বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

বিজ্ঞাপন লেখক কবিগুরু

May 8, 2024 | 2 min read

এখন যেমন বিভিন্ন চিত্রনায়ক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, খেলোয়াড় ও তারকারা বিজ্ঞাপন করেন, সেসময়ও তেমনি বিভিন্ন খ্যাতিমান লেখক, অভিনেতা, তারকাদের দিয়ে বিজ্ঞাপন করানো হতো।

বিজ্ঞাপন ‘কুন্তলীন’ নামক কেশ-তেলের। স্বয়ং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বিজ্ঞাপনটি লিখেছিলেন। বিজ্ঞাপনে লেখা আছে, “কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন :- কুন্তলীন ব্যবহার করিয়া এক মাসের মধ্যে নুতন কেশ হইয়াছে।”এমনকি সেই সাথে কুন্তলীন কেশ তেল নিয়ে কবির লেখা একটি গানের অংশ বিশেষ ও উল্লেখ করা আছে।

কলকাতার রেডিয়ম ল্যাবটরী কর্তৃক প্রকাশিত তাদের স্নো, ক্রিম, কেশ তেল, লাইম জুস, তিল তেল ও গ্লিসারিনের বিজ্ঞাপন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রেডিয়ম ল্যাবটরীর বিজ্ঞাপনও করেছেন। রেডিয়াম ক্রিম সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “রুপচর্চার জন্য স্নো ও ক্রিমজাতীয় প্রসাধন যারা ব্যবহার করেন, তারা রেডিয়াম ফ্যাক্টরির তৈরি ক্রিম ব্যবহার করে দেখুন, বিদেশি পণ্যের সঙ্গে এর কোনো পার্থক্য খুঁজে পাবেন না।”

ঘি থেকে শুরু করে স্নো-পাউডার, এমনকি হারমোনিয়াম পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথের লিখিত বাণী দেখা যায়। সেই সময় লেখার জন্য বাজারে পাওয়া যেত সুলেখা কালি। বিদেশি কোম্পানী পার্কারের Quink এবং শেফার্সের Skrip এর সঙ্গে পালা দিতে হতো সুলেখা কালিকে। সুলেখা কালির বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “সুলেখা কালি। এই কালি কলঙ্কের চেয়েও কালো।”

১৯৬০ সালে ‘দেশ সাহিত্য সংখ্যা’ থেকে আরেকটি বিজ্ঞাপনের সন্ধান পাওয়া যায়। এটি হলো ‘কাজলকালী’র বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনের ভাষাটি ছিলো, “কাজলকালী ব্যবহার করে সন্তোষ লাভ করেছি, এর কালিমা বিদেশী কালীর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।”

‘বোর্ন-ভিটা’ বিজ্ঞাপনেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনে কবির স্বহস্তে লেখা চিঠিতে দেখা যাচ্ছে তিনি লিখেছেন, “বোর্ন-ভিটা সেবনে উপকার পাইয়াছি।”

রবীন্দ্রনাথের আরেকটি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন ছিল ‘জলযোগ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ এর জন্য। ঐ বিজ্ঞাপনে তিনি লিখেছিলেন, “জলযোগের বানানো মিষ্টান্ন আমি চেখে দেখেছি। এটা আমাকে তৃপ্তি দিয়েছে। এর আলাদা স্বাদ আছে।” জলযোগ সে যুগে কেকের জন্য বিখ্যাত হলেও রবীন্দ্রনাথের সার্টিফিকেটের সুবাদে মিষ্টান্ন জগতেও প্রতিষ্ঠিত হবার সুযোগ পেয়েছিল।

সেসময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক বিজ্ঞাপন লিখেছিলেন। তাঁকে লিখতে হয়েছিলো, তাঁর নিজের জন্য ও তাঁর শান্তিনিকেতনের জন্য! এমনকি এস সি রায় এন্ড কোং এর ড. উমেশচন্দ্র রায়ের কথিত পাগলের মহৌষধের বিজ্ঞাপনও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর করেছিলেন।

ভারতবর্ষের পূর্ব রেলওয়ের বিজ্ঞাপনেও রবীন্দ্রনাথের কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে। পূর্ব রেলওয়ের বিজ্ঞাপনে কবির ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতার দু’লাইন তুলে দেয়া হয়েছে।

এয়ারলাইন্সের বিজ্ঞাপনেও রবীন্দ্রনাথের লেখা পাওয়া যায়। কবি ‘কে এল এম রয়াল ডাচ’ এয়ারলাইন্সের জন্য বিজ্ঞাপন লিখেছিলেন। রয়াল ডাচ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ সেই বিজ্ঞাপন ‘গুরুদেবের বিমান যাত্রা’ শিরোনামে বিশ্বভারতী পত্রিকায় প্রকাশ করেছিল।

তথ্যসূত্র: রবীন্দ্র প্রসঙ্গ, আনন্দবাজার পত্রিকা

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#RabindraJayanti, #রবীন্দ্রজয়ন্তী

আরো দেখুন