রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

#Exclusive মতের অমিলে ওঁদের তর্ক, গানের আনন্দে ওঁরা এক

June 21, 2024 | 3 min read

মধুরিমা রায়

মতের অমিলে ওঁদের তর্ক, গানের আনন্দে ওঁরা এক

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে ঊর্দ্ধমুখী নাভিশ্বাস, চাকরিজনিত বিক্ষোভ, আন্তর্জাতিক সমীকরণ নিয়ে তর্ক বিতর্ক ইত্যাদি প্রভৃতির মাঝে দু’দণ্ড শান্তি পেতে নাটোরের বনলতার কাছে সকলে পৌঁছতে পারি না। ইঁদুর দৌড়ের যুগে হাতে মোবাইল, কানে ইয়ার ফোনে মানসিক শান্তি হাতড়াই আমি আপনি। উপরোক্ত ইস্যু গুলো নিয়ে যাঁরা সারা বছর মিটিং মিছিল, ক্যামেরা, লাইট ফেস করেন, রাজনীতির উঠোনে বেড়ে ওঠা সেই সব তরুণ তুর্কিরাও কি মিউজিকেই দিনান্তে শান্তি খোঁজেন?

দেবাংশু ভট্টাচার্য


আজ বিশ্ব সংগীত দিবসে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই যোগাযোগ করা হয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যের সঙ্গে। সারাক্ষণ তাঁর গান শোনা হয় না , অকপট দেবাংশু। ইয়ারফোন কানে দিয়ে খুব বেশি না থাকলেও মূলত যখন শোনেন, বাংলা গানেই আশ্রয় খোঁজেন তিনি। হিন্দি গান কার্যত শোনেন না। আশেপাশে কেউ শুনলে কানে যায় মাত্র। যাঁর লেখায় সুর করে রাজনীতিতে ‘খেলা হবে’ বহু মানুষকে বাস্তবের মাটিতে চাঙ্গা করে দিয়েছে, তাঁর পছন্দের গায়ক গায়িকাদের তালিকায় রয়েছেন রূপম ইসলাম, লোপামুদ্রা মিত্র, নচিকেতা। ছাত্র জীবনে অনেকটা রূপম ইসলামের ব্যান্ড ‘ফসিল্‌স’ শুনেই কেটেছে তাঁর। আবেগপ্রবণ দেবাংশু জানিয়েছেন তাঁর শৈশবের নস্টালজিয়া কাজ করে যে যে শব্দে, সুরে-সেই সমস্ত গানই অসম্ভব প্রিয় তাঁর। আর এ মুহূর্তে কোন গান মাথায় ঘুরঘুর করছে? উত্তরে ফোনের ওপারে কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা ভেঙে রাজনীতির এই সৈন্য বললেন, ‘ ডাকছে আকাশ, ডাকছে বাতাস, ডাকছে মাঠের সবুজ ঘাস…’

সৃজন ভট্টাচার্য


সদ্য লোকসভা নির্বাচনের লড়াই শেষ হয়েছে, লড়াইয়ে তৃণমূলের দেবাংশুর মতোই বামেদের ভরসার মুখ ছিলেন তরুণ নেতা সৃজন ভট্টাচার্য। চাপ দাড়ি, ভাসা ভাসা চোখ, হাতে গিটার আর কন্ঠে দিন বদলের ডাকে সৃজনের সৃজনশীল প্রকাশে বহু মানুষের আবেগ কাজ করেছে। ফলাফল যাইই হোক, দিনের শেষে শান্তির আশ্রয়ে তো সব রক্ত মাংসের মানুষই ফিরতে চান। সৃজন গান লেখেন, শোনেন ভীষণভাবে। ‘রাজনীতির বাইরে আমার ২৪ ঘণ্টার সঙ্গী গান শোনা, বহুদিনের অভ্যাস এটা, আমার শখ গান শোনা ‘- লিরিক্যাল সঙ্গীতের শ্রোতা সৃজন কথাগুলো একটুও না থেমে বলে গেলেন। সঙ্গে যোগ করলেন Metal ব্যতীত country song, soft rock তাঁকে আকৃষ্ট করে। কখনও কখনও গান লিখেছেন তিনি, তাই শব্দের জাদুতেই তিনি আটকে যান। সে কারণেই নয়ের দশকে শৈশব কাটানো এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বাংলা জীবনমুখী গান কানে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। রূপম ইসলাম, অঞ্জন দত্ত, নচিকেতা, কবির সুমন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শুনতে ভাললাগে তাঁর। যখন গান লেখেন, গিটার হাতে তোলেন তখন কি রাজনৈতিক সত্তা বিযুক্ত হয়ে যায়? অল্প হেসে এই প্রশ্নের উত্তরে সৃজন জানিয়েছেন, ‘ আমার যে মনন তৈরি হয়েছে, তাতে রাজনীতির অবদান অনস্বীকার্য। গিটার, কি বোর্ড বাজানো হোক বা গান গাওয়া কোনওকিছু করতে গেলেই রাজনীতির সঙ্গে তার বিরোধ নেই। বরং হাত ধরাধরি করেই এগোনো যায়’।
নির্বাচনী রেশ কাটার পর ইদানিং কোন গানে মন গুনগুন করছে সৃজনের? দু লাইন একটু মনে করে বাকিটা গাইলেন, ‘ ইয়ে জীবন হে, ইস জীবন কা ইয়েহি হে, ইয়েহি হে রঙ রূপ – থোড়ে গম হে, থোড়ে খুশিয়া ইয়েহি হে, ইয়েহি হে ছাও ধুপ…’

তরুণজ্যোতি তিওয়ারি


তরুণ তুর্কিদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিজেপির তরুণজ্যোতি তিওয়ারিকে যোগাযোগ করে জানা গেল তাঁর শান্তি এবং অসীম ধৈর্যের রসদ মূলত আসে ‘ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি’ থেকে। পাখির প্রতি উৎসাহ তাঁর। তারই মাঝে গান কতটা জায়গা জুড়ে? রবীন্দ্র সঙ্গীত, কীর্ত্তন, বাউল তাঁকে টানে। কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিচারণে তরুণজ্যোতি ছাত্রাবস্থায় শীতের আমেজে রূপম ইসলামকে মনে করলেন। তাঁর কথায়, ‘ হোস্টেল লাইফ শিলাজিৎ দা, রূপম দা ছাড়া হয় নাকি?’


মূলত সময়ের ধারাপাতে তাঁর মন তাঁকে যেদিকে নিয়ে এসেছে, সেই মতোই তিনি মনের ডাক শুনে গান শুনেছেন। ‘Guns and roses’ হোক বা ‘Nirvana’, ‘Black Sabbath’ বা ‘Linkin park’ শুনতেন একটা সময়ে, পরে ‘Soft melody’ তে মন গেছে তাঁর। বর্তমানে কোক স্টুডিওর ‘মা লো মা’ তরুণজ্যোতির মনে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার। আর চূড়ান্ত শ্রান্ত বিষণ্ন হলে? ক্যামেরা আর পুরনো ছবি এডিটে নিজেকে নিয়োজিত করেন তিনি।
ফ্রান্সের ‘ফেট ডেলা মিউসিক ‘ থেকে যে দিনের ব্যুৎপত্তি, ১৯৮১ এর পর থেকে ২০২৪ এ এসেও সেই সুরের উৎসব, সঙ্গীতের আনন্দ বিশ্বের আনাচে কানাচে স্বমহিমায় বিরাজমান। দৈনন্দিন চড়াই উতরাই পেরিয়ে শান্তির খোঁজে রাজনীতির সেনানীরাও তাই নিজেদের মতো আশ্রয় খুঁজে ফেরেন লেখায়, সুরে, লেন্সে, প্রকৃতির কোলে, সময়ের আবাহন বা বিসর্জনে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Music, #world music day, #Young Brigade, #Debangshu Bhattacharya, #Tarunjyoti Tiwari, #Srijan Bhattacharya

আরো দেখুন