উন্নয়নের মাধ্যমে শোধ করব। সন্দেশখালির মাধ্যমে যাঁরা বাংলাকে ছোট করেছেন দেশের সামনে, তাঁদের জবাব দেবেন। মহিলাদের সম্ভ্রম ২০০০ টাকায় দিল্লির হাতে বিক্রি করেছেন, তাঁদের বিসর্জন হবে তো?আপনারা প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন, তাঁর পদ খারিজ করেছে, তাঁর বিসর্জন হবে তো?”

এদিনও সন্দেশখালি স্টিং ভিডিওর কথা টেনে অভিষেক বলেন, “ভিডিয়ো দেখেছেন সকলে? এখানে বলছে, বসিরহাট থেকে বিজেপির প্রার্থী রেখা পাত্রকে ২০০০ টাকা দিয়ে অভিযোগ করানো হয়েছে। যিনি বলছেন, তিনি বিজেপির মণ্ডল সভাপতি। বাংলাকে যাঁরা কলুষিত করেছেন ক’টা ভোটের জন্য, ১৩ মে তাঁদের জবাব দিতে হবে।”

এরপরই শুরু হয় বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানো, “বিজেপি ভোট কিনতে টাকা দিলে, নিয়ে নেবেন। এটা আপনাদের টাকা। ৫০০ দিলে ২০০০ টাকা চাইবেন। এটা বাংলার মানুষের টাকা। নিয়ে নেবেন। ১০০ দিনের টাকা চেয়েছিলেন, সাড়া দেননি প্রধানমন্ত্রী। রাস্তা, আবাস, বিদ্যুৎ, বার্ধক্য ভাতার টাকা দেয়নি। যে লক্ষ্মীর ভান্ডার পান। তাতে বিজেপির অবদান নেই। যে ভাষা ওরা বোঝে, তাতেই জবাব দিন। দিল্লিতে আমাদের সাংসদদের মহুয়া মৈত্র, দোলা সেনদের চুলের মুঠি ধরে বের করে দেওয়া হয়েছিল, বাংলার টাকা চাইতে গেছিল বলে।
না তাড়ালে করলে মানুষকে শোষণ করবে। ভোট যখন পাচ্ছে না, তখন টাকা দিয়ে ভোট কিনছে।”

উঠে আসে মাছ খাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যও, একটা রাজনৈতিক দল ভোট চাতে যাবে! কে কী খাবে, রুই নাকি কাতলা, বেগুন নাকি কপি খাব, ঠিক করবে মোদী সরকার! এই দলকে উচিত শিক্ষা দেওয়া উচিত কি না! যাঁরা ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকেছে, নির্বাচিত প্রার্থীর পদ কেড়েছেন, তাঁদের উচিত শিক্ষা দেবেন কি না; প্রশ্ন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের।অভিষেক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলছেন, যাঁরা মাছ খান, হিন্দু-বিরোধী। দেশ-বিরোধী। কারা মাছ খান, হাত তুলুন। আমি এখন দু’বার খাই মাছ। বাংলার সংস্কৃতি জানে না। আপনাদের হাত তোলার ছবি প্রকাশিত হোক। সকলে দেখুন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে অধিকার কেড়ে নেবে। এটা রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণের বাংলা। এই বাংলা ভেদাভেদের রাজনীতিককে ঢুকতে দেয়নি। এরা বাংলার মানুষের দুঃখ, কষ্ট জানে না।”

পরিসংখ্যান তুলে ধরে অভিষেক জানান, ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ২৮১ জন শ্রমিকের একশো দিনের কাজের টাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছে দিয়েছেন। এঁরা সকলে নদিয়ার। নদিয়ায় ১২ লক্ষ ৯৯ হাজার ২৩৩ জন প্রতি মাসে লক্ষ্মীর ভান্ডার পান। নদিয়ায় ১৮ লক্ষের বেশি বোন কন্যাশ্রী পেয়েছেন। ৫২ লক্ষ ৪১ হাজার ৫৫২ জনকে তৃণমূলের সরকার কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে। সংখ্যালঘুদের ২৭ লক্ষ ২ হাজার ৭২৮ জন আর্থিক সাহায্য পাচ্ছেন।

এরপরই মহুয়ার সাংসদ পদ বাতিল ঘিরে সুর চড়ান অভিষেক, “কোনও তদন্ত হয়েছে? প্রমাণ এসেছে? বলছে পাসওয়ার্ড শেয়ার করেছে। বিজেপি নেতা, বিজেপি সাংসদদের সইয়ের পরে সংসদে ঢুকেছে। যাঁদের জন্য সুরক্ষা বিপাকে পড়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হয়েছে? বিজেপির নেতা বলেছেন মোল্লা। বাঙালিদের বলছে রোহিঙ্গা। মুসলমানদের বলছে পাকিস্তানি। ভারতে যাঁরা হিংসার বীজ পবন করছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি প্রধানমন্ত্রী।”

মহুয়াকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “মোদী বলছেন বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দেওয়া মানে তাঁকে ভোট দেওয়া। আমি বলব, মহুয়া মৈত্রকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে হারানো। মনে রাখবেন, যাঁরা ভোট কেটে তৃণমূলকে হারাতে চান, সেই সিপিএম, কংগ্রেসকে একটা ভোট নয়। কানে শুনে নয়, দেখে ভোট দিন। তিন বছরে প্রধানমন্ত্রীকে দেখেছেন? তাঁর প্রতিনিধি, প্রার্থীকে দেখেছেন? মহুয়া মৈত্র সারা বছর থাকেন মানুষের কাছে। আপনারা যাঁকে ভোট দিয়েছেন, গায়ের জোরে তাঁর পদ খারিজ করেছে। আপনারা যাঁকে ক্ষমতা তুলে দিচ্ছেন, বিজেপি তাঁর হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে নিচ্ছে।”

আরও বলেন বিজেপি যাঁকে প্রার্থী করেছে, কেউ তাঁকে চেনেন না। নিজের পরিচয় দেন রাজমাতা হিসেবে। প্রধানমন্ত্রী ইডি রাজ, সিবিআই রাজে বিশ্বাসী। তাঁরা জিতলে গরিবের উপর অত্যাচার বাড়বে। তৃণমূল প্রার্থী জিতলে দিল্লির বুকে আন্দোলন হবে গরিবের অধিকার জন্য। অভিষেক বলেন, তিনটি প্রশ্ন করবেন বিজেপি প্রার্থীকে। বিজেপি নেতারা বলছেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেবেন, কেন? তাঁরা যাঁকে রাজ্যপাল করে পাঠিয়েছেন, বর্তমান রাজ্যপাল মেয়ের বয়সি মেয়ের শ্লীলতাহানি করেছেন। রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। এই নিয়ে অবস্থান কী? তৃতীয় প্রশ্ন, সন্দেশখালি নিয়ে অনেক বলেছিল, কাল সন্দেশখালি দেখেছেন তো? কাল দেখেছেন তো, প্রমাণিত হয়েছে, বাংলার মানুষকে কলঙ্কিত করতে গিয়ে, কলুষিত করতে গিয়ে বাংলার মানুষকে ছোট করেছে।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#kaliganj, #Mahua Moitra, #Narendra Modi, #abhishek banerjee, #tmc, #Trinamool Congress

আরো দেখুন