নরেন্দ্র মোদীর উপর সঙ্ঘের চাপ বাড়ছে?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: রামের কাহিনির সঙ্গে লঙ্কার কাহিনি ওতপ্রোত জড়িত, কিন্তু অতি দর্পে লঙ্কার কী হয়েছিল, সে কথা আধুনিক রাম-প্রচারীরা হয়তো বিস্মৃত হয়েছেন। কিছু দিন ধরেই একটি দর্পিত দাপট দৃশ্যমান, যেখানে দলকে ছাপিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যক্তি, ভিত্তিকে ছাপিয়ে যেতে বসেছিল স্তম্ভ— অন্তত তেমনই একটি বার্তা বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দিতে চাইছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। কিছু দিন ধরেই রাজনীতি-বিশেষজ্ঞরা মনে করছিলেন, আরএসএস-এর দিক থেকে কোনও বার্তা আসতে পারে। সেই প্রতিক্রিয়া শেষ অবধি এল ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের মুখে শোনা গেল কেন্দ্রীয় শাসক বিজেপির ব্যঙ্গসিক্ত সমালোচনা— প্রকৃত সঙ্ঘ-সেবক যিনি, তিনি নিজের কাজ করেন, কিন্তু নিজের মুখে কদাপি উচ্চারণ করেন না কত কাজ করা হচ্ছে। বক্রোক্তির তিরটি সোজাসুজি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকে, কেননা ভোটপ্রচার চলাকালীন মোদী বারংবার দাবি করেছেন যে তিনি প্রথমত এবং শেষত এক জন ‘সেবক’। মোদী আরএসএস-এর পুরনো কর্মী ছিলেন, এ কথা তিনি বলতেই পারেন। কিন্তু আরএসএস তাঁকে কিছুটা দূরে ঠেলতে চায় কি না, সে প্রশ্ন উঠছিল আগেই, এ বার ভাগবতের মন্তব্য তাকে তীক্ষ্ণমুখ করে দিল।
মোহন ভাগবতের পর আরএসএসের মুখপত্র অর্গানাইজার, আর এবার সঙ্ঘেরই উচ্চপদস্থ কর্তা ইন্দ্রেশ কুমার। নরেন্দ্র মোদীর ঔদ্ধত্য, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং শ্রীরামচন্দ্রকে সামনে রেখে ব্যর্থ রাজনীতির বিরুদ্ধে বিস্ফোরণ ঘটল আরও একবার। জয়পুরে আয়োজিত ‘রামরথ অযোধ্যা যাত্রা দর্শন পূজন সমারোহ’ নামক একটি অনুষ্ঠানে ইন্দ্রেশ কুমার বললেন, ‘যাঁরা রামচন্দ্রের ভক্ত, তাঁরা ক্রমেই অহঙ্কারী আর উদ্ধত হয়ে পড়েছেন। তাই রামচন্দ্রই তাঁদের শাস্তি দিয়েছেন। যাঁরা নিজেদের দলকে বিশ্বের বৃহত্তম বলে আখ্যা দিয়েছিল, তাঁরা নিজেরাই লোকসভা ভোটে গরিষ্ঠতা পেল না! ২৪০-এর মধ্যে আটকে যেতে হল! প্রভু রামচন্দ্র নিজেই তাঁদের ২৪০ এর মধ্যে আটকে দিয়েছেন।’
অর্গানাইজারের প্রবন্ধে তীব্র আক্রমণ করে ভোটে বিজেপির বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করা হয়েছিল অহঙ্কারকে। ওই প্রবন্ধে ৪০০ পারের কটাক্ষকেও অবশ্য ছাপিয়ে গিয়েছে ইন্দ্রেশ কুমারের মন্তব্য। খাস অযোধ্যায় বিজেপির পরাজয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লাল্লু সিংকে প্রভু রামচন্দ্র আদেশ দিয়েছেন, আপাতত পাঁচ বছর চুপ করে বসে থাকো।’ কে এই লাল্লু সিং? অযোধ্যা যে লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত, সেই ফৈজাবাদের এমপি ছিলেন এবং এবারও বিজেপির টিকিট পেয়েছিলেন। তাঁকে পরাস্ত করেছেন সমাজবাদী পার্টির দলিত নেতা অবধেশ প্রসাদ। এ নিয়ে বিজেপি প্রবল বিব্রত।
আরএসএস কর্তা বলেছেন, ‘রামচন্দ্রের বিধান দেখুন। যাঁরা নিজেদের রামচন্দ্রের ভক্ত বলে প্রচার করে ঔদ্ধত্যের চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছেন, তাঁরাই গরিষ্ঠতা পেলেন না।’ তবে মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’কেও কটাক্ষ করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘যাঁরা রামচন্দ্রের বিরোধিতা করেন, তাঁদেরও গরিষ্ঠতা দেওয়া হয়নি।’ তবে তা চলে গিয়েছে পিছনের সারিতে। বিজেপির অন্দরে তোলপাড় চলছে ইন্দ্রেশ কুমারের ‘ঔদ্ধত্য-আক্রমণ’ নিয়েই। প্রশ্ন উঠছে, নরেন্দ্র মোদীর উপর সঙ্ঘের চাপ বাড়ছে কেন?
ইন্দ্রেশ কুমারের মন্তব্য সম্পর্কে কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা কিন্তু বলেছেন, ‘এসব বলে কী হবে? সঙ্ঘ কী বলল, না বলল… প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গ্রাহ্যই করেন না! কিন্তু আরএসএস এসব কথা ভোটের আগে কেন বলল না? ফলপ্রকাশের পর বোধোদয় হয়েছে?’