জোড়াফুল আপনাকে NRC, CAA থেকে রক্ষা করবে – বীরভূমে আশ্বাসবাণী মমতার
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে বীরভূম ও বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র জোড়া সভা করেন মমতা। সন্দেশখালি ইস্যু এদিনও বিজেপিকে আক্রমণ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি বলেন, “সন্দেশখালিতে কী ভাবে প্ল্যান করে মেয়েদের অসম্মান করেছে, দেখেছেন তো? ওরা জানে না, মেয়েদের কাছে টাকাটা বড় কথা নয়। তাঁদের কাছে আত্মসম্মান, মেয়েদের গরিমা, এটার সম্মান অনেক বেশি। নির্বাচনে জিততে ব্লু প্রিন্ট তৈরি করেছে। বেশি চক্রান্ত করো না, এক দিন ফাঁস হবেই।”
বীরভূমের সভা থেকে মোদী সরকারকে নিশানা করে মমতা বলেন, তিনি সেই কথাই বলেন, যা তিনি রাখতে পারবেন। যে কথা রাখতে পারবেন না, তা তাঁর মুখ দিয়ে বলানো যাবে না। তাঁকে দেখতে হয় তাঁর কাছে টাকা আছে কি না। দিল্লি তো সব টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলার এক লক্ষ ৭৪ লক্ষ বকেয়া। সব বন্ধ।
মমতা বলেন, “সিএএ, এনআরসি, ইউনিফর্ম সিভিল কোড করতে দেব না। দরকার হলে জীবন দেব, কিন্তু বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করব না। জোড়াফুল আপনাকে এনআরসি, ‘ক্যা’ থেকে রক্ষা করবে।”
চাকরি বাতিল প্রসঙ্গেও বিজেপিকে নিশানা করেন মমতা, বলেন; “মোদীরা যা বলেছিল, কিচ্ছু করেনি। দু’কোটি ছেলেমেয়েকে চাকরি দেবে বলেছিল, কিন্তু চাকরি তো দেয়নি, উল্টে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। উপরন্তু আমাদের ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি ওরা কোর্টে কেস করে খেয়ে নিয়েছে। আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশে আছি।”
বাংলার প্রতি মোদী সরকারের বঞ্চনা নিয়েও আক্রমণ করেন মমতা, বলেন, তিন বছর ধরে বাংলাকে ১০০ দিনের কাজ করতে দেয় না। তা সত্ত্বেও তিনি নিজেদের ক্ষমতার জোরে একটা কর্মশ্রী প্রকল্প করছেন। যেখানে জব কার্ড হোল্ডাররা বছরে ৫০ দিনের কাজ পাবেন। সব টাকা তাঁরা(রাজ্য) দেব। ন’কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় চাল দিতে গেলে বছরে ৩২ কোটি টাকা লাগে। এই সব টাকা তাঁরা (রাজ্য সরকার) দিয়েছে। দু’বছর ধরে একটা টাকাও দেয়নি মোদী সরকার। ভেবেছিল বাংলা রেশনটা বন্ধ করে দেব, কিন্তু তা করেনি তাঁরা (রাজ্য)।
মোদী-শাহর নাম না করে, তাঁদের মধুবাবু-বিধুবাবু বলে কটাক্ষ করেন মমতা। বিজেপিকে ‘আলিবাবা আর তার ৪০ চোর’ বলে খোঁচা দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “ক্যায়া শরম কি বাত। ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয়নি। ৩ বছর টাকা আটকে রেখে দিয়েছে। বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। পাল্টে দিন, বদলে দিন। যা কথা দিতে পারব না, আমি তা বলি না। দিল্লিতে সব টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। বিনা পয়সায় চাল দিচ্ছে মোদি, চাল দিচ্ছ না কাঁকড়। ভেবেছিল রেশন বন্ধ করে দেবে। আমরা ওদের ভোট বন্ধ করে দেব। ভোট আটকে দেব। নিজের ছবি লাগায় সব জায়গায়। চাকরি তো দেয়নি বেকার বাড়িয়েছে।”
বীরভূমের সভা থেকে মমতা বলেন, “বিনা পয়সা শস্যবিমা আমরা দিই। কেন্দ্রীয় সরকার দেয় না। সারা দেশটাকে লুট করে দিয়েছে মোদী সরকার। আমি বললে দোষ হবে। যখন অর্থমন্ত্রীর স্বামী দাঁড়িয়ে বলেন, দেশ লুট হয়ে গেল, দেশে আর কোনও দিন ভোট হবে না যদি মোদী আবার আসে। নোটবন্দির সময় জনগণের টাকা লুট করেছে। সব লুট করেছে। বীরভূম, বর্ধমান আমাদের শস্যভাণ্ডার। আপনারা আমাদের শস্য দেন, তা-ই দিয়ে আমরা জীবনধারণ করি।” উঠে আসে ডেউচা-পাঁচামির প্রসঙ্গও। বলেন, “আগামী দিনে ডেউচা পাঁচামিতে এক লক্ষ ছেলেমেয়ের চাকরি হবে। কোনও ঘরে বেকার থাকবে না। এটা আপনাদের গর্ব।”
দুর্গাপুরের জনসভা থেকে বিজেপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধেয় সরব হন মমতা, বলেন, ”দিলীপবাবুর অপদার্থতা ছিল আমরা জানতাম না। আমি জানতাম উনি একটু উল্টোপাল্টা বলেন। কী আর করবেন। মেদিনীপুরে বেচারার সিট ছিল, সেই সিট পেলেন না। চলে এলেন বর্ধমান পূর্বে। কেন মেদিনীপুরে দেওয়া হল না আপনাকে, নিশ্চয়ই কিছু আছে! মেদিনীপুর থেকে বর্ধমানে পালিয়ে এলেন কেন, ভোটে হেরে যে অন্য কোথাও পালিয়ে যাবেন না তার কী গ্যারেন্টি আছে?”
সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ার আসন বদল নিয়েও খোঁচা দেন মমতা। তিনি বলেন, ”আপনার দুই রকম দুটি প্রার্থী। একজন প্রথমে ছিল দার্জিলিং। সেখান থেকে পলায়ন। চলে এল বর্ধমান পূর্বে। সেখান থেকেও টিকিট না পেয়ে পলায়ন। এবার এসেছে আসানসোলে। আমি জানি কাকে কাকে টাকার প্যাকেট দিয়েছিলেন। সুরন্দির সিং আলুওয়ালিয়া ভোটে দাঁড়াবে আর টাকার প্যাকেট ছড়াবে না, তা কখনও হয়। নাম বলে দেব, কাকে কত টাকা দিয়েছিল। আজও আমরা তাঁদের সতর্কতায় রেখেছি।”