রাজ্যপালের বিরুদ্ধে একাধিক শ্লীলতাহানির অভিযোগ! নিস্পৃহ মোদী সরকার, #MeToo-র একদশকের বেশি পরেও কী অসহায় নারীরা?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সমাজে প্রভাবশালী-ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের হাতে কর্মক্ষেত্রে বা অন্য কোনও পরিসরে যৌন নিগ্রহের ঘটনা যা বছরের পর বছর চেপে রাখা হয়েছিল, সেই চাপা ক্ষোভ থেকে ২০০৬ সালে জন্ম নিয়েছিল #MeToo আন্দোলন। বিশ্বজুড়ে নারীদের মধ্যে #MeToo এতটাই সাড়া ফেলেছিল যে পশ্চিমী দুনিয়া থেকে দক্ষিণ এশিয়াতে উঠে এসেছিল সমাজে নিপীড়নের একের পর ঘটনা। যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল বহু প্রযোজক-পরিচালক, অভিনেতা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, বিখ্যাত শিল্পী প্রমুখদের বিরুদ্ধে। সেই আন্দোলনের ১৭ বছর পরে ২০২৪ সালে যৌননিগ্রহের ঘটনায় যুক্ত হল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের নামও!
রাজভবনের কর্মীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগে বিদ্ধ সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে আরও একটি শ্লীলতাহানির অভিযোগের অনুসন্ধান রিপোর্ট জমা পড়ল রাজ্য সরকারের কাছে। জানা গিয়েছে, একবছর আগে লালবাজারে অভিযোগ জানান নাম করা এক ওড়িশি নৃত্যশিল্পী। তিনি দাবি করেছেন, অনুষ্ঠানের নামে দিল্লি নিয়ে গিয়ে রাজ্যপাল সেই নৃত্যশিল্পীকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন। এর আগে গত ২ মে রাজভবনের এক অস্থায়ী মহিলা কর্মচারী রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজ্যপাল তাঁকে দু’বার শ্লীলতাহানি করেন। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই উত্তাল রাজ্য রাজনীতি।
সূত্রের খবর, ২০২৩ সালের জুন মাসে নয়াদিল্লির এক হোটেলে রাজ্যপাল ওডিশি নৃত্যশিল্পীর শ্লীলতাহানি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, নয়াদিল্লির এক বিলাসবহুল হোটেলে তাঁর জন্য ঘর বুক করা হয়েছিল। রাজ্যপালের এক আত্মীয় ওই বুকিং করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, গত বছর ৫ এবং ৬ জুন শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছিল। কলকাতায় ফিরে তিনি লালবাজারে রাজ্যপাল বোসের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী, সাংবিধানিক পদে থাকা কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও রকম তদন্ত করতে পারে না। তাই লালবাজার অভিযোগকারিণীর অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করেছিল। সেই অনুসন্ধান রিপোর্টই শনিবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরে জমা দিল লালবাজার। তবে সেই রিপোর্টে কী আছে, তা বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের (CV Ananda Bose) বিরুদ্ধেএকাধিক শ্লীলতাহানির অভিযোগে তোলপাড় রাজ্য। বোসের বিরুদ্ধে একাধিকবার সরব হয়েছে রাজসরকার। অন্যদিকে ভোটপ্রচারের তাগিদে ১১ মে রাজভবনে নরেন্দ্র মোদী রাত্রিবাস করলেও, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া দূরের কথা, একটি বাক্যও খরচ করেন নি তিনি। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, রাজভবনের কর্মীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা কী প্রমাণ করবে শুধুমাত্র রাজনীতির কারণে বার বার কলঙ্কতি হতে হবে দেশের ‘নারীশক্তি’-দের? শুধুমাত্র বঙ্গে ভোট-রাজনীতির স্বার্থেই কী মোদীর নীরবতা? কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের প্রভাবে আন্দোলনের সতেরো বছর পরেও #MeToo কী কোনও সাড়া জাগাতে পারেনি ভারতে?