লোকসভার ঘাটতি মিটিয়ে উপনির্বাচনে রানাঘাট দক্ষিণে জয় পেতে মরিয়া তৃণমূল
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আগামী ১০ জুলাই রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। উপ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতে রাজনৈতিক দলগুলি প্রস্তুতিও শুরু করেছে। এবার লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে এগিয়ে বিজেপি। এই ঘাটতি মিটিয়ে উপনির্বাচনের বৈতরণী পার করতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস।
রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের অধীনে রয়েছে রানাঘাট-২ ব্লকের আটটি ও রানাঘাট-১ ব্লকের ছটি পঞ্চায়েত। এছাড়াও রয়েছে কুপার্স নোটিফায়েড এলাকা। এই কেন্দ্র আবার উদ্বাস্তু ও মতুয়া বলয় বলেও পরিচিত। কুপার্সের জ্বলন্ত নাগরিক সমস্যাই হয়ে উঠেছে রানাঘাটের দক্ষিণ বিধানসভার উপনির্বাচনের অন্যতম টার্নিং ইস্যু।
কুপার্সের বিভিন্ন ওয়ার্ডের হাইড্রেনগুলোতে উঁকি দিলেই দেখা যাবে, জমে থাকা পলির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শাকপাতার গাছ জন্ম নিয়েছে। কোথাও আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে পেঁপে গাছের সারি। জল নিকাশি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়ে ড্রেনগুলো ঝোপঝাড়, প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনার দখলে চলে গিয়েছে। শহরের রাস্তাগুলোর অবস্থা যেমন বেহাল, তেমনি দিনের পর দিন ধরে রাস্তার আশেপাশে জমেছে আবর্জনার স্তূপ। পানীয় জলের সংযোগ পেলেও জল পাননি বাসিন্দারা। শহরের ১২টি ওয়ার্ডের ছবিটাই এক। গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে পুরবোর্ডহীন কুপার্স পুরসভার বাসিন্দারা একাধিক সমস্যায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পুরভোট না হওয়ার জ্বালা নিয়েই লোকসভা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কুপার্সের প্রায় ১৭ হাজার ভোটার।
পুরসভাগুলির সঙ্গে বৈঠকে রানাঘাটের কুপার্সের জঞ্জাল সমস্যা নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একইদিনে রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভার কুপার্সে কর্মিসভায় এসে এই পুরসভা এলাকার বাসিন্দাদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিকে সামনে রেখেছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি। সমস্ত নাগরিক সমস্যা মিটিয়ে কুপার্সবাসীর দাবি পূরণের কথা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই প্রতিশ্রুতিতেই এখন রানাঘাট দক্ষিণ বিজয়ের আশা দেখছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী কুপার্সের সমস্যা তুলে ধরায় তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কুপার্সের বাসিন্দারা।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কুপার্স পুরসভার বোর্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর রানাঘাটের এসডিও এখানকার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব সামলে আসছেন। পুরবোর্ড ভেঙে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন বকেয়া টাকা পাননি এই পুরসভার শতাধিক অস্থায়ী কর্মী। ফলে মাসের পর মাস বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ, ওয়ার্ডে জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ হয়নি এখানে। দীর্ঘ টালবাহানার পর মাস কয়েক আগে একাংশের কর্মীর বকেয়া টাকা মেটানো হলেও নাগরিক সমস্যার এতটুকুও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। সোমবার নবান্নের বৈঠকে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে পুরসভাগুলোর পারফরম্যান্সের নিরিখে কুপার্সের অবস্থা চূড়ান্ত খারাপ বলে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন এই পুরসভায় জঞ্জাল সমস্যা মিটছে না তা নিয়ে রানাঘাটের এসডিওর কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন তিনি।
উপনির্বাচন মিটলেই মুখ্যমন্ত্রী নিজে থেকে দায়িত্ব নিয়ে কুপার্সের সমস্যার সমাধান করবেন বলে দলের রাজ্য সভাপতিকে দিয়ে ইতিমধ্যেই বার্তা পাঠিয়েছেন। সোমবার কুপার্সের কর্মিসভায় মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন সুব্রত বক্সি। এরপরেই খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়ে কুপার্সবাসীর মধ্যে।