জানেন কি জাতীয় সঙ্গীত সৃজনে দুই বাংলার সাথে দ্বীপ রাষ্ট্রেরও সেতু বন্ধন গড়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার পাশাপাশি শ্রীলংকার জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন বাঙালির প্রাণের ঠাকুর। তিনটি দেশের জাতীয় সংগীত সৃষ্টির নেপথ্যে একটি মানুষ, এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
১৯৩৮ সালে তার শ্রীলংকার সিংহলী ছাত্র আনন্দ সামারাকুনের অনুরোধে ‘নমো নমো শ্রীলঙ্কা মাতা’ গানটি রচনা করেন কবিগুরু। গানের মূল সুরও তার। বলা বাহুল্য, রবীন্দ্রনাথ গানটি বাংলায় রচনা করেন। ১৯৪০ সালে শ্রীলংকায় ফিরে সিংহলী ভাষায় গানটি অনুবাদ করেন সামারাকুন। অনুদিত গানের কথা দাঁড়ায় ‘আপা শ্রীলঙ্কা, নমো নমো নমো নমো মাতা, সুন্দর শ্রীবরণী…’। মিউসেস কলেজের এক অনুষ্ঠানে সামারাকুন অনুদিত গানটি প্রথম প্রকাশ্যে পরিবেশন করে তত্কালীন সিংহল বা সিলোনের একটি দল। গানটি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং স্থানীয় রেডিও স্টেশনের সুবাদে বহুল প্রচারিত হয়।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পরেও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হওয়ার চল ছিল। ১৯৫০ সালে তত্কালীন অর্থমন্ত্রী জে আর জয়বর্ধনে সামারাকুন অনুদিত গানটি জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানান।
১৯৫০-এর দশকের শেষ দিকে এই গানের প্রথম পংক্তি পাল্টানোর সিদ্ধান্ত হয়। পর পর দুই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর পর জাতীয় সঙ্গীতের প্রথম লাইনে বদল আনার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা সরকার। পরিবর্তিত সংস্করণে গানের প্রথম পংক্তি দাঁড়ায়, ‘শ্রীলঙ্কা মাতা, আপা শ্রীলঙ্কা…’। ১৯৬১ সালে এই সিদ্ধান্তে সরকারি সিলমোহর পড়ে। ১৯৭৮ সালে শ্রীলঙ্কার সংবিধানে ঠাঁই পায় এই গান।
জাতীয় সঙ্গীত বাছতে শ্রীলঙ্কা সরকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রী এডউইন বিজয়রত্নের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন। অনেক বাছ-বিচারের শেষে জাতীয় সহ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি পায় ‘নমো নমো মাতা…’। ১৯৫১ সালের ২২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে সরকারি পরিচিতি পাওয়ার পর ১৯৫২ সালের প্রথম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে গাওয়া হয় এই গান। উল্লেখ্য, গানটি তামিল ভাষায় অনুবাদ করেন এম নাল্লাথাম্বি।