হাতের লেখার আঁচড়, বাঁক, ওঠা-নামা থেকে জানা যায় লেখকের শারীরিক, মানসিক অবস্থা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: পড়াশোনায় মন বসছে না সায়নের। চিন্তায় পড়েছেন মা। কী করা যায়? হাতের লেখা নিয়ে গেলেন ছোটবেলার এক বন্ধুর কাছে। তিনি দেখে বললেন, ছেলে মানসিক কোনও আঘাত পেয়েছে। আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে উঠেছে। সামলাও ওকে। বাড়ি ফিরে সায়নের সঙ্গে কথা বলে বুঝলেন সত্যিই তাই। প্রেম ভেঙেছে। সঙ্গে ভাবলেন, বন্ধুটি কি ম্যাজিক জানে! না, কোনও জাদু নয়। এটা এক ধরনের ‘বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া’। যার সাহায্যে হাতের লেখা দেখেই নির্ণয় করা সম্ভব মানসিক ও শারীরিক অসুখ। এই প্রক্রিয়ার পোশাকি নাম গ্রাফোলজি।
মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে শুধু যে দৈনন্দিন কার্যকলাপে পরিবর্তন আসে, এমনটা নয়। নিজের মনের অজান্তে বদলে যায় হাতের লেখাও। হাতের লেখার মধ্যে লুকিয়ে থাকে মনোজগতের গোপন তথ্য। যা বিশ্লেষণ করলে অনেক কিছু জানা সম্ভব। আর হাতের লেখা ডিএনএ’র মতো। অর্থাৎ একেক জনের হাতের লেখা একেক রকম। হাতের রেখা পড়ে ভাগ্যগণনা করে দেওয়ার চল রয়েছে আমাদের দেশে। তবে এক্ষেত্রে হাতের রেখা নয়, কাগজে ফুটে ওঠা হাতের লেখা দেখে মনের ও শরীরের খবর বলে দেন বিশেষজ্ঞরা। এর নেপথ্যে কাজ করে সাইকোসোম্যাটিক ডিজঅর্ডার (পিএসডি)। আসলে শরীর ও মন, দুই-ই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে শরীরের কোনও অংশে রোগ বাসা বাঁধলে, তা মনে প্রভাব ফেলে। যা ফুটে ওঠে হাতের লেখার মাধ্যমে। যে কোনও মানুষের হাতের লেখা স্নায়ুনির্ভর। ফলে স্নায়বিক সমস্যা দেখা দিলে তার ফলে হাতের লেখাও পাল্টাতে বাধ্য। শুধু প্রাপ্তবয়স্কেরাই নন, অল্পবয়সিদের হাতের লেখাও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত পাল্টাতে থাকে। পরিবর্তিত সেই হাতের লেখায় মানসিক উৎকণ্ঠার সমস্ত চিহ্নই ধরা থাকে।
এক্ষেত্রে একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রায় ১৫ হাজার রোগীর উপরে গবেষণা চালানো হয় এই গবেষণায়। দেখা যায়, রোগ বাসা বাঁধার আগে ও রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরের হাতের লেখায় রয়েছে বিস্তর ফারাক। মনে রাখা প্রয়োজন, রোগ নির্ণয় করা ও চিকিৎসা করা সম্পূর্ণ চিকিৎসকদের কাজ। গ্রাফোলজিস্ট বা হস্তলেখা বিজ্ঞানীরা কেবল আভাস দিতে পারেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেই আভাস মিলে গিয়েছে। আবার না মেলার সম্ভাবনাও থাকে কিছু ক্ষেত্রে।
মানসিক রোগ যেমন পার্কিনসন, মুড ডিজঅর্ডার, ম্যানিয়া, হাইপোম্যানিয়া, অবসাদ, ডিসথাইমিয়া, ফোবিয়া, প্যানিক, অ্যালঝাইমার্স, ডিসলেক্সিয়া, পার্কিনসনস, অটিজম ধরা পড়ে। পাশাপাশি বোঝা যায়, উচ্চ রক্তচাপ, ক্লান্তি, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, ব্যথা, হজমের সমস্যা, গাঁটের ব্যথা, স্ত্রী রোগ, ক্যান্সারও ধরা পড়ে হাতের লেখা থেকে। আবার কেউ কম্পিউটার বা মোবাইলের প্রতি অত্যাধিক আসক্ত কি না, তাও স্পষ্ট বোঝা যায় এই পরীক্ষা থেকে।
কাগজের উপর লেখার সময়ে হাতের চলন দেখে অনেক কিছু উপলব্ধি করা যায়। পরীক্ষার জন্য মূলত সাদা কাগজে লিখতে হবে। মসৃণ জায়গায় লেখাই উচিত। কারণ যদি এবড়ো খেবড়ো জায়গায় লেখা হয়, তাহলে ছাপ পড়ে হাতের লেখায়। ফলে রিডিং ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রশ্ন উঠতে পারে কোন কালিতে লেখা উচিত। সবথেকে ভালোভাবে পরীক্ষা করা যায় নীল কালিতে লিখলে। কারণ কালো কালি অনেক সময় হাতের লেখার অনেক বৈশিষ্ট্য শুষে নিতে পারে। যেমন, শরীরে কোনও ব্যথা থাকলে তা ভালো বোঝা যায় নীল কালিতে লিখলে।