ভোটের মাধ্যমে সন্দেশখালির বদলা হবে, বিজেপিকে ভাঙো আর ভাঙনের নয়, জীবনের জয়গান গাও – হুগলিতে মমতা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন হুগলিতে দলীয় প্রার্থী দুই দিদি মিতালি বাগ ও রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে জনসভা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সভায় শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয় রবি ঠাকুরের উদ্দেশ্যে।
চাকরি বাতিল নিয়ে এদিন মমতা বলেন, “বিজেপি চাকরিখেকো বাঘ। ২৬ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি খেয়ে নিল। বেতন ফেরত দিতে বলল। আমি সে দিন থেকে বলেছিলাম, চিন্তা করবেন না। পাশে আছি। মঙ্গলবার দুর্গাপুরে মিছিল করছিলাম। মনটা পড়ে ছিল সুপ্রিম কোর্টে। কী রায় হয় তা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। রায় শুনে মনটা স্নিগ্ধ, তৃপ্ত হয়ে গেল। এরা মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়। এরা মানুষ নয়, দানব।এতদিন মন খারাপ থাকত। কিন্তু কালকের পর মন আনন্দে ভরে গিয়েছে। আপনি কাজ করার পর তার ফল পেলে আনন্দ হয় তো? আমারও তাই হয়েছে।” সিপিএমকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, “সিপিএমের হার্মাদেরাই এখন বিজেপির হার্মাদ হয়েছে। আমার থেকে ভাল ওদের আর কেউ চেনে না। গড়বেতা থেকে আরামবাগ পর্যন্ত সিপিএম মাটির নীচে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে রেখেছিল। মানুষ খুন করে সেখানে ফেলে দিত। আর তাঁকে খুঁজে পাওয়া যেত না।’’
এদিনও সন্দেশখালির স্টিং ভিডিও নিয়ে সরব হন মমতা, বলেন; “দেখলেন তো সন্দেশখালিতে কেমন টাকার খেলা হয়েছে? মা, বোনেদের সম্মান চলে গেলে তা কি টাকা দিয়ে ফেরত আসে? এর বদলা চাই। ভোটের মাধ্যমে সন্দেশখালির বদলা হবে।”
দলের প্রার্থী সম্পর্কে তিনি বলেন, এবার নতুন প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছেন। মিতালি প্রান্তিক ঘরের মেয়ে। ওঁকে জেতান বলেও আবেদন জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পরিচয় দিয়ে মমতা বলেন, “মিতালি বাগদি সম্প্রদায়ের মেয়ে। উচ্চশিক্ষা করেছে। অনেকে বলেন, বাগদি বাউড়িরা টিকিট পান না। আমরা ওঁকে টিকিট দিয়ে তা প্রমাণ করে দিয়েছি।”
মোদীকে খোঁচা দিয়ে বলেন, “ওঁর নাম আমি দিয়েছি প্রচারমন্ত্রী। ঘুম থেকে উঠলে, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে সর্বত্র ওঁর ছবি। শুধু নিজের প্রচার করতে ভালবাসেন।” দিনের দ্বিতীয় সভায় মমতা মোদীকে আক্রমণ করে বলেন, “ছোটবেলায় হিন্দি গান শুনেছিলাম, ‘ছ্যা ছ্যা ছ্যা কেয়া শরম কি বাত’! একি লজ্জার কথা প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলেন, এটা মনের ব্যথা। ভদ্র ভাবে বললাম। আর কী বলব। বলেছে, ‘রেশনের টাকা দিই’। মিথ্যা কথা। একটা পয়সা দেয় না। পুরোটাই মিথ্যা কথা মিথ্যা কথা, আমরা রাজ্য সরকার চালাই। আপনাদের বিনা পয়সায় রান্নার গ্যাস দেবে। পেয়েছেন? পাননি। অথচ টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে। আমি বিনা পয়সার গ্যাস পেয়েছি। তাই ভোট পদ্মফুলে দেব। পুরো মিথ্যা কথা।”
রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে দিনের দ্বিতীয় সভাটি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই জানান, প্রচার সভার পর তিনি রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় ফিরবেন। বললেন, “একমাস আট দিন পরে আজ বাড়ি ফিরব।” উল্লেখ্য, লোকসভা ভোট উপলক্ষ্যে লাগাতার প্রচার করছেন তৃণমূল নেত্রী।
এদিন তিনি বলেন, তাঁকে যেমন সহজ মনে হয়, তিনি ততটা সহজ নন। একটা কেউ ভুল ভাল কাজ করলে তিনি দু’টো থাপ্পড়ও মেরে দেন। মানুষের জন্য তিনি সহজ। অন্যায় করলে সহজ নয়। খুব রাফ অ্যান্ড টাফ। কল-কারখানা বন্ধ নিয়েও বিজেপিকে নিশানা করেন মমতা, বললেন, “ডানলপ এবং যে সব কোম্পানি বন্ধ আছে, ২০১৬ সালে আমরা বিল পাশ করে বলেছিলাম, ডানলপ আর অন্য সংস্থাগুলি আমাদের হাতে দিন। আমরা চালাব। কিন্তু ওরা দেয়নি। দেবে কী করে? ওর মাথায় যে বসে আছে সে বিজেপির এক নম্বর লোক। যাঁরা বেতন পান না তাঁদের প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে দিই। স্বাস্থ্য সুরক্ষারও খেয়াল রাখা হয়।”