রাজনীতিতে নবাগত অভিজিতের বয়ানই এখন BJP-র তমলুক জয়ের প্রধান অন্তরায়?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মার্কস-স্তালিন ছেড়ে মোদী-শাহের অনুগত হয়েছে প্রাক্তন বিচারপতি। কোর্টরুম ছেড়ে নেমেছেন ভোটের ময়দানে। লেনিনকে দূরে ঠেলে এখন জপছেন গডসে কীর্তন। পাজাব-পাঞ্জাবি, গেরুয়া তিলকে এখন হিন্দু নেতার ইমেজ বুনছেন অভিজিৎ (Abhijit Ganguly)। লিও সাও চি’র ‘হাউ টু বি এ গুড কমিউনিস্ট‘ ছেড়ে বিজেপি হলমার্কড হিন্দু হওয়ার চেষ্টায় তিনি। জয় শ্রী রাম, ভারত মাতা কি জয়; ধ্বনিতে রব তুলছেন। তৃণমূলের প্রতি তিনি যেন জাত ক্রোধ মেটাচ্ছেন! হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের উন্নয়ন, নন্দীগ্রামের যোগাযোগ, নিকাশি সমস্যা, পান-ফুল চাষীদের দুর্ভোগ, তমলুকের কোনও জ্বলন্ত সমস্যার সমাধানের আশ্বাসবাণী শোনা যাচ্ছে না তাঁর মুখে।
চাকরিখেকো কিছু রায়কে হাতিয়ার করে ১ লক্ষ ৯০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধান টপকে লোকসভা আসন দখলের স্বপ্নে এখন অধিকারী শিবির। দলের জয়ের স্বপ্নে বাঁধা হচ্ছেন খোদ প্রার্থী, লাগাতার বিড়ম্বনায় ফেলেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সম্পর্কে ‘কূকথার’ বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। মহিলাদের প্রতি অপমানজনক শব্দ প্রয়োগ নিয়ে ক্ষোভ গেরুয়া শিবিরেও। প্রচারপর্বে কর্মী-সমর্থকদের প্রতি খারাপ ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গেও অত্যন্ত নিম্ন রুচির ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে।
কিন্তু বিজেপি (BJP) প্যাঁচে পড়েছে তমলুকের প্রার্থীর এক উত্তরকে ঘিরে! এক অনলাইন ইন্টারভিউতে বিজেপি প্রার্থী বলছেন, এবারই শেষ, আর ভোটে লড়তে চান না তিনি। এই বক্তব্যকে প্রচারে ব্যবহার করছে তৃণমূল এবং সিপিএম। গ্রামে গঞ্জে লাগাতার প্রচার শুরু করেছে তাঁরা। পূর্ব মেদিনীপুরের ভোটযুদ্ধে দুই আসনে তৃণমূলের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়ি ভাড়া নিয়ে গত দু’মাসের বেশি সময় ধরে তমলুকে পড়ে রয়েছেন তিনি। রাজীব এবং তমলুকের নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান সৌমেন মহাপাত্রের কথায়, একবার জেতাটাই যে প্রার্থীর একমাত্র লক্ষ্য, তাঁকে ভোট দেবে কেন, গ্রামবাংলার মানুষ! কোন ভরসায় তাঁকে ভরসা করবে, যিনি সাফ জানাচ্ছেন, ‘আবার ভোটে দাঁড়াব, পাগল নাকি!’ বিজেপি প্রার্থীর আরেকটি গুণের কথাও প্রচারে তুলে ধরা হচ্ছে। অভিজিৎ মহিলাদের ’দাম’ নির্ধারণ করতেও পারদর্শী! দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর দাম নির্ধারণ করতে পারেন তিনি!
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তমলুক লোকসভা আসনের তিনটি বিধানসভা দখল করেছিল বিজেপি। রাজনৈতিক কারবারিরা বলেন, বাম ভোট রামে গিয়েছিল। বিধানসভাওয়াড়ি ভোটের নিরিখে বিজেপির থেকে এগিয়ে আছে তৃণমূল। সিপিএম এবার জোরকদমে নেমেছে তমলুকে, তরুণ প্রার্থী ছুটে বেড়াচ্ছেন। রামে যাওয়া ভোট যদি ফেরাতে পারেন সিপিএমের সায়ন, তবে কপালে গেরুয়া শিবির বিপাকে পড়বে। সাক্ষাৎকারে সিপিএমকে প্রধান প্রতিপক্ষ বলে, নিজের লড়াইকে আরও জটিল করে দিয়েছেন খোদ গেরুয়া প্রার্থীই।