বঙ্গ বিজেপিতে ‘দিলীপ বাহিনী’কে নিয়ে চিন্তায় ‘শুভেন্দু বাহিনী’
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: লোকসভা ভোটে বাংলায় দলের বিপর্যয় ঘটেছে। তার পর রাজ্য কমিটির প্রথম বৈঠক ডাকল বিজেপি। আগামী ১৭ জুলাই, বুধবার কলকাতায় ওই বৈঠক হবে। বঙ্গ বিজেপি সূত্রে খবর, সেই বৈঠকে থাকবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। আগামী দিনে রাজ্যে বিজেপির নীতি কী হবে, বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
কলকাতার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে বিজেপির বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। বর্ধিত আকারে রাজ্য কমিটির বৈঠক হবে বুধবার। জেলা সভাপতি, জেলা ইন-চার্জ-সহ দলের সর্বস্তরের নেতাদের বৈঠকে ডাকা হয়েছে। থাকবেন রাজ্য স্তরের সমস্ত মোর্চা এবং শাখা সংগঠনের সদস্যেরা।
লোকসভা এবং চার কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ফলাফলের পর এই প্রথম বিজেপির রাজ্য-কমিটির বৈঠক বসছে। সেখানে জেলা এবং মণ্ডলস্তরের নেতারা মনের কথা খুলে বলার পরিকল্পনা করলেও সে সুযোগ পাবেন কি না, তা নিয়ে ঘোর সংশয় রয়েছে।
অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনে পরপরই বঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তরে দিলীপ ফেরাও-এর রব উঠেছে। ২০১৯ এ রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন যে ফলাফল হয়েছিল, তার সাথে তুলনা করে আবারও দিলীপ ঘোষকেই দায়িত্ব দিতে সওয়াল করছেন দলের একাধিক আদি নেতা এবং কর্মীরা। কিন্তু মজার বিষয় বর্তমানে ১২৩ জনের এই রাজ্য কমিটিতে নাম নেই বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির। ফলে এই বৈঠকে দিলীপ ঘোষ থাকবেন কিনা সেই নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।
কিন্তু দিলীপ না থাকলেও তাঁর একাধিক অনুগামী এই বৈঠকের থাকবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু বঙ্গ বিজেপির ব্রাত্যজনের রুদ্ধ সংগীত কি শোনা যাবে সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে? সূত্রের খবর সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ এই বৈঠক হতে চলেছে রাজ্য কমিটির হেভিওয়েট নেতৃত্বদের তরফে বার্তা দেওয়ার। ফলে দীর্ঘ অভাব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আদি বনাম নব্যের হৈ-হট্টগোল বোধহয় দেখা যাবে না এই বৈঠকে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও দিলীপ যেন কিছুটা কৌশলেই বঙ্গ রাজনীতিতে নিজের গুরুত্ব বাড়িয়ে নিচ্ছেন। এর আগে সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের অভিমান এবং রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে বেশ ভালই মাইলেজ নিয়েছেন তিনি। তারপরে একদম সাম্প্রতিক সময়ে নিজের পুরনো কেন্দ্র মেদিনীপুরে একটি রক্তদান অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির সঙ্গে ছিলেন এখনকার রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের সামনেই দিলীপ ঘোষের সমর্থকেরা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। সুকান্ত মজুমদারের সামনেই তাঁরা দাবি করতে থাকে তাঁদের দিলীপদাকেই পুনরায় রাজ্য সভাপতি করতে হবে। এমনকী সংবাদমাধ্যমের সামনেও তাঁরা তাঁদের স্লোগান দিতে থাকেন।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গের একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের পর্যবেক্ষণটা কিন্তু একটু আলাদা। তাদের অনেকের মতেই, সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সভাপতির পদে ক্ষনিকের অতিথি। এবং এরকম পরিস্থিতিতে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে সুকান্তের সম্পর্কে রসায়ন কিন্তু চোখে পড়ার মতো। মেদিনীপুরের রক্তদান সভাতে একসাথে উপস্থিত থাকা সেই সমীকরণের গভীরতার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আবার কারও কারও মতে সুকান্ত এবং দিলীপ দুজনেরই সংঘ পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠতা সর্বজনবিদিত। বঙ্গে রাজনীতিতে সংঘের প্রভাব বৃদ্ধির যে সম্ভাবনার কথা বারবার শোনা যাচ্ছে, সেটাও এই সমীকরণের অন্যতম অঙ্ক হতে পারে। ফলে রাজ্য বিজেপিতে ২০২১ সালের পরে শুভেন্দু অধিকারীদের যে একচ্ছত্র শাসন চলেছে, তা বোধহয় এবার বন্ধের মুখে।