ভোট মরশুমে মূল্যবৃদ্ধি ঢাকতে মরিয়া মোদী সরকার, প্রকাশ পেল না কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দুর্নীতি, রাম মন্দির, পরিবারতন্ত্র, চন্দ্রযান, অমৃতকাল কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। ভোটের মরশুমে সবচেয়ে বড় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে মূল্যবৃদ্ধি। প্রতিনিয়ত জিনিসের দাম বাড়ছে, কয়েক মাস পর পর মধ্যবিত্তের মাসিক বাজেট বাড়ছে। উপার্জন বাড়ছে না। মূল্যবৃদ্ধিতে ধামাচাপা দিতে মরিয়া মোদী সরকার। ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসের কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স প্রকাশ করেনি তারা। ৬৪ বছর পর এমনটা হল। ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরার আতঙ্ক কি গ্রাস করেছে বিজেপিকে?
কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্সের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ ঘোষণা করে। ঘোষণা না হওয়ায়, নয়া হারে ডিএ পাবেন না লক্ষ লক্ষ কর্মী। নিত্যপণ্যের দামের বাস্তব রূপ যদি প্রকাশ্যে এসে পড়ে, সেক্ষেত্রে বিজেপির ভোটে প্রভাব পড়তেই পারে।
জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির হদিশ পেতে, কয়েকটি পণ্যকে বেছে নেয় সরকার। দাম কত ছিল, এখন কতটা বেড়েছে, সে’হিসেব কষে সূচক প্রকাশ করা হয়। খুচরো বাজারদরের এই সূচকই সিপিআই। শিল্পমহলের প্রশ্ন, যে পণ্যগুলিকে বাছাই করে মূল্যবৃদ্ধির হিসেব সরকার কষে, সেগুলো আদৌ পণ্য রোজ কেনেন কি? তা না-হলে মূল্যবৃদ্ধির সূচকের গুরুত্ব নেই। শিল্পমহলের বক্তব্য মেনে আলাদা সূচক প্রকাশ করে শ্রমমন্ত্রকের আওতায় থাকা লেবার ব্যুরো, যার নাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার সিপিআই। জানুয়ারিতে সেই সূচক ছিল ১৩৮.৯। অর্থাৎ, ২০১৬ সালে যে জিনিসের দাম ১০০ টাকা ছিল, মূল্যবৃদ্ধির জেরে এখন তা ১৩৮ টাকা ৯০ পয়সা।
জানুয়ারির পর আর সূচক প্রকাশিত হয়নি। প্রতি মাসের সূচক প্রকাশিত হয় তার পরের মাসের শেষ দিন। ফেব্রুয়ারি ও মার্চের সূচক প্রকাশিত হওয়ার কথা। কিন্তু তা চেপে গিয়েছে সরকার। তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসের সূচক ছিল যথাক্রমে ১৩৭.৫, ১৩৮.৪, ১৩৯.১ এবং ১৩৮.৮। জানুয়রিতে ১৩৮.৯। মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরেনি। বণিকসভা মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল শুভাশিস রায়ের কথায়, সঠিক তথ্য সঠিক সময়ে প্রকাশ করা উচিত সরকারের। এই সূচকের সঙ্গে কর্মীদের প্রাপ্য জড়িত, তাই ন্যায্য পাওনায় সরকার ছেদ ফেলতে পারে না।
ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় সভাপতি রাজেন নাগরের মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অফিসার ও কর্মীরা যে কেবল এই সূচকের উপর নির্ভর করে মহার্ঘ ভাতা পান, তা নয়। এলআইসিআই, রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা সংস্থাগুলির পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যাঙ্কও এই সূচকের উপর নির্ভর করে। মূল্যবৃদ্ধির সূচক নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে যে পণ্য বাছাই করা হয়, তার তালিকা সরকার নিজে ঠিক করে। সরকার নিজের খেয়ালখুশি মতো পণ্য বাছাইয়ের ফলে মূল্যবৃদ্ধির প্রকৃত তথ্যও সামনে আসে না। ফলে আর্থিক বঞ্চনার আশঙ্কা থাকেই।