দেশবাসীর প্রতি, স্বৈরাচারী শাসনের হামলা থেকে গণতন্ত্র ও সংবিধানকে রক্ষা করার আর্জি মনমোহন সিংয়ের
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সপ্তম তথা শেষ দফার ভোটের প্রচারের প্রায় শেষ মুহূর্তে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আবেগঘন বার্তা দিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। মনমোহন সিং বলেন, মোদীকে হটিয়ে গণতন্ত্র রক্ষার এই শেষ সুযোগ। শনিবার সেই সুযোগ পাবে ভারতবাসী। দেশকে, সংবিধানকে স্বৈরাচারী দমনতন্ত্রের থেকে বাঁচাতে হলে ভোট দিতে হবে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে।
মোদীর বিভাজন এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে নিশানা করে তীব্র আক্রমণ করেছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। ভোটারদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “অতীতে দেশের আর কোনও প্রধানমন্ত্রী মোদীজির মতো সমাজের একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বা বিরোধীদের বিরুদ্ধে এভাবে বিদ্বেষপূর্ণ ও অসংসদীয় ভাষায় কথা বলেননি। তাঁর এই চূড়ান্ত বিদ্বেষমূলক ভাষণের একমাত্র লক্ষ্য, সমাজে বিভাজন সৃষ্টি। মোদিজি তাঁর এই আচরণে প্রধানমন্ত্রী পদের মর্যাদা ও গরিমা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন।” ভোটারদের প্রতি তাঁর আর্জি, “স্বৈরাচারী শাসনের অবিরত হামলা থেকে আমাদের গণতন্ত্র ও সংবিধানকে রক্ষা করার এই শেষ সুযোগ।”
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, “বিজেপি মনে করে দেশপ্রেম, সাহসিকতা ও সেবার মূল্য মাত্র চার বছর। এটাই ওদের ভুয়ো জাতীয়তাবাদের প্রমাণ।” মিথ্যাচারের অভিযোগেও মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। মনমোহন বলেন, তিনি জীবনে কোনওদিন একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের নামে পৃথকভাবে কিছু বলেননি। এই কপিরাইট একমাত্র বিজেপির রয়েছে। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “দেশ সবই দেখছে। এধরনের মিথ্যা ভাষণ এখন শিখরে পৌঁছেছে। বিভাজনের শক্তি থেকে প্রিয় দেশকে রক্ষা করা এখন আমাদের কর্তব্য। পাঞ্জাব, পাঞ্জাবী ও পাঞ্জাবিয়তকে শেষ করতে চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখা হচ্ছে না। দিল্লি সীমানায় মাসের পর মাস অপেক্ষা করে শহিদ হয়েছেন ৭৫০ জন কৃষক। তাঁরা মূলত পাঞ্জাবের। লাঠি, রাবার বুলেট তাঁদের জন্য যথেষ্ট ছিল না! সংসদের কক্ষে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের আন্দোলনকারী, পরজীবী বলে অপমান করেছেন।”
মনমোহনের আরও অভিযোগ, “গত দশ বছরে দেশের অর্থনীতি যে টালমাটাল অবস্থা দেখেছে, তা কল্পনারও অতীত। নোট বাতিলের বিপর্যয় ও ভুলে ভরা জিএসটি মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোভিড মহামারীর সময় অর্থনীতির পরিচালনায় অপদার্থতার কারণে ডিজিপি বৃদ্ধি প্রত্যাশার তুলনায় কমে গিয়েছে। এবং সেই নিম্ন হারই এখন স্বাভাবিক বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে। ইউপিএ জমানায় বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৮ শতাংশ। সেটাই এখন কমে ৬ শতাংশের নীচে। বর্তমান সরকারের সময়ে নজিরবিহীন বেকারত্ব ও আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতির কারণে বৈষম্য বেড়েছে। ধনী ও গরিবের মধ্যে এই বৈষম্য এখন ১০০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। বিজেপি সরকারের অপশাসনের কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এর ফলে পারিবারিক সঞ্চয়ের পরিমাণ গত ৪৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”