রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

বাংলাকে কলুষিত করার পরিকল্পনা, এখন জনসমক্ষে! সন্দেশখালির বেলুনে আলপিন ফুটেছে – BJP-কে তীব্র আক্রমণ অভিষেকের

May 9, 2024 | 3 min read

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: লক্ষ্মীবারের বারবেলায় কলকাতার আকাশ ঢেকে গিয়েছিল দুর্যোগের মেঘে, চলে টানা ঝড়, বৃষ্টি। ঝড়ঝঞ্ঝার জেরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চপার উড়তে পারল না। ফলে বাতিল জোড়া জনসভা, বদলে ভারচুয়ালি ভোটের প্রচার করেন অভিষেক। বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় (Satabdi Roy) এবং বর্ধমান পূর্বের শর্মিলা সরকারের (Sharmila Sarkar) সমর্থনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভারচুয়ালি দলীয় প্রার্থীদের হয়ে ভোটপ্রচার করলেন।

জোড়া ভার্চুয়াল সভা থেকেই সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো আক্রমণ করেন অভিষেক, বলেন, “গত তিন চার মাস ধরে বাংলাকে কলুষিত করার যে পরিকল্পনা, সেটা এখন জনসমক্ষে চলে এসেছে। সন্দেশখালির বেলুন, তাতে আলপিন ফুটে গিয়েছেছে। যারা দিনরাত গলা ফাটাতেন সন্দেশখালির জন্য, মিথ্যে খবর তৈরি করে বাংলাকে নির্লজ্জভাবে কলঙ্কিত করার চেষ্টার জন্য, তাদের সবার চক্রান্ত এখন জনসমক্ষে চলে এসেছে। বিজেপির প্রকৃত স্বরূপ সামনে চলে এসেছে। বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল বলছেন, এখানে ধর্ষণ করা হয়নি। ইচ্ছা করে ২০০০ টাকা দিয়ে মহিলাদের সম্ভ্রম নষ্ট করা হয়েছে। গোটা দেশের কাছে ক’টা ভোটের জন্য বাংলার মানুষকে ছোট করেছে বিজেপি। বসিরহাটে বিজেপির যে প্রার্থী, সেই রেখা পাত্রের একটা ভিডিও জনসমক্ষে এসেছে। সেখানে বলছেন, যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের না নিয়ে যাঁদের নিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে এর যোগাযোগ নেই। বিজেপির যে প্রার্থী, যাঁর সঙ্গে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন, গঙ্গাধর কয়াল জানিয়েছেন, সেই রেখা ২০০০ টাকা নিয়ে মিথ্যে মামলা করেছেন। বিজেপি যাঁদের রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে গিয়েছে, তাঁদের সাজিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আমি বলছি না। সন্দেশখালির ঘটনা সামনে আসার পর যেখানে পথসভা করে মায়েরা গর্জে উঠেছিলেন যে, সন্দেশখালির অপমান মানব না, সেই রাস্তায় বুধবার বিজেপির এক নেতা যে শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন, আপনারা দেখেছেন। যারা নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে যারা কথা বলেন, তাঁদের দেখুন।” বলাবাহুল্য অভিষেকের নিশানায় ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।

অভিষেক আরও বলেন, “বিজেপি ২০০০ টাকা দিয়ে সন্দেশখালিতে কয়েক জন মহিলাকে দিয়েছে, তৃণমূলকে ছোট করবে বলে নয়, বাংলাকে ছোট করবে বলে করেছে। বাংলার ১০ কোটি মানুষকে অপমান করেছে। যারা বাংলাকে অপমান করছেন, তাঁদের ভোট নয়। যারা বঙ্গবাসীর অপমান করেন, তাঁদের কি ভোট দেবেন? তাঁদের কি উচিত শিক্ষা দেবেন? বাংলার মায়েদের সম্ভ্রম যারা বিক্রি করেছেন ২০০০ টাকায়, তাঁদের উচিত শিক্ষা দেবেন কি না! বিজেপিতে উচিত শিক্ষা দিতে ১৩ তারিখ রোদে পুড়ে হোক, বৃষ্টিতে ভিজে হোক জোড়াফুলে ভোট দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্তিশালী করুন। শতাব্দী রায়কে জয়ী করুন। এরা আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে চায়। ৩ বছর আগে যেভাবে তৃণমূলকে জিতিয়েছেন, আবার জয়ী করুন। প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলার স্বার্থ দেখেছেন, তেমনই করুন। আবার ভোটে দিন।”

এদিন অভিষেক বলেন, “যত দিন তৃণমূল ক্ষমতায় থাকবে, বীরভূমে যত দিন শতাব্দী রয়েছেন, আপনাদের দিকে চোখ তুলে তাকানোর ক্ষমতা নেই। লক্ষ্মীর ভান্ডার যেমন পাচ্ছেন, পাবেন। কোচবিহারের (বিজেপি) জেলা কমিটির নেত্রী রাজ্য নেতৃত্বকে পাশে বসিয়ে বলেছেন, তিন মাসে বন্ধ হবে লক্ষ্মীর ভান্ডার। যাঁরা বন্ধ করতে চাইছেন, তাঁদের এই নির্বাচনে জমি ছাড়া কি উচিত?”

অভিষেক বক্তৃতায় উঠে আসে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠা বিজেপি নেতা বৃজভূষণ সিংয়ের কথাও, তাঁর ছেলেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি, এ নিয়েও খোঁচা দেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)।

অভিষেক জানান, “মানুষের পাওয়া, অধিকার মেটানো হয়নি। মানুষের টাকা গায়ের জোয়ারে আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত চার বছরে আবাসে ১০ পয়সাও দেয়নি বিজেপি। বাংলায় হারের পর এক টাকাও দেয়নি।” শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিও জানান অভিষেক। মোদী সরকারকে নিশানা করে অভিষেক বলেন, “১০ বছর মোদী সরকার ক্ষমতায়। গত ১০ বছরে বলুন, এখানে কারও জন্য কিছু করেছেন। একটা বাতিস্তম্ভ বা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় করেছে। এমনকি গরিব মানুষের টাকা বন্ধ করে রেখেছে। মানুষের উপার্জিত টাকা বন্ধ করে রাখছে। আমি কী খাব, পরব, প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবেন?”

বিজেপি কেন বাংলা বিরোধী তাও ব্যাখ্যা করেন অভিষেক, “বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি ২০১৯ সালে অমিত শাহের নেতৃত্বে কলকাতার রাজপথে ভাঙচুর চালিয়েছে বিজেপি। বাংলার মণীষীদের অপমান করছে। বাংলার গরিব মানুষের অধিকারের টাকা আটকে রেখেছে। বিজেপি বাংলাবিরোধী, তাই এঁদের বাংলা থেকে উৎখাত করতে হবে। রবীন্দ্রনাথের কর্মভূমি বীরভূম জেলায়, শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর ফলক থেকে তাঁর নাম মুছেছে জনবিরোধী মোদী সরকার। বদলে নাম রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। সে’কারণে এরা বাংলা বিরোধী। এরা রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দকে অপমান করেছেন।”

পরিসংখ্যান তুলে ধরে অভিষেক জানান, বীরভূমে ৩,১৯,৭৬০ জন শ্রমিককে ১০০ দিনের বকেয়া কাজের টাকা মিটিয়েছে রাজ্য সরকার। ৯ লক্ষ ১ হাজার ৯৩৭ জন মা, বোনকে প্রতি মাসে সরকার লক্ষ্মীর ভান্ডার দেওয়া হচ্ছে। ১২ লক্ষ ৬১ হাজার ৩২১ জনকে প্রায় ৫৪৫ কোটি খরচ করা হয়েছে কন্যাশ্রীতে। ৩৬ লক্ষ ৭৮ জনকে রাজ্য সরকার রেশন দিচ্ছে বিনামূল্যে। এরপরেই অভিষেক বলেন, “শীতলখুচিতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁদের হাতে লাঠি ছিল না। ভোট দিতে গেছিলেন। যাঁর নেতৃত্বে শীতলখুচিতে এই কাণ্ড হয়েছিল, তাঁকে বিজেপি এখানে প্রার্থী করতে চেয়েছিল। কমিশন প্রার্থীপদ বাতিল করে। এখন ডামি প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। গত ১০ বছরে বিজেপির কেউ এসে কোনও খবর নিয়েছে? কোভিডের সময় সকলে ঠিক রয়েছে কি না, জিজ্ঞেস করেছে? অন্য দিকে মমতার সরকার প্রতি দু’মাস অন্তর দুয়ারে সরকার প্রকল্পে সুবিধা পৌঁছে দিয়েছেন।”

অভিষেক এদিন দলিত, তফশিলিদের উপর অত্যাচার নিয়ে যোগীকে এক হাত নেন। অভিষেক বলেন, “তফশিলিদের উপর সব থেকে বেশি অত্যাচার করেছে বিজেপি সরকার। সব থেকে বেশি অত্যাচার হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। এক বছরে ১৩ হাজার তফশিলির উপর আক্রমণ হয়েছে। মধ্যপ্রদেশে তফশিলি ভাইয়ের উপর বিজেপি নেতা প্রস্রাব করছেন, ভিডিও দেখেছেন। সেই যোগী আদিত্যনাথ সাত দিন আগে বীরভূমে ভাষণ দিচ্ছেন। এখানে আসার আগে পড়াশোনা করবেন। যাঁর টিকি ধরে রাজনীতি করেন, সেই শাহের দপ্তর এনসিআরবির রিপোর্ট বলেছে দেশের সব থেকে সুরক্ষিত শহর কলকাতা।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Sharmila Sarkar, #bjp, #abhishek banerjee, #tmc, #satabdi roy, #Loksabha Election 2024, #Sandeshkhali Incident

আরো দেখুন